শিলিগুড়িতে নারী নিগ্রহ নিয়ে সেমিনার
পুলিশের ‘ভূমিকা’র সমালোচনায় সুনন্দা
‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’-এ এই রাজ্যের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক বলে মনে করেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। রবিবার শিলিগুড়ির রামকিঙ্কর হলে রাজ্য মহিলা কমিশন এবং জেলাপ্রশাসনের উদ্যোগে এ ব্যাপারে এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “এখনও আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা প্রচার করতে হচ্ছে। তাতেই স্পষ্ট কী অবস্থায় রয়েছি।”
মহিলা নিগ্রহের ঘটনা ঠেকাতে রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে অভিযোগ সুনন্দা দেবীর। এমনকী পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে দময়ন্তী সেনের মতো পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকা প্রশাংসা পেলেও তিনিও অনেক ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা নিতে পারেননি বলে সুনন্দা দেবীর অভিযোগ। তিনি বলেন, “পুলিশের মানসিকতার আমূল পরিবর্তন দরকার। কোনটা শ্লীলতাহানি আর কোনটা ধর্ষণ সেটাই পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। তারা দ্বিধায় থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ নিতে চান না।” তাঁর কথায়, “ধর্ষণের মতো অপরাধ এখন একটা সমাজিক ব্যধির মতো। বিভিন্ন জেলায় ঘোরার সময় বলেছি, মহিলারা যখন থানায় কোনও অভিযোগ জানাতে যান তাঁদের কথা যেন গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়। যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হয়। অথচ পুলিশের কাছ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার মিলছে না।”
তিনি জানান, পার্কস্ট্রিটের মতো একটি ঘটনায় দময়ন্তী সেনের উপর আলোকপাত হলেই হবে না। দময়ন্তী সেনের কাছে তিনি নিজে মহিলাদের উপর অত্যাচারের অনেক ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সে সব ক্ষেত্রে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেননি। পুলিশের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থার সহায়তাও পুরোপুরি মিলছে না বলে তিনি জানান। মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা কী বেড়েছে? সুনন্দাদেবীর কথায়, তা নয়। তবে এখন ঘটনাগুলি বেশি করে নজরে আসছে। সেগুলিকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে।
মহিলা বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি কালে মেয়েদের উপর নানা ভাবে শারীরিক হেনস্থার ঘটনা রোধে স্কুল-কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালগুলিতে ‘মন সমীক্ষণ’-এর ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকারকে বলবেন রাজ্য মহিলা কমিশন। মন সমীক্ষকদের পরামর্শ এ ধরনের সমস্যা মেটাতে সহায়ক হবে বলে তারা মনে করেন। এ দিন এমনটাই জানিয়েছেন সুনন্দা দেবী। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে, স্কুল-কলেজে, সমাজে নানা ভাবে মেয়েরা যৌন হেনস্থা, অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। অথচ তাদের যন্ত্রণার কথা খুলে বলার বলার মতো জায়গা অনেক সময় পান না। এ জন্য হাসপাতালগুলিতে, স্কুল-কলেজে এ ধরনের ক্লিনিক করা প্রয়োজন। সেগুলি সক্রিয় হতে হবে। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, মনবিদ থাকা উচিত। রাজ্য সরকারের কাছে আমরা এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেব।” সংশোধনাগারগুলিতেও একই ভাবে মনবিদ নিয়োগের কথা জানাবেন। কেন না অপরাধীকে মূল স্রোতে ফেরানোই মূল উদ্দেশ্য বলে তিনি মনে করেন। জানান, উত্তরবঙ্গের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় নারী পাচারের ঘটনা বন্ধ করতে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন দরকার। পণপ্রথার মতো বিষয় লৌকিকতার মোড়কে এখনও সমাজে রয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বর্তমানে দার্জিলিং জেলায় ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স প্রটেকশন অফিসার’ নেই। জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক বিজয় কুমার রায় সেই দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছেন গত ৪ মাসেরও বেশ সময় ধরে। যিনি ওই পদে ছিলেন মেদিনীপুরে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই সেটি ফাঁকা রয়েছে। সুনন্দা দেবী জানান, দ্রুত ওই পদে আধিকারিক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারকে মহিলা কমিশনের তরফে বলা হবে। পাশাপাশি এই জেলায় মহিলাদের জন্য হোম তৈরির আর্জিও তারা জানাবেন। কেন না কোনও অভিযোগ এলে সে ব্যাপারে রিপোর্ট তৈরির থেকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে ওই আধিকারিককেই মুখ্য ভূমিকা নিতে হয়। বাস্তবে ওই আইন অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা মেটাতে কার্যকর হয়ে উঠছে না বলে তিনি জানান। এ দিনের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিং জেলা জজ এ কে কাপ্রি, অতিরিক্ত জেলা জজ এস রে, মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, মহিলা কমিশনের দার্জিলিং জেলার দায়িত্বে থাকা জোৎস্না অগ্রবাল-সহ অনেকেই। পুলিশ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিনিধিরা এ দিন সেমিনারে যোগ দেন। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্নত্তোর পর্বে তাঁরা অংশ নেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.