চিকিৎসকের যোগ্যতা বিচারের নতুন মাপকাঠি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ফতোয়া জারি হয়েছে, জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিচালিত হাসপাতালগুলির চিকিৎসকদের ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণ করতে না পারলে কোনও বিদেশি চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে না। এপ্রিল থেকেই এই নীতি চালু হতে চলেছে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর ড্যান পোল্টার জানিয়েছেন, রোগীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে ভাষাগত ব্যবধান থাকলে উপযুক্ত চিকিৎসা সম্ভব নয়। জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবায় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার জন্য ইংরেজি বলতে পারাটা জরুরি। যাঁরা পারেন না, তাঁদের চিকিৎসা করতে দেওয়া হবে না।”
২০০৮ সালে ড্যানিয়েল উবানি নামে এক জার্মান চিকিৎসক, এক ব্রিটিশ রোগীকে মারাত্মক বেশি মাত্রার ওষুধ দিয়ে ফেলায় মারা যান
তিনি। অসুস্থ ডেভিডের সঙ্গে ড্যানিয়েলের ভাষাগত ব্যবধানই এই বিপত্তির কারণ ছিল। সে সময় সাসপেন্ড করা হয়েছিল ড্যানিয়েলকে। কিন্তু পরে ফের তিনি অন্য হাসপাতালে যোগ দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। কোনও চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হলে তিনি ব্রিটেনের অন্য কোনও হাসপাতালে যোগ দিতে পারবে না।
স্থানীয় সংবাদ সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত বছরই বেশ কিছু বিদেশি চিকিৎসকের স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া হয়েছে ব্রিটেনে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ১২৩ জন ভারতীয়, ৩৩ জন নাইজিরীয় ও মিশরীয় এবং ৩২ জন পাকিস্তানি।
জেনারেল মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান কর্মকর্তা নিয়াল ডিকসন বলেছেন, “আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ ঠিক। চিকিৎসকের ভাষার উপর রোগীর আস্থা থাকা চাই। আমরা বহু বছর ধরেই চেষ্টা করছি। এখন সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে দেখে ভাল লাগল।” রোগী-সুরক্ষায় নির্মিত সংগঠনের প্রধান কর্মকর্তা ক্যাথরিন মারফিও জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি অভিবাসন রুখতে ব্রিটিশ সরকার যে ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, সে কথা মাথায় রেখে অনুমান করা যায়, যে এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ ব্রিটেনে অভিবাসনের উপর ফের কোপ পড়তে চলেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত মাসে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার এও ঘোষণা করেছিল, ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ব্রিটিশ ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। অবাধ অভিবাসনের উপর রাশ টানতেই এ ভাবে নানান নতুন পদক্ষেপ করছে ব্রিটেন সরকার।
চিকিৎসকদের ইংরেজি ভাষা জানার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি যে এ ব্যাপারে বেশ কড়া হাতিয়ার হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। |