উড়ালপুল উদ্বোধন নিয়ে রেল-রাজ্য সরকারের মধ্যে একপ্রস্ত ঝামেলা আগেই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ডানকুনিতে ওই উদ্বোধনের পরে এলাকাবাসী দেখছেন, অন্য ফ্যাসাদ। উড়ালপুলের উপর থেকে নীচে নামার সিঁড়িই তৈরি হয়নি। এ দিকে, ওই উড়ালপুলের নীচের রাস্তায় রেল রাতারাতি স্লিপার পুঁতে দিয়েছে। ফলে, সাইকেল-গাড়ি নিয়ে লাইন পেরোতে ঝক্কি বেড়েছে আমজনতার। বিপাকে পড়েছে উড়ালপুলের দু’দিকের অন্তত পাঁচটি স্কুলের পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকেরা।
সমস্যার কথা কানে গিয়েছে রেল-রাজ্যেরও। সাধারণ মানুষের অসুবিধার বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে সোমবার দুপুরেই এলাকায় গিয়েছিলেন রেলের এক পদস্থ কর্তা। প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার রেল এবং পূর্ত দফতরের কর্তারা যৌথ ভাবে ডানকুনিতে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। |
ডানকুনিতে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায় রেল লাইনের উপরে উড়ালপুলের দাবি কয়েক দশক ধরেই রয়েছে। ২০০৫-এ শিলান্যাস হলেও নানা জটিলতায় কয়েক বছর পিছিয়ে যায় রেল ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগের ওই প্রকল্পের কাজ। কাজে গতি আসে ২০১১ সালে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে উড়ালপুল তৈরি হয়। কিন্তু প্রকল্পের কৃতিত্ব কে নেবে, তা নিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে রিমোটে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক ভাবে অন্ধকারে রাখা হলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে রাজ্যের তরফে রেলের দুই আধিকারিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
ইতিমধ্যে উড়ালপুলের নীচের রাস্তায় লেভেল ক্রসিংয়ে স্লিপার পুঁতে দেয় রেল। এত দিন যাঁরা সাইকেল-রিকশা-গাড়ি নিয়ে লাইন টপকে যাতায়াত করতেন, তাঁরা আটকে যান। সমস্যা আরও বাড়ে উড়ালপুল থেকে নীচে নামার কোনও সিঁড়ি না থাকায়। এলাকার একাধিক পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের কথায়, “রেল স্লিপার পুঁতে রাস্তা আটকে দেওয়ায়, রিকশা বা সাইকেল-ভ্যানে এপার-ওপারে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। উড়ালপুলে সিঁড়ি থাকলে না হয়, একটা দুরত্ব পর্যন্ত এসে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলে চলত। সিঁড়ি না থাকায় সেটাও করা যাচ্ছে না।” তাঁদের অনেকের ধারণা, “রেল-রাজ্য লড়াইয়ে বলি হচ্ছি, আমাদের মতো উলুখাগড়ারা।” পরিস্থিতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কেন লেভেল ক্রসিংয়ে রাস্তা আটকাল রেল? পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “রাজ্য সরকাররের সঙ্গে লিখিত চুক্তি অনুয়ায়ীই ওই লেভেল ক্রসিংটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” কেন উড়ালপুলের উপর থেকে সিঁড়ি গড়া হল না? পূর্ত দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “ওই উড়ালপুলের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে মোট চারটি সিঁড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। সিঁড়ি তৈরি করা হবে রেলের জমিতে। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, সেই জায়গায় রেলের কেব্ল রয়েছে। কাজের সময় যদি কোনও ভাবে কেব্ল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে কর্ড শাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ লাইনে সিগন্যাল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।” এই যুক্তিতেই সিঁড়ি তৈরির কাজ করা হয়নি বলে দাবি পূর্ত দফতরের।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা কানে গিয়েছে রেল এবং রাজ্যের। উড়ালপুল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের কর্তা গৌতম ঘোষ বলেন, “সিদ্ধান্ত হয়েছে, রেল এবং পূর্ত দফতরের অফিসারেরা যৌথ ভাবে খতিয়ে দেখে কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ করবেন।” পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকও বলেন, “এলাকার মানুষ এখন অসুবিধার কথা বলছেন। বিষয়টি ভাবনা-চিন্তা করে দেখা হচ্ছে।” |