পঞ্চায়েতে একা লড়বে মোর্চা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি |
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তরাই এবং ডুয়ার্সে একক ভাবে লড়বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। গত বিধানসভা ভোটে মোর্চা কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে সমর্থন করেছিল।
সোমবার দুপুরে দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে দলের তরাই এবং ডুয়ার্সের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভার পরে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জানিয়েছেন, তরাই-ডুয়ার্সকে জিটিএ-এর আওতায় আনার দাবিকে সামনে রেখেই তাঁরা পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকাকে জিটিএ-এর আওতায় আনার দাবিতেই প্রচার হবে। ভোটে জিতলে প্রার্থী তা নিয়ে সরব হবেন। ভবিষ্যতে তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অংশ নিয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতেও আন্দোলন করবেন জয়ী প্রার্থীরা।” |
দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে গুরুঙ্গের সভা। সোমবার। ছবি: রবিন রাই
|
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদম লামা ও প্রশান্ত থুলুং সহ দলের তরাই ডুয়ার্সের কিছু নেতা সম্প্রতি কলকাতায় গিয়ে দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। গুরুঙ্গ তাঁদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে এই দিন ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সুর চড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, “যে দল (তৃণমূল) গোর্খাল্যান্ডের বিরোধী, সেখানে যোগ দিয়ে ওই মোর্চা নেতা-কর্মীরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।” ঘটনাচক্রে, এদিনও মোর্চার তরাই-ডুয়ার্সের একদল নেতা-সমর্থক দলত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন। এদিনই গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে একযোগে লড়াই করার ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
গত বিধানসভা ভোটে মোর্চা তরাই-ডুয়ার্সের সব আসনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে সমর্থন করেছিল। আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টিও ওই জোটের বিরোধিতা করেনি। তবে এ বার মোর্চার সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তনের পরে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মোর্চা, বিকাশ পরিষদ ও গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সে দিকে নজর রাখতে হচ্ছে তৃণমূলকেও। তবে জিটিএ গঠনের আগে তরাই-ডুয়ার্সে মোর্চার প্রভাব যতটা ছিল, বর্তমানে ততটা নেই বলে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই অভিমত।
তবুও নেপালি ও আদিবাসী অধ্যুষিত তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় মোর্চা ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদ আলাদা প্রার্থী দিলে কিছুটা হলেও যে শাসক দল ও কংগ্রেসের ভোটে প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে ওই পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই সংশয় নেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেন, “এখনই এই ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলার নেই। পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি।”
মোর্চার তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে এখনই কোনও সমঝোতায় যেতে তাঁরা রাজি নন। তবে জিটিএ সংক্রান্ত নানা ব্যাপারে আলোচনার ডাক পেলে মোর্চার প্রতিনিধিরা তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই মোর্চাকে আলোচনার টেবিলে এনে তাদের সঙ্গে মতবিরোধ দূর করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল এবং কংগ্রেসও।
তবে গুরুঙ্গ এ দিনও বলেন, “ম্যালে গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলায় যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেছেন, তাতে পাহাড়ের মানুষ আহত। সে কথা ভুলতে পারিনি। তাই রাজ্যের শাসক দলের থেকে দূরে রয়েছি। আগামী দিনেও সতর্ক থাকব।” সেই সঙ্গে আগামী দিনে পাহাড়ের মানুষ যখনই চাইবেন, তখনই তিনি জিটিএ-এর চিফ পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলে ফের জানিয়েছেন তিনি। এদিন গুরুঙ্গ জানান, আগামী ৯ এপ্রিল শিলিগুড়িতে প্রাক্তন সেনা জওয়ানরা প্রতিবাদ দিবস পালন করবেন। ২০০৯ সালের ওই দিন দার্জিলিং মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ানদের মিছিলে গোলমাল হয়। মিছিল থেকে ঢিল ছোড়ার অভিযোগে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন প্রাক্তন সেনা জখম হন।
|