গার্ডেনরিচে সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় তার নামে আগেই জড়িয়েছে। এ বার ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশকর্মীদের হেনস্থার ঘটনাতেও উঠে এল ফেরার তৃণমূল কাউন্সিলার মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার ছেলে অনিলের নাম। সেই সঙ্গে মুন্নার দুই শ্যালক রাজা এবং সানিকেও খুঁজছেন ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসারেরা। পুলিশের অনুমান, তাপসবাবুর খুনের পর মুন্নার সঙ্গেই অনিল, রাজা ও সানি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
ডিসি (বন্দর)-এর নির্দেশে গত ৮ জানুয়ারি গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলতে
গিয়ে মুন্নার লোক জনের খপ্পরে পড়েছিল কলকাতা পুলিশের একটি টিম। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, গার্ডেনরিচে অধিকাংশ বেআইনি নির্মাণ চলে মুন্নার মদতে। তাই তাঁর কোপে পড়েছিল পুলিশের ওই দলটি। সে দিন পুলিশকর্মীদের মুন্নার দলবল জোর করে রামনগর মোড়ের ১৫ নম্বর বরো অফিসে ধরে নিয়ে যায়। এই অফিসেই বসতেন ওই বরোর চেয়ারম্যান মুন্না। তাঁর উপস্থিতিতে পুলিশকর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়। পরে সেখানে হাজির হন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনিও পুলিশকর্মীদের নানা ভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। সেই সময় খোদ ডিসি বন্দর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
কিন্তু রাজনৈতিক চাপের মুখে তখন এই ঘটনা নিয়ে পুলিশ নাড়াচাড়া করেনি। কিন্তু গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। মুন্নাদের বিরুদ্ধে পুলিশকর্মীদের অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তভার পশ্চিম বন্দর থানার হাত থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে গার্ডেনরিচ থানার হাতে।
গত শনিবার গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ আসলাম বাবা ওরফে মহম্মদ আসলাম ও মহম্মদ মুস্তাফা নামে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। ওই দু’জনকে জেরা করেই মুন্নার ঘরের লোক অনিল, রাজা ও সানি সম্পর্কে নানা তথ্য হাতে এসেছে।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, তাপসবাবুর মৃত্যুর দু’দিন পর থেকে মুন্নার পাশাপাশি ওই তিন জনও বেপাত্তা। পুলিশের দাবি, আসলাম বাবা ও মুস্তাফা জেরায় জানিয়েছে, মুন্নার ছায়াতেই তারা এলাকায় প্রোমোটিংয়ের কাজ করত। এবং নির্মাণের বেশির ভাগ কাজই হতো পুরসভার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। সেই বেআইনি নির্মাণের ছবি তুলতে যাওয়ায় মুন্নার দলবল বাধা দেয় পুলিশকে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, পুলিশ অপহরণের ঘটনায় বন্দর এলাকার অন্তত ২০ জন দুষ্কৃতীর খোঁজ চলছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “মুন্নার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ফৈয়াজ, টাকলা জাহাঙ্গীরের মতো দুষ্কৃতীদেরও খোঁজা হচ্ছে। এরা সবাই মুন্না-ঘনিষ্ঠ।” পুলিশের দাবি, বন্দর এলাকায় মুন্নার ডান হাত ছিল ফৈয়াজ। মুন্নার সব ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গেই সে জড়িত। ফৈয়াজের খোঁজ পেলে মুন্নার হদিস পেতে সুবিধে হবে এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এ দিকে, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সিআইডি-র অফিসারদের সঙ্গে সোমবার ভবানী ভবনে আলোচনা করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ। তাপসবাবুর খুনের ঘটনায় ধৃত ইবনের সঙ্গে সে দিন যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল, সেটি উদ্ধার করেছে সিআইডি।
রবিবার রাতে গার্ডেনরিচের আতাবাগানের একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে সেটি উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, ঘটনার দিন ওই অস্ত্র হাতে নিয়েই হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ইবনে। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের আরও অনুমান, ইবনের ছোড়া গুলিতেই আহত হয়েছিল তাহির। উদ্ধার করা অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল কিনা, তা জানার জন্য সেটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে। আজ, মঙ্গলবার ইবনে ও শেখ সুহানকে আলিপুর আদালতে তোলা হবে। তার আগেই এ দিন পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেল হাজতে থাকাকালীনই তাদের জেরা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। |