‘সের-পাই’ বাঁচাতে উদ্যোগী প্রশাসন
খন ডায়েরি প্রকাশের যথার্থ সময় নয়। দেরিতে হলেও সদ্য প্রকাশিত খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির নতুন বছরের ডায়েরিতে রয়েছে ব্লক সম্পর্কিত নানান তথ্য। যেমন খয়রাশোলের বিশিষ্ট ব্যক্তি, পুরাকীর্তি, দ্রষ্টব্য স্থান, শিল্প, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ইত্যাদি। তবে চমক তথ্যে নয়, প্রচ্ছদে।
খয়রাশোল ব্লকের বিখ্যাত এবং বিপন্ন ‘সের-পাই’ কুটির শিল্পের ছবি দিয়েই তৈরি হয়েছে ডায়েরির কভার পেজ। উদ্দেশ্য এই শিল্পকে নতুন করে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা। খয়রাশেলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “শুধু ডায়েরির কভার পেজ নয়, ব্লকের গর্বের এই কুটির শিল্পকে বাঁচাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ‘সের-পাই’ বা ‘সিউড়ি বোল’ (জেলার বাইরের মানুষ যে নামে এই শিল্প কে চেনেন) শিল্পের কোনও অস্তিত্ত্ব থাকবে না।”
ডায়েরিতে সের-পাই।
চল্লিশের দশকে খয়রাশোলের লোকপুরের বাসিন্দা কমলাকান্ত কর্মকারের হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছিল এই শিল্পের। আগেকার জিনিস মাপার পরিচিত মাধ্যম সের ও পাই-কে আলাদা রূপ দিয়েছিলেন তিনি। কাঠের সের ও পাইয়ের উপর পিতলের কারুকার্য করে প্রশংসা পেয়েছিলেন সকলের। তার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নিজের সৃষ্ট শিল্পকে নিয়েই ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয়েছিলেন তিনি। শিল্প সৃষ্টির জন্য ১৯৬৫ সালে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও। বংশ পরম্পরায় সেরপাই শিল্পকে আকড়ে ধরে জীবীকা নির্বাহ হয়েছে কর্মকার পরিবারের। তার পর বহু সময় গড়িয়েছে। বর্তমানে এই শিল্প কমলাকান্তের চতুর্থ প্রজন্মের হাতে। তবে নাতি কার্তিক কর্মকারের বয়স বেড়ে যাওয়ায় সে ভাবে আর ওই কাজ করতে পারেন না। কার্তিক বাবুর ছেলে কাজ জানলেও সেভাবে উৎসাহী নন, বর্তমানে ওই কাজের দায়িত্ব মূলত মেয়ে রুমা ও জামাই ভোলানাথ কর্মকারের হাতেই রয়েছে। কিন্তু ভোলানাথ বাবুদের আবার তিন মেয়ে। তারা বড় হয়ে এই পেশায় আসবে কি না তাও সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
হারিয়ে যাচ্ছে সের-পাই শিল্প।—নিজস্ব চিত্র।
এখান থেকেই ভাবনার শুরু। বিডিও বলেন, “যে শিল্পের খ্যাতি রয়েছে, বাজার রয়েছে সেটা যদি এলাকার আরও কিছু মানুষকে শেখানো যায় সেটা নিশ্চিত করতেই ভোলানাথবাবুর সঙ্গে কথা বলে ঠিক হয়েছে, কাজ শিখতে আগ্রহী এলাকার স্বনির্ভর দলকে কাজ শেখাতে প্রশিক্ষণ দেবেন তিনি এবং জায়গা কিনে ওখানে একটি বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তৈরি শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য সাহায্য নেওয়া হবে জেলা শিল্প বিভাগের। ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তোলার জন্য চার শতক জায়গা দেখা হয়েছে।” তবে প্রশাসনের এই ধরনের প্রচেষ্টা আগেও সফল হয়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে ভোলানাথবাবুর। তিনি বলেন, “এর আগেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হয়েছিল। তবে সেবার ওবিসি শংসাপত্র ছাড়া কিছুই জোটেনি।” ভোলানাথবাবু এবং রুমাদেবীরা বলেন, “কাজের চাহিদা আছে। ব্লক প্রশাসন উদ্যোগী হলে আমাদের আপত্তির কিছু নেই, কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হলে খুশি হব।” বিডিও মহম্মদ ইসরার এবং খয়রাশোলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর রায়ের আশ্বাস, “এ বার তেমন কিছু ঘটবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.