দুর্নীতি-অস্ত্রে তৃণমূলকে পঞ্চায়েতে বিঁধবে কংগ্রেস
ঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং উন্নয়নে টাকা খরচ করতে না-পারার অভিযোগকে হাতিয়ার করতে চায় কংগ্রেস। বিধান ভবনে সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং জেলা সভাপতিদের বৈঠকে এই কৌশলই গৃহীত হয়েছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের আরও সিদ্ধান্ত, পঞ্চায়েত ভোটে তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসরদের (ওবিসি) প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়া সরল করতে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হবে। ভোটে শাসক দল যে ‘টাকার খেলা’ খেলবে, তা-ও জানিয়ে রাখা হবে দিল্লির নেতৃত্বকে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে দলীয় নেতৃত্বের একাংশ অভিযোগ করেন, সিপিএমের তুলনায় তৃণমূলের হাতে থাকা পঞ্চায়েতে দুর্নীতি বেশি। অনেক জায়গায় কেন্দ্রের দেওয়া উন্নয়নের টাকা খরচ করতেও পারেনি তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েত। আলোচনায় ঠিক হয়, ওই দু’টি বিষয়কেই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্চায়েতের উন্নয়নে কোথায় কত টাকা দিয়েছে, তার খতিয়ান জোগাড় করে টাকা খরচে তৃণমূলের ব্যর্থতা তুলে ধরার চেষ্টা হবে।
বিরোধী শিবিরের তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি-দের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে রাজ্য সরকার কৌশল করেছে, এই অভিযোগ উঠে এসেছে কংগ্রেসের অন্দরে। দলের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত এলাকার তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি-দের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিত, প্রযুক্তিতে সড়গড় নন এমন মানুষই বেশি। অথচ তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য তাঁদের প্রথমে অফলাইন, তার পরে অনলাইন আবেদন করতে বলা হয়েছে এবং গোটা প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোথাও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। অর্থাৎ যে সব তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি মানুষ তৃণমূলের প্রার্থী হবেন, তাঁদের শংসাপত্র জোগাড়ের ব্যবস্থা চুপি চুপি করে দেওয়া হবে বলে কংগ্রেসের আশঙ্কা। ওই প্রক্রিয়া সরল করার দাবি জানাতে আজ, মঙ্গলবার প্রাক্তন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধিদল অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করবে। পরে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হবে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের আশঙ্কা, পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া ঠেকাতে তৃণমূল যথেচ্ছ সন্ত্রাস করবে এবং টাকার খেলা খেলবে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সাংগঠনিক অবস্থার জেলাওয়াড়ি যে রিপোর্ট এ দিনের বৈঠকে পেশ হয়েছে, তা থেকে দলের অনেকে মনে করছেন, দক্ষিণবঙ্গে সব জায়গায় একই রকম ভাবে লড়াই করার পরিস্থিতি না-ও থাকতে পারে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের সাংগঠনিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে রাহুল গাঁধীর নির্দেশে এআইসিসি-র এক সাধারণ সম্পাদকের বৃহস্পতিবার প্রদেশ দফতরে আসার কথা।
তবে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি জানান, তৃণমূল সিপিএমের কায়দাতেই সন্ত্রাস করলেও তাঁর জেলা উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেস পঞ্চায়েতে সব আসনেই লড়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বস্তুত, উত্তরবঙ্গে তুলনায় সন্ত্রাস মোকাবিলা করে তুলনায় ভাল লড়াই তারা করতে পারবে বলে কংগ্রেসের আশা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য সওয়ালও বজায় রাখা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল, মনে হচ্ছে, শাসক দলই হবে, বিধানসভা উপনির্বাচনে টাকার খেলা খেলেছে। নলহাটিতে তো খেলেইছে। পঞ্চায়েতেও এটা একটা চিন্তার বিষয় হবে। নির্বাচন কমিশন তদন্ত করুক।” দেবব্রত বসু, অমিতাভ চক্রবর্তী, মায়া ঘোষ, কৃষ্ণা দেবনাথ-সহ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রায় সব নেতাই এ দিনের বৈঠকে শাসক দলের সন্ত্রাস সম্পর্কে আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, এ দিনই কলকাতা প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস-বাম সমঝোতার সিদ্ধান্ত স্থানীয় নেতৃত্বের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। মান্নানের বক্তব্য, “কংগ্রেস কখনও কারও সঙ্গে গোপন আঁতাঁত করে না। তবে পঞ্চায়েতে নিচু তলায় কে কার সঙ্গে সমঝোতা করবে, সেটা অনেক সময়ই স্থানীয় সমীকরণের উপরে নির্ভর করে।” পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের আশঙ্কা করে ওই অনুষ্ঠানেই প্রবীণ সিপিএম নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা মন্তব্য করেন, “গুন্ডা-গুন্ডিরাই এখন দেশ চালাচ্ছে!” কুড়ি মাস আগে যে মানুষ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছিল, তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তারাই আবার বামেদের বরণ করে নেবে এমনটা তিনি মনে করেন না বলেও প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন রেজ্জাক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.