প্রথমে ঠিক প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল। মিনিট পনেরো সেই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষাও দেয় পরীক্ষার্থীরা। তার পরে আচমকাই তাদের কাছ থেকে জোর করে তা ফেরত নিয়ে ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠল। সোমবার, মাধ্যমিকের প্রথম দিনে প্রথম ভাষার পরীক্ষায় ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতারই অন্ধ্র হাইস্কুলে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানান, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া, এক বিষয়ের বদলে অন্য বিষয়ের প্রশ্নপত্র বিলি বা টোকাটুকির অভিযোগে গোলমাল মাধ্যমিকে নতুন ঘটনা নয়। দু’বছর আগে, ২০১১-য় কোচবিহারের একটি স্কুলে ইতিহাস পরীক্ষার দিনে পদাথর্র্বিদ্যার প্রশ্নপত্র বিলি হয়। তার জেরে পদার্থবিদ্যার পরীক্ষার দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৩ মার্চের পরিবর্তে সেই পরীক্ষা হয় ২২ মার্চ।
কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসা ছাত্রীদের ঠিক প্রশ্নপত্র দেওয়ার পরে তা ফেরত নিয়ে ভুল প্রশ্নপত্র বিলি করার ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল?
পর্ষদ সূত্রের খবর, এ বার বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের ২২ জন ছাত্রীর আসন পড়েছে অন্ধ্র হাইস্কুলে। তারা নতুন পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থিনী। তাদের মধ্যে ১৯ জনের আসন পড়েছিল স্কুলের একটি ঘরেই এবং বাকি তিন জন অন্য ঘরে পরীক্ষা দিতে বসে। ওই তিন জনের অভিযোগ, প্রথমে নতুন পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন দেওয়া হলেও মিনিট পনেরো বাদে তাদের কাছ থেকে জোর করে সেগুলি ফেরত নিয়ে পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন দেওয়া হয়। তারা দিশাহারা হয়ে পড়ে।
পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “ওই তিন ছাত্রী জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত অচেনা প্রশ্নেই কোনও রকমে পরীক্ষা দেয় তারা। কিন্তু পরীক্ষার শেষে অন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তারা বুঝতে পারে, কোথাও একটা গোলমাল হয়ে গিয়েছে। তারা পর্ষদের কাছে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছে।”
এক অভিযোগকারিণী ছাত্রীর মা এ দিন বলেন, “পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে স্কুল থেকে বেরিয়ে মেয়েরা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আমরা অন্ধ্র হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলি। ওঁরা জানান, বাংলা না-জানার ফলেই এটা ঘটেছে।” সেখান থেকে আমরা পুলিশের কাছে যাই। পুলিশই আমাদের পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।” আজ, মঙ্গলবার তাঁরা বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান ওই অভিভাবিকা।
পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময়বাবু অবশ্য অভিযোগের সত্যতা যাচাই না-করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “অভিযোগকারিণীরা রাতে বিষয়টি জানাতে আসে। ঘটনাটা ঠিক কি না, সেটা তো এখন জানা সম্ভব নয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মঙ্গলবার এই ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পর্ষদের প্রাক্তন কর্তারা এই প্রায় বেনজির ঘটনায় বিস্মিত। এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গাফিলতিতেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। ওঁদের উচিত ছিল পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।” অভিযোগ, পর্ষদ মনোনীত এক প্রতিনিধি সেই সময় ওই স্কুলে হাজিরও ছিলেন। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন গণ্ডগোল হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মাধ্যমিক শুরুর দিনে ন’টি প্রথম ভাষার পরীক্ষা ছিল। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ১০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৫৯ জন ছাত্রছাত্রী। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি স্কুলে টোকাটুকির অভিযোগ উঠেছে। টোকাটুকিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসক। |