ক্যালেন্ডারের পাতায় ফাল্গুন হাজির। কিন্তু বসন্তের দখিনা বাতাসের দেখা নেই!
তার বদলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বরং উত্তুরে হাওয়া ও পুবালি বায়ুর রমরমা। ভোরে, রাতে শীত-শীত ভাব, দুপুরে ভ্যাপসা গরম। বসন্তের আগমন কার্যত টেরই পাওয়া যাচ্ছে না! সব মিলিয়ে ঋতু বদলের চেনা ছবিটা যেন পাল্টে গিয়েছে।
আর সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না-পেরে কাবু শিশু থেকে বৃদ্ধ। খুশখুশে কাশি, গলা ব্যথা, সর্দি-জ্বর তো রয়েইছে, নিয়ম মেনে জলবসন্ত (চিকেন পক্স)-ও শুরু করেছে চোখ রাঙাতে। আবহাওয়া এমন খামখেয়ালি কেন?
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, “যে কোনও মরসুম পাল্টানোর সময়ে একটা অস্থির আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। এখন শীতের পরে বসন্ত আসছে। তাই এই অবস্থা।” আবহবিদেরা বলছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে উত্তর ভারত থেকে উত্তুরে হাওয়া পূর্ব ভারতের দিকে সরে এলেও দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকতে পারছে না। বঙ্গোপসাগর উপকূলে জলীয় বাষ্পের ঘন আস্তরণে বাধা পেয়ে তার গতিপথ খানিকটা বদলে যাচ্ছে। এখানে কখনও বাতাস বইছে পূর্ব দিক থেকে, কখনও উত্তর-পূর্ব থেকে। দখিনা বাতাসের কী হল? গোকুলবাবু বলেন, “এ সময়ে দখিনা বাতাস নিয়মিত ভাবে বয় না। মাঝে-মধ্যে মালুম হয়। ঠিকঠাক বসন্তের আঁচ পেতে দক্ষিণবঙ্গকে আরও ক’টা দিন অপেক্ষা করতে হবে।”
অর্থাৎ, তত দিন আবহাওয়ার মতিগতি কিছুটা অস্থিরই থাকবে। যার পুরো ফায়দা তুলতে নেমে পড়েছে রোগ-জীবাণুর দল। মানবশরীর যখন হাওয়া বদলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যস্ত, মওকা বুঝে তখনই তারা হামলা চালাচ্ছে। ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে সর্দি-জ্বর-কাশি-গলা ব্যথা নিয়ে অনেকে আসছেন। বাড়ছে চিকেন পক্স। এর মোকাবিলায় চিকিৎসকেরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, রাত ও ভোরের দিকে হাল্কা চাদর, শীতবস্ত্র সঙ্গে রাখা উচিত। কেননা ওই সময়ে তাপমাত্রা কম থাকে বলে চট করে ঠান্ডা লেগে যাতে পারে। ঘুমোনোর সময়ে গরম বোধ হলেও হুটহাট ফ্যান না-চালানোই ভাল। “এই সময়টায় গরম লাগলেও বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জল খাওয়া বা স্নান করা ঠিক নয়। সুস্থ থাকতে হলে কিছুটা সাবধানে থাকতে হবে।” পরামর্শ দিচ্ছেন মেডিসিন-বিশেষজ্ঞ সুব্রত মৈত্র।
তবে এ বার বসন্তের আগমন যে কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে, আবহবিদদের অনেকে তা মানছেন। তাঁরা বলছেন, এ বার শীতের ওঠা-পড়া গত ক’বছরের পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে গিয়েছে। চলতি মরসুমে দক্ষিণবঙ্গ তিন বার শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে। পারদ পতনের দৌড়ে লন্ডনকেও টেক্কা দিয়েছিল কলকাতা। অন্য দিকে উচ্চচাপের ধাক্কায় পৌষ-মাঘে কখনও কখনও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। মাঝে বৃষ্টির দরুণ হাওয়ার গতি বদলে গিয়ে পুবালি হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। তার পুরো রেশ এখনও কাটেনি।
তাই বসন্তকালের জলবায়ুও স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি মেনে চলবে এমন নিশ্চয়তা মিলছে না। বিশেষজ্ঞদের দাবি: গত দু’মাসে আবহাওয়ার খেয়ালি মেজাজের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল পশ্চিমী ঝঞ্ঝার (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা বায়ুপ্রবাহ, যা আফগানিস্তান-পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢোকে, পরে নেমে আসে দেশের সমতলে)। সাইবেরিয়ায় বায়ুপ্রবাহে পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় এ বার পরের পর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে ঢুকেছে। তা সমতলে নেমে আসায় কখনও ঠান্ডা পড়েছে জাঁকিয়ে, কখনও আবার উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়ে রুখে দিয়েছে উত্তুরে হাওয়ার পথ।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, দিন কয়েক আগে এমন একটি ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে হাজির হয়েছিল। তার রেশ না-কাটতেই আগামিকাল, মঙ্গলবার ফের একটি ঝঞ্ঝা আসার কথা রয়েছে। যা কিনা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টি নামাতে পারে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস: আজ, সোমবার উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের একাংশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তরাই-ডুয়ার্সেও। তবে কলকাতা মহানগর-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস নেই। এ দিন উপগ্রহ-চিত্রে দক্ষিণবঙ্গের উপরে মেঘের উপস্থিতি ছিল না।
আগামী কয়েকটা দিন কেমন কাটবে? আলিপুরের আবহবিদেরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গ থেকে শীত প্রায় বিদায় নিলেও তরাই-ডুয়ার্স ও রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা এখনও শীতের সূচকের মধ্যে। আলিপুরের তথ্য: রবিবার কলকাতা ও আশপাশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ১ ডিগ্রি কম। তবে দিন দু’য়েকের মধ্যে তা স্বাভাবিকে পৌঁছে যাবে বলে আবহবিদদের অনুমান।
|
সাবধানের মার নেই |
• ভোরে, রাতে হাল্কা শীতবস্ত্র
• শোয়ার সময়ে ফ্যান নয়
• ঘরে ঢুকেই ঠান্ডা জল খাবেন না
• একটু জিরিয়ে নিয়ে স্নানে যান
• জ্বর-সর্দিতে প্যারাসিটামল খান
• তাতে না-হলে ডাক্তার দেখান
• গায়ে গুটি বেরোলে হুঁশিয়ার |
|