জঙ্গলমহলের পতিত জমি কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই আইআইটিকে দিয়ে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রথম এই প্রকল্প গড়বেতা ২ ব্লকের দুটি গ্রামে রূপায়িত করার কথা। সেখানে সাফল্য পেলে ক্রমে জঙ্গলমহলের সর্বত্র এই প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে। গড়বেতা ২ ব্লকে শীঘ্রই প্রকল্প শুরু করা হবে বলেও জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষ জানান। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই আইআইটি-র প্রকল্প রিপোর্ট পেয়ে গিয়েছি। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর ব্যয়ভার বহন করবে। আমরা শীঘ্রই কাজ শুরু করব।”
পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জঙ্গলমহলের তিন জেলাতেই প্রচুর পতিত জমি রয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু মানুষ সেখানে সাবাই ঘাস ফলান। কোথাও কোথাও বর্ষায় সামান্য ধান চাষও করা হয়। কিন্তু ভারী বৃষ্টি না হলে মাঠেই শুকিয়ে যায় মাঠের ফসল। ওই সব এলাকায় কোনও শিল্প নেই। ভরসা কেবল জঙ্গলের শালপাতা, কাঠ, সাবাই ঘাস থেকে তৈরি দড়ি। পেটের টানে অনেকেই জেলার অন্যত্র, এমনকী অন্য জেলাতেও মজুরের কাজ করতে যায়। এলাকার অর্থনৈতিক মানোন্নয়নেই তাই পতিত জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে গড়বেতা ২ ব্লকের হাতিয়া ও আদালিয়া এই দু’টি গ্রামে গিয়ে সমীক্ষা চালায় আইআইটি। দুটি গ্রামে প্রায় ৪৫ একর পতিত জমি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই দুই গ্রামে ৪৯৫টি পরিবারের ২৭৫০ জন মানুষের বাস। এর দুই তৃতীয়াংশ ভূমিহীন বা প্রান্তিক চাষি। প্রায় সবাই বিপিএল তালিকাভুক্ত।
কী করা যেতে পারে এখানে? আইআইটি-র মতে, মোট পতিত জমির ৬৭.৬৩ শতাংশে বিভিন্ন ধরনের চাষ, ১০ শতাংশ জমিতে সেচের পরিকাঠামো তৈরি, ৭.৬ শতাংশ জমিতে অফিস, প্রসেসিং ও প্রোডাকশন শেড, সেচখাল, ৬.৭৬ শতাংশ জমিতে প্রাণিপালন, গোখাদ্য চাষ প্রভৃতি করা সম্ভব। কোন জমির স্বাস্থ্য কেমন, সেখানে কোন ধরনের অনুখাদ্য ব্যবহার করলে মাটির স্বাস্থ্য ফিরবে সব কিছুই দেখেছে আইআইটি। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৮৫ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিন বছর পর এই প্রকল্প থেকে আনুমানিক ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকার আউটপুটও মিলবে। প্রাথমিক ভাবে ব্যয় ও আয়ের আনুপাতিক হার ০.৬২ হলে ৫ বছরের শেষে তা ব্যয়ের সমান আয় হবে। তারপর থেকে শুরু হবে লাভ। প্রথম তিন বছরেই ১৪৫ জনের কাজ মিলবে, ২৩৫ জন চাষ ও প্রাণিপালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেদের উন্নতি ঘটাতে পারবেন, ১১ হাজার শ্রমদিবস তৈরি হবে, যেখানে কাজ পাবেন এলাকারই মানুষ, প্রকল্প চললে ১৪৫টি সরাসরি ও প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মিলিয়ে ৩৩২টি পরিবার উপকৃত হবেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, চাষ ছাড়াও সাবাই ঘাস দড়ি তৈরি, মুরগি পালন, দুগ্ধ উৎপাদন, বায়ো গ্যাস তৈরি, মাশরুম তৈরি, মধু উৎপাদন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও তার উৎপাদও করা হবে। সাফল্য মিললে এটাকে মডেল করে পশ্চিম মেদিনীপুরে জঙ্গলমহলের ২০ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নয়ন সম্ভব বলেও আইআইটি জানিয়েছে। এর ফলে জঙ্গলমহলের প্রায় ৭০ হাজার পরিবার উপকৃত হবেন। এ ভাবেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াতেও তা করা সম্ভব বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
|