যত্রতত্র পার্লারে বিপদ, নিয়ন্ত্রণে এ বার অভিযান
লিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠা বিউটি পার্লারগুলির বিরুদ্ধে এ বার অভিযানে নামবে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। এই দফতরে নিরন্তর জমতে থাকা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে।
মন্ত্রী জানান, ছোট বিউটি পার্লারগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। কোথাও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরিষেবা না পাওয়া, কোথাও চুল বা ত্বকের পরিচর্যার নামে বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ঘটনা আকছার ঘটছে। বিউটি পার্লারগুলির উপরে সরকারি তরফে কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকাতেই এমন ঘটছে বলে মনে করছেন দফতরের কর্তারা। গুরুত্ব বুঝে এ বার তাই অলি-গলিতে গজিয়ে ওঠা পার্লারগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে অভিযান শুরু করবে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। সাধনবাবু বলেন, “সাঙ্ঘাতিক অভিযোগ পাচ্ছি। লেকটাউনের এক মহিলা পাড়ার পার্লারে তাঁর চুল স্ট্রেট করাতে গিয়েছিলেন। সেখানে এমন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যে ওঁর সব চুল উঠে গিয়েছে। উনি আমাদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এমন যথেচ্ছাচার চলতে দেওয়া যায় না।”
শহরের এক পার্লারে। —নিজস্ব চিত্র
কারা লাইসেন্স দেয় বিউটি পার্লারগুলিকে? কীসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়? কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, তারা যে লাইসেন্স দেয়, তা ট্রেড লাইসেন্স। পুরসভার রেভিনিউ লাইসেন্স বিভাগের চিফ ম্যানেজার ভাস্কর ঘোষ বলেন, “আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে সার্টিফিকেট অফ এনলিস্টমেন্ট দেওয়া হয়। বছর বছর তার নবীকরণ করা হয়। তবে পরিষেবা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা থাকে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা যায়। কিন্তু সেটা জানান ক’জন?”
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের কর্তারা মনে করছেন, সচেতনতার অভাবেই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে পারেন না। পার্লারে পরিষেবা নিয়ে চর্মরোগের নানা অসুখে ভুগছেন, এমন রোগীর ভিড় বাড়ছে ডার্মাটোলজিস্টদের চেম্বারেও। চর্মরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষের কথায়, “ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক থেকে এক ধরনের সংক্রমণ হয়। পার্লারে এক জনের ব্যবহার করা তোয়ালে অন্য জন ব্যবহার করলে ‘ক্রস ইনফেকশন’-এর ভয় থাকে। বহু রোগী পাচ্ছি, যাঁদের ক্রস ইনফেকশন হয়েছে।”
হঠাৎ গজিয়ে ওঠা আপাত ঝকঝকে পার্লারে ম্যাসাজ করিয়ে অয়েল ফলিকুলাইটিস হয়েছে, এমন অভিযোগও প্রচুর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অয়েল ফলিকুলাইটিস তেল থেকে হওয়া রোমকূপের গোড়ায় এক ধরনের সংক্রমণ। এই সংক্রমণকে একটা সময় গোটা পৃথিবীতেই ‘ট্রপিক্যাল লেগ সিন্ড্রোম’ বলা হত। বিশেষজ্ঞদের কথায়, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বহু সময়েই দেখা যেত পিচ বা আলকাতরা কারখানার শ্রমিকেরা এমন সমস্যায় ভুগতেন। কাজ করার সময়ে পায়ে গরম পিচ পড়ে ওই রোগ হত তাঁদের। চর্মরোগ চিকিৎসক সন্দীপন ধরের কথায়, “এক সময়ে গরিব শ্রমিকেরা যে রোগে আক্রান্ত হতেন, ধনীরা তাঁদের বিলাসের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেই রোগটা আমদানি করছেন। নিয়মিত তেল মালিশ করলে সিবেসিয়াস গ্রন্থি আটকে যেতে পারে, তার জেরে শরীরের ওই সব অংশে ফোঁড়া বা দানার মতো বেরোয়।”
কী বলছেন ছোট বিউটি পার্লারগুলির মালিকেরা? দক্ষিণ কলকাতার এক পার্লারের তরফে মেহের সেহগল বলেন, “আমরা কম টাকায় পরিষেবা দিই বলে মানের সঙ্গে আপস করি এমন ভাবার কারণ নেই। আমরা যথেষ্ট সতর্ক। তবে এখন পান থেকে চুন খসলেই অনেকে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলার হুমকি দেন।” শ্যামবাজারের এক ছোট পার্লারের মালিক অচিন্ত্য মালাকার বলেন, “কিছু পার্লারে বিচ্ছিন্নভাবে সমস্যা হতে পারে। তার সঙ্গে সবাইকে এক করে দেখা ঠিক নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.