কোনও পরীক্ষার্থীকে আদৌ কেন আদালতে আসতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গেই এক ছাত্রের মামলায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মন্তব্য করেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যে-সব অফিসারের গাফিলতির জন্য পরীক্ষার্থীদের দুর্দশা হয়, তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।
মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষায় নম্বর-বিভ্রাটের জেরে ইদানীং বহু পরীক্ষার্থীই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। অনেকেই উত্তরপত্র দেখতে চান এবং পুনর্মূল্যায়নের আর্জি জানান। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে খাতা দেখানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি চলে বলে অভিযোগ। ২০১২ সালের এমনই এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র এক বছরের মধ্যেও দেখাতে পারেনি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। অথচ তথ্য জানার অধিকার আইন অনুযায়ী যে-কোনও পরীক্ষার্থী তাঁর উত্তরপত্র দেখতেই পারেন। সুদেব দাস নামে ওই পরীক্ষার্থী তিন-তিন বার আবেদন করে। কিন্তু পর্ষদ তাকে উত্তরপত্রের প্রতিলিপি দেয়নি।
আবেদন-নিবেদনে কাজ না-হওয়ায় ওই পরীক্ষার্থীর বাবা সুধাকৃষ্ণ দাস হাইকোর্টে মামলা করেন। কেন পরীক্ষার্থীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হল, তা নিয়ে সোমবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তার পরেই তিনি নির্দেশ দেন, ওই পরীক্ষার্থীর মামলা করার জন্য যে-খরচ হয়েছে, তা পর্ষদকেই মেটাতে হবে। পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ সেই টাকা কেটে নেবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের বেতন থেকে।
পর্ষদের আইনজীবী বলেন, এ দিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অফিসারেরা ওই পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্র দেখাতে পারেননি। বিচারপতি পর্ষদের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, পর্ষদের এত বড় পরীক্ষা নেওয়ার পরিকাঠামো রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই পরীক্ষার্থী প্রায় এক বছর অপেক্ষা করেও উত্তরপত্রের প্রতিলিপি পেল না কেন? তার পরেই বিচারপতি বলেন, এই সব অযোগ্য অফিসারদের পদে থাকাই উচিত নয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানার কুলহান্ডা গ্রামের বৈষ্ণবচক মহেশচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র সুদেবকে কী ভাবে হয়রান হতে হয়েছে, তা জানান তার আইনজীবী সৌমব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ২০১২ সালের মাধ্যমিকে তাঁর মক্কেল বিভিন্ন বিষয়ে ৯০ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে। কিন্তু ভূগোলে পেয়েছে ৭৭, ইতিহাসে ৮০, বাংলায় ৭৫ এবং ইংরেজিতে ৭৬। ওই চারটি বিষয়ের উত্তরপত্র দেখতে চেয়ে সে স্কুলের মাধ্যমে পর্ষদের কাছে আবেদন করে। কিন্তু পর্ষদ উত্তরপত্র দেখায়নি। সে তখন অ্যাপিলেট অথরিটির কাছে আবেদন করে। তারা উত্তরপত্র দেখাতে বলে। তার পরেও পর্ষদ খাতা দেখানোর ব্যবস্থা করেনি। সুদেব ফের আপিলেট অথরিটির কাছে আবেদন করে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
পর্ষদের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। নির্দেশ দেন, ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে চারটি উত্তরপত্রের প্রতিলিপি দিতে হবে । |