গার্ডেনরিচে দুই দল দুষ্কৃতীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরী। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বন্দর এলাকায় ফের আক্রান্ত পুলিশ। এ বার দু’দল শ্রমিকের মারামারির ঘটনায়।
পুলিশ জানায়, সোমবার বেলা এগারোটা নাগাদ কলকাতা বন্দরের তিন নম্বর ডকের সামনে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দু’দল শ্রমিক। আর তা থামাতে গিয়েই আক্রান্ত হয় পুলিশ। দু’পক্ষের মারামারিতে মাথা ফাটে দক্ষিণ বন্দর থানার সাব-ইনস্পেক্টর প্রদীপ সর্দারের। পায়ে চোট লাগে থানার আর এক পুলিশকর্মীর। প্রদীপবাবুর মাথায় সেলাই পড়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের গোলমাল শুরু হয় একটি জাহাজের মাল খালাস করার বরাত নিয়ে। ওই সংস্থার মাল খালাসের দায়িত্ব আগে আহমেদ ওয়ারসি নামে এক ঠিকাদার পেতেন। কিন্তু এ বার তা পান ওয়াসিম আহমেদ নামে এক ঠিকাদার। অভিযোগ, এ দিন ওয়াসিমের শ্রমিকেরা মাল খালাস করতে এলে অন্য এক দল শ্রমিকের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁদের। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অন্য দলটির মধ্যে ওয়ারসির কয়েক জন শ্রমিক যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন বন্দর এলাকার একটি শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরাও।
বন্দর এলাকার খবর, ওয়াসিম আহমেদের ঠিকাদারি সংস্থা তুলনায় সস্তা দরে মাল খালাসের বরাত নিয়েছে। ফলে বাইরে থেকে শ্রমিক এনে কাজ করানো হচ্ছে। এ নিয়ে বন্দর এলাকার শ্রমিক সংগঠনের ক্ষোভ থাকায় তারাও গোলমালে ভিড়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ। পাশাপাশি, শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের যোগসাজশও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঠিকাদারি সংস্থার শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ বন্দর এলাকায় ক্ষমতা সমীকরণের অন্যতম ভিত্তি। দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যা রয়েছে। বন্দর এলাকায় বিভিন্ন দুষ্কৃতী-গোষ্ঠীর লড়াইও অচেনা নয়। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাও বন্দর এলাকায় ঠিকা শ্রমিক নিয়ন্ত্রণে জড়িত ছিল।”
সম্প্রতি গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পরে বন্দর এলাকার আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে উঠেপড়ে লেগেছিল লালবাজার। তা হলে এ দিনের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন? পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তবে পুলিশের একটি অংশের দাবি, বিবদমান শ্রমিকদের দু’টি গোষ্ঠীই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে ফের এই ধরনের ঘটনা নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে চাইছে না প্রশাসন।
মাস কয়েক আগেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল হলদিয়া বন্দরে। যার জেরে রাজ্য ছাড়তে হয় এবিজি সংস্থাকে। এ বার কলকাতা বন্দরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কি একই হাল হবে? নাকি কোনও ব্যবস্থা নেবেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ? কলকাতা বন্দরের এক মুখপাত্র বলেন, “ঘটনাটি বন্দর এলাকার বাইরে হয়েছে। তাই এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।” |