শুভাশিস ঘটক • ফ্রেজারগঞ্জ |
অনুপ্রবেশ এবং নাশকতার সম্ভাবনা ঠেকাতে সুন্দরবন-সহ এ রাজ্যের উপকূল এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজছে রাজ্য সরকার। এ জন্য পুলিশের একটি পৃথক ব্যাটেলিয়ন গড়া হচ্ছে। সুন্দরবনকে পাহারা দিতে একটি নতুন ঘাঁটি তৈরি করার জন্য উপকূলরক্ষী বাহিনীকে ফ্রেজারগঞ্জে জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, উপকূলবর্তী এলাকায় বিএসএফের ঘাঁটি করার জন্য জমি দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপ ঘুরে দেখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে। বাংলাদেশ লাগোয়া উপকূলবর্তী এলাকায় যে নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন তিনি। এ দিন জম্মুদ্বীপে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন শিন্দে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বিএসএফের তৎপরতা বাড়ানোর আবেদন জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। শিন্দে ওই প্রয়োজনীয়তার কথা লিখিত আকারে তাঁকে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
পরে ফ্রেজারগঞ্জে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে শিন্দে সাংবাদিকদের বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা সদর্থক হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে ওঁর বেশ কিছু প্রস্তাব আমরা বিবেচনা করছি।” মুখ্যমন্ত্রীকে এক বার ‘দিদি’ সম্বোধন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশ লাগোয়া উপকূলবর্তী এলাকায় নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে। তা মুখ্যমন্ত্রীও বুঝতে পারছেন। কেন্দ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেবে না। সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীও একমত হয়েছেন।” উপকূলবর্তী এলাকায় একটি বিএসএফ ক্যাম্প করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে শিন্দে বলেন, “এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমি চাওয়া হয়েছে। উনি জমির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।” |
ফ্রেজারগঞ্জে সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার। ছবি: রাজীব বসু |
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে রাজ্য সফরে এসে মহাকরণে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বিএসএফ ক্যাম্পের জন্য জমির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ। হায়দরাবাদ বিস্ফোরণের পরে রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে মমতার সরকার খুবই চিন্তিত। সেই কারণেই বাংলাদেশ সীমান্তকে নিশ্ছিদ্র করতে ওই ক্যাম্প তৈরির ব্যাপারে তৎপর হচ্ছে তারা। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে নিজস্ব নিরাপত্তা পরিকাঠামোও।
মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্যের
উপকূলবর্তী তিনটি জেলায় (উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর) ইতিমধ্যে আটটি থানা কাজ শুরু করেছে। আরও ছ’টি থানা গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই থানাগুলিতে নিয়োগ ও যাবতীয় সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য করবে কেন্দ্র। তা ছাড়া, ফ্রেজারগঞ্জে উপকূলরক্ষী বাহিনীর নতুন ঘাঁটি তৈরি হলে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিয়মিত ভাবে তল্লাশি ও নজরদারি চালানো সম্ভব হবে। ভারতীয় নৌবাহিনীও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকার জন্য একটি পৃথক নজরদারি দল তৈরি করছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছিলেন। সোমবার তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরে দেখেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকা। রবিবার রাতেই ফ্রেজারগঞ্জে চলে আসেন মমতা। রাত কাটান জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাংলোয়। সোমবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে পৌঁছন। এর পরে দু’জনে একটি হোভারক্র্যাফটে সপ্তমুখী, হেনরি আইল্যান্ড-সহ উপকূলবর্তী কয়েকটি দ্বীপের আশপাশ ঘুরে দেখেন। সব শেষে আসেন নির্জন জম্বুদ্বীপে। সেখানে চা-বিরতিতে দু’জনের মধ্যে বৈঠক হয়। জম্বুদ্বীপ থেকে হোভারক্র্যাফটে ফ্রেজারগঞ্জে ফিরে মধ্যাহ্নভোজন।
সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা বললেও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শিন্দে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বিষয়টি প্রায় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমি কোনও রিপোর্ট এখনও পাইনি। পেলে জানাব।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেজারগঞ্জ থেকে তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়কে নিয়ে হেলিকপ্টারে সাগরদ্বীপে যান। মাথায় গঙ্গাজল ছুঁইয়ে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দিয়ে ৩টে নাগাদ তিনি ফিরে যান। মুখ্যমন্ত্রী ফ্রেজারগঞ্জের অমরাবতী কলোনিতে জবরদখল করে থাকা মৎস্যজীবীদের ‘নিজ ভূমি, নিজ গৃহ’ প্রকল্পে থাকার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। জেলাশাসককে নির্দেশও দেন। এতে খুশি মৎস্যজীবীরা। |