থমকে যাওয়া আলোচনা শুরু হল। বিরোধ মেটার ইঙ্গিত কিন্তু মিলল না!
পি চিদম্বরমের আমল থেকেই আলোচনার মাধ্যমে রাজ্যগুলির সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার কথা বলে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু কাজ এগোয়নি মোটেই। সুশীলকুমার শিন্দের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এখন এগোতে চাইছে কিছুটা অন্য ভাবে। প্রস্তাবিত জাতীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা কেন্দ্র (এনসিটিসি) গঠনের বাধা দূর করতে রাজ্যগুলির আপত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাবে কিছুটা বদলের কথাও ভাবছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় কেন্দ্রের এই নমনীয় অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন শিন্দে। মমতা তাঁকে জানিয়েছেন, এনসিটিসি নিয়ে কেন্দ্র নতুন করে প্রস্তাব দিলে রাজ্য তা ভেবে দেখবে।
সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ফ্রেজারগঞ্জে এসে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলেই এগোতে চাইছে কেন্দ্র। যদিও এনসিটিসি-কে রাজ্যে গিয়ে অভিযান চালানার অধিকার দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এখনও মত বদলের ইঙ্গিত দেয়নি কেন্দ্র। ফলে অ-কংগ্রসি মুখ্যমন্ত্রীরা ও বিজেপি-র নেতারা এ দিনও আপত্তি জানিয়েছেন এনসিটিসি গঠনের বিষয়ে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক কর্তা এই প্রসঙ্গে জানান, এনসিটিসি গঠনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বক্তব্য ছিল, এটি গড়া হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) অধীনে, তাদের একটি শাখা হিসেবে। এবং সংসদের কাছেও জবাবদিহির দায়বদ্ধতা নেই ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির। মমতার সঙ্গে একান্ত আলোচনায় শিন্দে জানিয়েছেন, কেন্দ্র নতুন আইন করে এনসিটিসি-কে আইবি-র আওতার বাইরে রাখা নিয়ে প্রস্তাব আনার কথাও ভাবছে। এর
জবাবেই এনসিটিসি-বিরোধিতার কট্টর
অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে এসে মমতা জানান, কেন্দ্র নতুন প্রস্তাব দিলে রাজ্যও তা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। |
কপিল মুনির আশ্রমে শিন্দে। —নিজস্ব চিত্র |
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের এক্তিয়ার নিয়ে তীব্র বিতর্কের চাপে প্রায় ঠান্ডাঘরে যেতে বসেছিল এনসিটিসি গঠনের প্রস্তাব। শিন্দের দৌত্যে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ মেটানোর চেষ্টা নতুন করে শুরু হল। ফ্রেজারগঞ্জে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীও চান সন্ত্রাস বন্ধ হোক। এনসিটিসি-র কয়েকটি বিষয় নিয়ে এখানকার মুখ্যমন্ত্রী-সহ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি তুলেছেন। প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা করেই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”
এর আগে এনসিটিসি নিয়ে যখন বিতর্ক হয়েছিল, তখনও কোনও অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বলেননি, তাঁরা সন্ত্রাস প্রতিরোধ চান না। কিন্তু এনসিটিসি-র মোড়কে যে ভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে রাজ্যে-রাজ্যে গিয়ে তল্লাশি, আটক বা গ্রেফতারের ঢালাও অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, তাতেই বাদ সাধছেন এই মুখ্যমন্ত্রীরা। কারণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্যের দায়িত্ব। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের ওই অধিকার কেন্দ্র কেড়ে নিতে পারে না। হায়দবারবাদে বিস্ফোরণের পর শিন্দে এনসিটিসি নিয়ে নতুন করে উদ্যোগী হলেও অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের এই আপত্তিটি দূর করার বিষয়ে কেন্দ্র কী ভাবছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে দূর হয়নি বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তি।
সম্প্রতি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এনসিটিসি-র প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বিতর্কিত ধারা প্রত্যাহার করতে বলেছেন। সোমবার পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলও এনসিটিসি-র বিরোধিতা করে বলেছেন, “কেন্দ্র নিত্যদিন রাজ্যের অধিকারে থাবা বসাচ্ছে। এনসিটিসি-র এই প্রস্তাব কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
আগামিকাল সংসদের অধিবেশন ফের শুরু হওয়ার আগে বাদল এ দিন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। বিজেপি-র অরুণ জেটলি এ দিন বলেছেন, “সন্ত্রাস দমনে সব রাজ্যই একজোট। এনসিটিসি গঠন নিয়েও কারও কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কেন রাজ্যের উপরে আস্থা রাখতে পারছে না? কেন সন্ত্রাস দমনের নামে রাজ্য পুলিশের অধিকারগুলি তারা কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দিতে তৎপর?”
কংগ্রেসের মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরির যুক্তি, সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে যদি কেন্দ্রকেই দায়ী করা হয়, তবে সন্ত্রাস প্রতিরোধের অধিকারও কেন্দ্রের হাতে থাকা উচিত। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রশ্ন তোলাটা অমূলক। কোনও রাজ্যে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে তার জন্য কি রাজ্য দায়ী হবে? ৯/১১-র পর আমেরিকাতেও এ ধরনের ব্যবস্থা হয়েছে, যার পরে সেখানে আর তেমন ঘটনা ঘটেনি। জেটলির অবশ্য বক্তব্য, আমেরিকায় এনসিটিসির মতো সংস্থা শুধু কৌশলগত পরিকল্পনা করে অপারেশন করে না। ‘যৌথ সন্ত্রাস পর্যালোচনা কেন্দ্র’ সেখানে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ভারতে এনসিটিসি গড়ার ক্ষেত্রে রাজ্যে গিয়ে অভিযান চালানোরও অধিকার তুলে দেওয়ার কথা হচ্ছে। যে কোনও রাজ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজও কেন্দ্রীয় সরকার করে। কিন্তু এ বারে গোটা রাজ্যে তা করতে গেলে রাজনৈতিক ভাবে তা অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়। |