সম্পাদকীয় ২...
সমস্যা মিটিবে কি
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নূতন ব্যাঙ্কিং নীতি অদূর ভবিষ্যতে ভারতের বাজারে বিপুল প্রভাব ফেলিবে, সেই সম্ভাবনা যৎসামান্য। আগামী দুই বৎসর নূতন ব্যাঙ্কগুলি বাজারে ব্যবসা করিতে পারিবে না। যথেষ্ট প্রভাবশালী হইয়া উঠিতে এক দশকাধিক কাল সময় লাগিতে পারে। কাজেই, আজ পাঁচটি সংস্থা নূতন ব্যাঙ্ক খুলিবার ছাড়পত্র পাইলে কালই বাজারের কাঠামো আমূল বদলাইয়া যাইবে, এমন আশার (বা আশঙ্কার) কারণ নাই। ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সংস্কারকল্পে নূতন লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে এই প্রেক্ষিতে দেখাই বিধেয়। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রধান সমস্যার নাম নন পারফর্মিং অ্যাসেট— অনাদায়ী ঋণ। ঋণগ্রহীতা যদি টানা ৯০ দিন সুদ না দেন অথবা মূলধনের অংশ ফেরত না দেন তবে তাহাকে ‘অনাদায়ী ঋণ’ ঘোষণা করা হয়। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যে ঋণ দেয়, তাহার প্রতি কুড়ি টাকায় এক টাকা অনাদায়ী ঋণে পরিণত হয়। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে মোট ঋণে অনাদায়ী ঋণের অনুপাত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দশ ভাগের এক ভাগ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যদি অতি দ্রুত অনাদায়ী ঋণের বোঝা না কমাইতে পারে, তবে বিপদ বাড়িবে। তাহার জন্য যথার্থ ঝুঁকি বিচারের পদ্ধতি গড়িয়া তোলা প্রয়োজন ছিল। আরও পাঁচটি নূতন বেসরকারি ব্যাঙ্কের ছাড়পত্র দেওয়ায় সেই সমস্যার তো সমাধান হইল না।
তবে, সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত না জানাইবার কোনও কারণ নাই। প্রতিযোগিতা সর্বদাই কাম্য। ইন্দিরা গাঁধী ১৯৬৯ সালে সর্বনাশের যে রাস্তাটি খুলিয়া দিয়াছিলেন, ভারত বহু কষ্টে সেই রাস্তার বিপরীতে হাঁটিবার শক্তি সঞ্চয় করিয়াছে। বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্কের অভিজ্ঞতা ভারতে যথেষ্ট ইতিবাচক। আরও পাঁচটি নূতন ব্যাঙ্ক চালু হইলে প্রতিযোগিতার পরিমাণ বাড়িবে। তাহাতে শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের লাভ। অনেকে সন্দিহান, বিভিন্ন বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ব্যাঙ্কের লাইসেন্স তুলিয়া দিলে ফল বিষম হইতে পারে। আশঙ্কাটি অমূলক নহে, কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতে কিঞ্চিৎ অতিরঞ্জিত। ভারতীয় অর্থনীতি গত দুই দশকে প্রকৃতার্থেই সাবালক হইয়াছে। দ্বিতীয়ত, কোনও দুর্নীতির অবকাশ যাহাতে না থাকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সে বিষয়ে সতর্ক। আর তৃতীয়ত, ভারতের আর্থিক বাজার বর্তমানে মজবুত ও গভীর। এই বাজার অনিয়ম সহ্য করিবে না। ফলে, আশঙ্কার বিশেষ কারণ নাই।
প্রশ্ন হইল, এই প্রতিযোগিতার বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি টিকিতে পারিবে কি? তাহারা ক্ষতির বহর বাড়াইয়া চলিবে আর রাজকোষ হইতে করদাতার অর্থে সরকার তাহাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করিবে— এই নিয়ম দীর্ঘ দিন চলিতে পারে না। গত দুই দশকের অভিজ্ঞতা বলিতেছে, যে ক্ষেত্রেই বেসরকারি সংস্থার জন্য দরজা খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি কোণঠাসা হইয়া পড়িয়াছে। ব্যাঙ্কিংও ব্যতিক্রম নহে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকেও বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়া হউক, এমন দাবি উঠিলে আশ্চর্য হইবার কারণ থাকিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.