মাধ্যমিকে বসল সাত টোটো ছাত্রী |
ঠিক এক দশক আগে মেয়েদের মধ্যে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন সূচনা টোটো। এ বার মাধ্যমিকে মাদারিহাটের দেওকাটা নেপালি হাইস্কুলে টোটো সম্প্রদায়ের মোট ১৪ জন পরীক্ষা দিল, তার মধ্যে সাত জন ছাত্রী।
ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি গোষ্ঠী টোটো সম্প্রদায়ের মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার ঝোঁক বাড়ার কারণ কী? সূচনা বলেন, “বেশিরভাগ পরিবারের আশা, ডিগ্রি থাকলে তাঁদের ঘরের মেয়েদের ভাল চাকরির সুযোগ হতে পারে।” টোটোপাড়ার এক মাত্র মাধ্যমিক স্কুল ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষিকা মিশা ঘোষালও জানিয়েছেন, ছেলেদের তুলনায় টোটো মেয়েরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। এমনকী, ছেলেদের তুলনায় তারা স্কুলে বেশি নিয়মিত।
কিন্তু টোটো মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক রীতা টোটো এখনও চাকরি পাননি। তিনি স্নাতক হয়েছেন ২০১০ সালে। রীতার বাবা ব্যাঙ্ককর্মী সুগ্রীববাবু টোটো সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি (গাব্বু)। তিনি বলেন, “চাকরির জন্য রীতা কম চেষ্টা করছে না। বাম আমলে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু চাকরি পায়নি। এখন কী হয় দেখা যাক।” রীতা চাকরি পাননি ঠিকই, তবে মাধ্যমিক পাশ করে দুই টোটো মহিলা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর চাকরি পেয়েছেন। সূচনা নিজে পেয়েছেন প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি। তিনি বলেন, “আমরা যে চাকরি পেয়েছি সেটা সবাই দেখছেন। এটাই আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। তাতে কাজও হচ্ছে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “টোটো মেয়েদের সাহায্যের জন্য অনগ্রসর কল্যাণ দফতর যথাসাধ্য সাহায্য করছে।” |
সেই ছাত্রীরা। মাদারিহাটের দেওকাটা নেপালি হাইস্কুলে। ছবি: রাজকুমার মোদক |
ভুটানের পাদদেশে টোটোপাড়ায় বসবাসকারী ওই ছোট্ট জনজাতির মধ্যে ১৯৭৯ সালে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেন চিত্তরঞ্জন টোটো। চারিদিকে তখন হইচই পড়ে যায়। গ্রামে স্কুল তৈরি হয়। তাঁরা যাতে সেখানকার হস্টেলে থেকে নিখরচায় পড়াশোনা করতে পারেন, সে জন্য অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দফতর আশ্রম তৈরি করে। ১৯৯৫ সালে টোটোপাড়ার এক মাত্র স্কুলটি মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। বাড়তে থাকে মাধ্যমিক পাসের সংখ্যা। ২০০৩ সালে টোটো মেয়েদের মধ্যে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করে তাক লাগিয়ে দেন সূচনা। তার পর থেকে এখনও অবধি টোটো সম্প্রদায়ের মোট ১৩ ছাত্রী মাধ্যমিক পাশ করেছে। এলাকার ছয় জন টোটো স্নাতক। তাঁদের তিন জনও ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন।
১৯০১ সালে টোটোদের সংখ্যা ছিল ১৭১ জন। ২০০১ সালে যেখানে টোটোদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭৫ জনে। এখন তা আরও বেড়ে মোট ১৪০২ জন হয়েছে। পুরুষ ৭৬৫ জন, মহিলা ৬৩৭ জন। প্রধান জীবিকা মারুয়া, ভুট্টা চাষ ও সুপুরি বাগান করা। বেশিরভাগই খুবই দরিদ্র। সেই সঙ্গে শিক্ষিত টোটোরাও চাকরি না পাওয়ায় হতাশা বাড়ছে। মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে ভুটানে ও ভিনরাজ্যে দিনমজুরি করতে চলে যাচ্ছে কেউ কেউ। অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের প্রকল্প আধিকারিক এনায়ুর রহমান জানান, অভিভাবকদের তরফে আবেদন পেলে তাঁরা স্কুলছুট টোটো পড়ুয়াদের অর্থ সাহায্য করে ফের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা করবেন।
|