অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করলা নদীর বাঁধে ভর সন্ধ্যায় এক কিশোরীকে খুন করার ঘটনার পরে, নিরাপত্তা বাড়াতে বাঁধে আলো বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর পরে আলোচনা আর কয়েকপ্রস্ত বৈঠকেই মাস পেরিয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, বাঁধে আলো বসাতে আরও প্রায় মাসখানেক সময় প্রয়োজন।
জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনারের দফতরের পেছনের করলা বাঁধে গত ২৪ জানুয়ারি শহরেরই বাসিন্দা এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার করা হয়। আগের রাতে তাকে বাঁধে নিয়ে গিয়ে নদীর পাঁকে মুখ গুঁজে দিয়ে খুন করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে মদ ও বিয়ারের অসংখ্য ফাঁকা বোতল পাওয়া যায়। এই ঘটনা ঘটার পরেই শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পরে অন্ধকারে ঢেকে থাকা শহরের বাঁধগুলির নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই বাঁধের নিরাপত্তা নিয়ে শুরু হয় প্রশাসনিক আলোচনা, বিষয়টি নিয়ে গত একমাসে কয়েকটি বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি পুরসভাকে আলো লাগানোর প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন। গত সপ্তাহে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং পুর চেয়ারম্যানের বৈঠকের পরে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মাস খানেকের মধ্যে অস্থায়ী ভাবে বাঁধে আলো লাগিয়ে দেওয়া হবে, স্থায়ী আলোর ব্যবস্থা করতে আরও সময় লাগবে।
তিস্তা ও করলা দুই নদীর প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ, জলপাইগুড়ি শহর এলাকার মধ্যে পড়ে। বিস্তীর্ন বাঁধে কোনও আলো বা পথবাতির ব্যবস্থা না থাকায়, সন্ধ্যের পরেই গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। মনোরম পরিবেশের কারণে প্রাত ও সন্ধ্যা ভ্রমণকারী থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দা এবং পর্যটকের আনাগোনা লেগেই থাকে। সন্ধ্যার পরে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে বাঁধ জুড়েই অসামাজিক কাজকর্ম এবং নেশার আড্ডা শুরু হয় বলে অভিযোগ। বাঁধের ওপরে পুলিশি টহলদারি চললেও কয়েক কিলোমিটার লম্বা বাঁধের, ঢালু অংশে ঝোপজঙ্গলের আড়ালে ঘন অন্ধকারে কী ঘটছে, তা দেখা সম্ভব নয়। সে কারণেই বাঁধে আলো লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “গত সপ্তাহেই পুলিশ সুপার ও পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাঁধের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
গত সপ্তাহেও প্রশাসনিক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পরে বাঁধের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার পরে শহরের সুভাষ সেতু ও চিলড্রেন্স পার্ক লাগোয়া করলা নদীর দুটি বাঁধে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হচ্ছে। করলা ও তিস্তা নদীর শহরের তিনটি বাঁধের দু দিকেই গেট লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। জুবলি পার্কে হাইমাস্ক আলো লাহানো হবে। যাতে এলাকার প্রায় ২০০ মিটার আলোকিত থাকে। এছাড়াও করলা নদীর বাঁধেও আলো লাগানো হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “পুরসভা বাঁধে আলো ব্যবস্থা করছেন। তবে তার আগেই সন্ধ্যার পরে বাঁধে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করতে সরকারি নোটিশ জারি করার প্রক্রিয়া চলছে।” জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলে, “স্থায়ী ভাবে আলোর ব্যবস্থা করতে বেশ কিছু সময় লাগবে বলে, আপাতত অস্থায়ী ভাবে আলোর ব্যবস্থা করছে পুরসভা। আগামী মাসের মধ্যেই বাঁধে আলো বসে যাবে। সন্ধ্যার পরে বাঁধের দুদিকের গেট বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থাও হচ্ছে।” |