|
|
|
|
সতর্কবার্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের |
আবার ফিরছে কেএলও, অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
উত্তরবঙ্গ ও নিম্ন অসমের
বিস্তীর্ণ এলাকায় জাল বিস্তার করতে ফের কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) জঙ্গিরা সক্রিয় হয়েছে বলে দুই রাজ্যকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পুলিশ সূত্রের খবর, ১৭ ফেব্রুয়ারি সিকিমের গ্যাংটকে উত্তর পূর্ব ভারতের সব
ক’টি রাজ্যের পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলদের বৈঠকে ওই সতর্কবার্তা দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জেনেছে, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে কেএলও জঙ্গিরা ভুটান থেকে বিতাড়িত হয়ে এখন বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছে। সেখানে প্রথম দু’টি ব্যাচে প্রশিক্ষিত অন্তত ৫০ জন নিম্ন অসম ও উত্তরবঙ্গে ঢুকে অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। কেএলও-র এই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা সম্পর্কে রাজ্য পুলিশ ওয়াকিবহাল। ওই সতর্কবার্তা পেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে গোটা উত্তরবঙ্গেই বাড়তি নজরদারিতে নেমেছে পুলিশ। শনিবার শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ার ঘোষপুকুর থানা এলাকা থেকে সেবক বর্মন ওরফে জয়দেব ও মোহন রায় ওরফে কোচ নামে দুই সন্দেহভাজন কেএলও জঙ্গিকে ধরা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জয়দেব বাংলাদেশ সীমান্ত ও মোহন মায়ানমার সীমান্তের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ধৃতদের কাছ থেকে মিলেছে ৭.৬৫ মিমি পিস্তল ও ২১ রাউন্ড কার্তুজ।
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে প্রশিক্ষিত কোনও কেএলও জঙ্গি ধরা পড়ার ঘটনা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। নানা ধরনের নাশকতার ছক রয়েছে বলে ধৃতেরা জেরায় কবুল করেছে। এমনকী, শিলিগুড়িতেও বিস্ফোরণ ঘটানোর ছকও কেএলও-র রয়েছে বলে দাবি করেছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কেএলও জঙ্গিদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) একাংশ ফের সামিল হচ্ছে বলে পুলিশ জেনেছে। জয়দেব, মোহনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ঘোষপুকুরের কেপিপি নেত্রী আলতি সিংহকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। এক সময়ে আত্মসমর্পণ করে মূলস্রোতে ফিরতে চাওয়া জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানদের একটা অংশও ফের কেএলও-র দিকে ঝুঁকছেএই তথ্য পুলিশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
২০০৩ সালে ভুটানে সেনা অভিযানের পরে কেএলও-র স্বঘোষিত ‘চিফ’ জীবন সিংহ ছাড়া সংগঠনের সিংহভাগ সদস্যই ধরা পড়েন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক জঙ্গি, লিঙ্কম্যান আত্মসমর্পণও করেন। মূলস্রোতে ফিরতে চাওয়া কেএলও জঙ্গি-লিঙ্কম্যানদের স্বনির্ভর করতে রাষ্ট্রীয় সমবিকাশ যোজনায় অর্থ সাহায্য করার কথা ঘোষণাও করে রাজ্য। কিছু জঙ্গি ও লিঙ্কম্যান সেই প্রকল্পে সাহায্য পেয়ে গাড়ি কিনেছেন, ছোট দোকান খুলেছেন। কিন্তু, অধিকাংশই কোনও সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের সরকার জেলবন্দি আত্মসমর্পণকারী টম অধিকারী-সহ কিছু কেএলও জঙ্গিকে ছাড়ার ব্যবস্থা করে। অভিযোগ, অনেক ঘুরেও সরকারি সাহায্য না পেয়ে টম জঙ্গি জীবনেই ফিরেছেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এখন নিম্ন অসমের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ক্যাম্পে জীবন সিংহ রয়েছেন। মালখান সিংহের মতো শীর্ষ কেএলও জঙ্গি মালদহের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে বারবার ‘সিম’ কার্ড পাল্টে হুমকি দিয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। আত্মগোপনকারী জঙ্গি জীবন সিংহ, টম অধিকারী, মালখান সিংহরা কী চাইছেন সেটাও বুঝতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, “কেএলও ফের মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টার ব্যাপারে সরকার ওয়াকিবহাল। বাম জমানায় আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা কেন পুরনো পথে হাঁটতে চাইছে, জানা দরকার। আত্মসমর্পণকারীরা দু’বার আমার সঙ্গে দেখাও করেছেন। এখন ওঁদের কয়েক জন আত্মগোপন করে পুরনো দলে ভিড়ে কী চাইছেন, সেটাও বুঝতে হবে। দলীয় তরফে ও সরকারি ভাবে অনেক তথ্যই পাচ্ছি। সব মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
|
|
|
|
|
|