বারাসতের পর রামপুরহাট
বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আবার আক্রান্ত দাদা
বারাসতের পরে রামপুরহাট।
যে রাতে মদ্যপ যুবকের হাত থেকে বোনের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে বারাসতে আক্রান্ত হলেন দাদা ও ভাই, সেই রবিবার রাতেই রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, পাঁচ জন যুবক ওই তরুণীর কাপড় ধরে টানাটানি করে তাঁকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। বোনের চিৎকার শুনে দাদা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ায় রক্ষা পান তিনি। দুষ্কৃতীরা ওই যুবককে কাঠ দিয়ে আঘাত করে বলেও অভিযোগ।
নিগৃহীতা তরুণী আবার ওই হাসপাতালেরই এক কর্মীর মেয়ে।
ওই কর্মী হাসপাতালের তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সদস্যও। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তেরা পলাতক। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “ওই ঘটনায় শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।” তরুণীর বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা হাসপাতাল চত্বরেই দালালি করে। তাদের বাড়ি হাসপাতালপাড়া সংলগ্ন জয়কৃষ্ণপুর-দিঘিরপাড় এলাকায়। অভিযুক্তদের নামও এফআইআরে রয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যাতেই ডানকুনিতে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ওঠে পড়শি যুবক মোক্তার মোল্লার বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে ডানকুনি পুরসভার মৃগালা ছাউনিপাড়ার বাসিন্দা মোক্তারকে ধরে পুলিশ। ওই নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, বছর চোদ্দোর মেয়েটি আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিল। তখনই মোক্তার তাকে টেনে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে ধর্ষণ করে। রাতে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। সোমবার সকালে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে আরও এক দফা পরীক্ষা হয়।
এ তো না হয় সুনসান রাস্তা। কিন্তু, রামপুরহাটে ওঠা অভিযোগ হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। হাসপাতাল চত্বরে মদের আসর, জুয়া খেলার মতো অসামাজিক কার্যকলাপ বা দালালদের বাড়বাড়ন্ত নিয়েও ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদারের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, রামপুরহাটের মহকুমাশাসক তথা ওই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রত্নেশ্বর রায় বলেন, “পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে হাসপাতাল কর্মীর মেয়ে দাবি করেছেন, বাবাকে রাতের খাবার পৌঁছে দিয়ে পৌনে ১২টা নাগাদ পরিচারিকার সঙ্গে তিনি নিজেদের কোয়ার্টারে ফিরছিলেন। জরুরি বিভাগ পেরিয়ে একটি গাছতলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি থেকে হঠাৎ দুই যুবক নেমে এসে ওই তরুণীর পোশাক ধরে টানাটানি করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। গাড়ির ভিতরেও তিন জন ছিল।
সোমবার ওই তরুণী বলেন, “ওদের টানাটানিতে আমার জামা ছিঁড়ে যায়। কাছেই আমার দাদা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ছিল। আমার চিৎকার শুনে দাদা ছুটে এসে বাঁচাতে এলে ওই দুষ্কৃতীরা ওকে কাঠ দিয়ে মারে। আমি কোনও রকমে দৌড়ে কোয়ার্টারের দিকে পালিয়ে যাই।” তরুণীর দাদার দাবি, “কয়েক জন যুবক বোনের জামা ধরে টানাটানি করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছিল। আমি বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হই। বোন অবশ্য রক্ষা পেয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে আমিও মাঠ দিয়ে দৌড় লাগাই। দুষ্কৃতীরা গাড়িতে পালায়।”
হাসপাতালকর্মীদের একাংশের অবশ্য ধারণা, ঘটনাটি দালালির কর্তৃত্বকে ঘিরেও হয়ে থাকতে পারে। তরুণীটির দাদা ওই হাসপাতালেই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবসা করেন। তা নিয়ে অন্য চালকদের একাংশের সঙ্গে তাঁর বিরোধও রয়েছে।
রামপুরহাট ও ডানকুনির ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারের মনোভাবের সমালোচনা করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। আলিমুদ্দিনে সোমবার একটি স্মরণসভায় তাঁর বক্তব্য, “নারীর ইজ্জত লুঠ করা হচ্ছে। রামপুরহাটে হাসপাতালে বাবাকে খাবার পৌঁছতে গিয়েছিল মেয়ে ও তাদের পরিচারিকা। তাদের ইজ্জত লুঠ হয়েছে। ডানকুনিতে এক নাবালিকাকে হাত বেঁধে সংজ্ঞাহীন করে ধর্ষণ করেছে দুষ্কৃতী। এই যে সব ঘটনা ঘটছে, কোনও হুঁশ নেই! সরকার বলবে, অতি ছোট ঘটনা! রাজ্য সরকার উদাসীন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.