পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে কড়া নালিশ জানাল প্রদেশ কংগ্রেস। শাসক দল তৃণমূলের ‘তাণ্ডব’কে দায়ী করে শিন্দের কাছে কড়া রিপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিও জানিয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। তবু সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যে থেকেই কেন্দ্রের যা করণীয়, বিবেচনা করা হবে।
সরকারি অনুষ্ঠান যোগ দিতে রবিবার কলকাতায় এসেছেন শিন্দে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সরকারি কর্মসূচি সেরে সন্ধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শিন্দেকে ৭ পাতার রিপোর্ট দেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। |
সুন্দরবনের উপকূল এলাকা ঘুরে দেখছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
বৈঠকের পরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শুনেছি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে কথা বলব।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। আইনশৃঙ্খলার প্রতিদিন অবনতি হচ্ছে। এটা রাজ্যের বিষয়, আমরা জানি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের মানুষের কিছু আশা আছে। আশা করি, উনি ওঁর সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে যাবতীয় পদক্ষেপ করবেন।”
প্রসঙ্গত, আজ, সোমবার সুন্দরবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ সরকারি কর্মসূচিতে থাকার কথা শিন্দের।
শিন্দেকে দেওয়া প্রদেশ কংগ্রেসের রিপোর্টের মূল নির্যাস শাসক দল তৃণমূলের আধিপত্যের জন্যই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সিপিএম জমানায় রাজনৈতিক সন্ত্রাস ছিল। তৃণমূল জমানাতেও তার পরিবর্তন হয়নি। এবং দুই ক্ষেত্রেই কংগ্রেস সন্ত্রাসের শিকার। রাজনৈতিক সন্ত্রাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, বন্ধ পরবর্তী হিংসার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া কংগ্রেসের ওই রিপোর্ট যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তবে তাঁর পূর্বসূরি পি চিদম্বরমের মতো আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে রাজ্য সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা এ দিন অন্তত শিন্দে করেননি।
রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূল এবং সরকারের আচরণ না-বদলালে পঞ্চায়েত ভোট অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে না। বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস করে ভোটের ময়দান থেকে বিতাড়ন করার চেষ্টা হবে। এই প্রেক্ষিতেই শিন্দের সঙ্গে বৈঠকে এ দিন প্রদীপবাবু এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি রাজ্যের সন্ত্রাস এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আর্জি জানান। কংগ্রেস সূত্রের খবর, শিন্দে নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, তা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রদেশ দফতরের বৈঠকে এ দিন উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন এবং গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ তোলেন দুই বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা এবং শঙ্কর মালাকার। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি দেবব্রত বসু, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবী ঘোষাল ওই বৈঠকে ছিলেন। দার্জিলিঙের জট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পরে শিন্দে বলেন, “দেশে অনেক সমস্যা আছে। দার্জিলিঙেও সমস্যা আছে। আমি বিষয়টি দেখব।” প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) কলকাতার বাইরে থাকায় এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না। |