অবশেষে শহরে ‘স্বজন’ পেলেন ফিলিপিনো তরুণী
কঘেয়ে হাসপাতাল-জীবনে যেন খানিকটা দমকা বাতাস!
সতেরো দিন পরে মাতৃভাষায় কথা বললেন ক্যামকো জিনা সেপুলভেদা। তাঁর সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলতে এগিয়ে এলেন তিন জন। হাসপাতালে তাঁর প্রথম ‘ভিজিটর’। না হয় পরিচয় নেই। তাতে কী? নিজের দেশের লোক বলে কথা! একটানা অনেকক্ষণ মাতৃভাষায় কথা বললেন, হাসলেন। ভিজিটর-রা তাঁর কন্যার জন্য জামাকাপড় এনেছিলেন। আকাশ-কন্যার এই প্রথম উপহার!
কলকাতার হাসপাতালে একঘেয়ে সময় কাটাতে কাটাতে অবসাদ ঘিরে ধরছিল জিনাকে। তিনি সেই ফিলিপিনো তরুণী, যিনি দুবাই থেকে ম্যানিলা যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে কন্যাসন্তান প্রসব করে কলকাতায় নামতে বাধ্য হন। অচেনা শহরের হাসপাতালে প্রতিটি মূহূর্ত তিনি অপেক্ষা করেছেন দেশে ফেরার আশায়। এ ভাবেই কেটেছে বেশ কিছু দিন। তিন বার তাঁর থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছে ফিলিপিন্স দূতাবাস।
ক্যামকো জিনা সেপুলভেদা
মাঝে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, চাইলে এক দিন শহরে ঘুরতে পারেন জিনা। একরত্তি মেয়েকে হাসপাতালে রেখে বেরোতে চাননি তিনি। শুধু হাসপাতালের কর্মীদের প্রশ্ন করেছেন, “কবে তোমরা আমাকে ছাড়বে?”
এই অবস্থায় জিনার মন ভালো করতে দূতাবাসের এক অফিসার জানান, চাকরি বা বিবাহ সূত্রে অনেক ফিলিপিনো তরুণ-তরুণী কলকাতায় থাকেন। তাঁদেরই কয়েক জনকে অনুরোধ করা হয় জিনার সঙ্গে দেখা করতে। বিকেল হলেই জিনার ওয়ার্ডে ভর্তি অন্য মহিলাদের দেখতে আসেন তাঁদের বাড়ির লোক। সেই ওয়ার্ডেরই এক কোণায় মন খারাপ করে বসে থাকেন নিঃসঙ্গ জিনা।
অবশেষে রবিবার বিকেলে দুই তরুণী ও এক তরুণ আসেন জিনাকে দেখতে। এলেনা কাসাদ নামে তরুণীই বেশিক্ষণ কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। জিনা জানান, ফিলিপিন্সের সেবু দ্বীপে তাঁর বাড়ি। জানালেন, কী ভাবে বয়ফ্রেন্ডের আলাপ, ঘনিষ্ঠতা। তখন তিনি দুবাইয়ে। তার পরে বিমানের ভিতরে মেয়ের জন্ম। জানা গিয়েছে, হাসপাতালের খরচ দূতাবাসই দেবে। দিল্লি থেকে আকাশ-কন্যার ‘ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট’ এসেছে। তাই-সংস্থার উড়ানে ব্যাঙ্কক ঘুরে ম্যানিলা পৌঁছনোর কথা জিনার। কিন্তু আকাশ-কন্যা বিমানে ওড়ার মতো অবস্থায় রয়েছে কি না তা জানাবে বিমানসংস্থার চিকিৎসকেরা। অনুমতি আসবে ব্যাঙ্কক থেকে। তাই দেরি হচ্ছে দেশে ফিরতে। দূতাবাস সূত্রের খবর, যবে সকন্যা জিনা যেতে পারবেন, তার আগেই খবর পাঠানো হবে সেবু-তে। সেখান থেকে এক দিন আগে ম্যানিলায় আসবেন কোনও এক আত্মীয়। ম্যানিলা থেকে তাঁর সঙ্গে সেবু-র বিমানে উঠবেন জিনা।
তবে, হাসপাতালের নার্স-বন্ধুদের জিনা জানান, এই শহরে কাটানো এই ক’টা দিন স্মৃতির কোটরে রেখে দেবেন তিনি। ভিআইপি-রোড ও রাজারহাটের মোড়ে এই হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হন তাঁরা সকলেই প্রায় বাঙালি। তাঁর ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্য মহিলাদের কিছু দিন ধরে মন দিয়ে লক্ষ করেছেন জিনা। এক গ্লাস জল চাইতে হলে তাঁকে নানা কসরৎ করে বোঝাতে হয়। হাতের ইশারায় বুঝিয়ে বলতে হয় তোয়ালের কথা। অথচ পাশের শয্যায় শুয়ে থাকা রোগী কী যেন একটা বললে তাঁর সামনে চটজলদি হাজির হয় এক গ্লাস জল। গত দু’দিনে হাসপাতালের নার্সদের চমকে দিয়ে জিনা মাঝেমধ্যেই এখন ডেকে উঠছেন, “জল দাও। তোয়ালে দাও।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.