সাজিয়ে-গুজিয়ে পাত্রী পেশের হাসপাতালি কায়দা এ বার পরিবহণেও!
নতুন তিনটে রুট উদ্বোধনের জন্য আনা হয়েছিল মোট ছ’টা বাস। মন্ত্রী সবুজ পতাকা নেড়ে সেগুলোর যাত্রা-সূচনাও করে দিলেন। পরে জানা গেল, অন্য রুটের চালু বাসই সরিয়ে এনে উদ্বোধনের পর্ব সারা হয়েছে! ঠিক যেমন এমসিআই পরিদর্শনের সময়ে অন্য হাসপাতাল থেকে শিক্ষক, যন্ত্রপাতি এনে কনে সাজানোর মতো করে রূপটান দেওয়া হয় সরকারি হাসপাতালের চেহারায়। তাতে আখেরে যেমন চিকিৎসা-পরিকাঠামো বাড়ে না, তেমন এ ক্ষেত্রেও নতুন রুটে বাড়তি বাস বলতে কিছুই পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। এবং ধার করা বাস দিয়ে নতুন রুটের অস্তিত্ব কত দিন টিকিয়ে রাখা যাবে, সে সম্পর্কে বিরোধীদের মতো প্রশ্ন তুলেছেন বাস-মালিক, নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে পরিবহণ-কর্তাদেরও একাংশ।
বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে চালু হওয়া নতুন রুট তিনটি হল রাজারহাট, সল্টলেক-নবদিগন্ত এবং মধ্যমগ্রাম। সোমবার সকালে যার উদ্বোধন করলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, তিনটি রুটে প্রথম দফায় ছ’টি বাস চালু করা হলেও পরে আরও দু’টো আসবে। অর্থাৎ তখন তিন রুটে মোট আটটি বাস চলাচল করবে। |
১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে চালু হল নতুন তিনটি বাস রুট। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র |
শিল্পমন্ত্রী এ দিন বলেন, চোদ্দো নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন বাস চালু করার জন্য বেহালা-ঠাকুরপুকুরের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে দাবি তুলে আসছিলেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তার পরেই নতুন তিনটি রুট খোলা হল বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। “কোথা থেকে বাস নিয়ে এসে চালানো হচ্ছে, তা জানি না। শুধু জানি, এই স্ট্যান্ড থেকে আরও বাস দরকার, এবং তা চালু করতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, বাসগুলো চলবে।” মন্তব্য পার্থবাবুর। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার আক্ষেপ, “নতুন সরকার যা-ই করুক না কেন, খুঁত ধরাটা কিছু মহলের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে! তবে আমাদের প্রয়াস যে বিফল হবে না, তা প্রমাণ হয়ে যাবে।” বস্তুতই ১৪ নম্বর স্ট্যান্ড থেকে বহু দিন হয়ে গেল, কার্যত কোনও বাস ছাড়ে না। এলাকাবাসীও চাইছিলেন, সেখানে বাস আনার ব্যবস্থা হোক। এখন যখন ওখানে নতুন তিন-তিনটে রুট চালু হল, তখন সেই উদ্যোগ ঘিরে এ হেন বিতর্ক কেন?
কারণ অভিযোগ উঠেছে, খাতায়-কলমে নতুন রুট খুললেও আদতে নতুন বাস আসেনি। স্থানীয় অধিবাসী, নিত্যযাত্রী ও পরিবহণ-কর্তাদের একাংশ সল্টলেক-নবদিগন্ত ও মধ্যমগ্রাম রুট দু’টোকে নতুন হিসেবে ধরতেই নারাজ। এঁদের মতে, এটিকে বড়জোর সম্প্রসারিত রুট বলা যেতে পারে। কেননা ওই পথে এখন তারাতলা পর্যন্ত বাস চলাচল করে। আর সেই চালু রুটেরই দু’টো করে বাস এ বার বেহালা পর্যন্ত যাবে।
অর্থাৎ, নামে নতুন রুট হলেও বর্তমানের চালু রুট থেকেই বাস ছেঁটে তা চালানো হবে। অন্য দিকে রাজারহাট রুটটি নতুন হলেও এ দিন যে দু’টো বাস দিয়ে তার উদ্বোধন হল, সেগুলো আদৌ নতুন নয়। ভূতল পরিবহণ দফতরের খবর: সে দু’টোও অন্য চালু রুট থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানের তাগিদে কোন কোন রুট থেকে বাস তুলে আনা হল, ভূতল পরিবহণের কর্তারা তা খোলসা না-করলেও ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। তাড়াহুড়োর চোটে অন্য রুটের নাম লেখা অবস্থাতেই রওনা দিয়েছে নতুন রুটের কয়েকটা বাস!
পরিবহণমন্ত্রীর ব্যাখ্যা কী? নতুন রুট উদ্বোধনের খাতিরে অন্য রুটের বাস সরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মদনবাবু। “অন্য রুট থেকে বাস আনা হয়নি। আপৎকালীন প্রয়োজনের জন্য রাখা কয়েকটা বাস এ দিন যেমন চলেছে, তেমন কিছু বাস মেরামত করেও আনা হয়েছে।” দাবি পরিবহণমন্ত্রীর। যদিও বাস-মালিক ও কর্তাদের অনেকেই তা মানতে নারাজ। বিষয়টি নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েননি বিরোধীরাও। সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সরকারটাই চলছে হাঁসজারুর মতো জোড়াতালি দিয়ে। মাত্র ছ’টা বাস দিয়ে তিন-তিনটে রুট চালু করে যায় না। একটা বিগড়োলেই পুরো রুট মুখ থুবড়ে পড়বে! তা ছাড়া এই সব বাস দিয়ে নতুন রুট চলবে ক’দিন?” |