টাকা খরচের হিসেব চেয়ে এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন জয়রাম
ঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামোন্নয়নে আরও অর্থের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার আগে পুরনো বরাদ্দের হিসেব চেয়ে তাগাদা শুরু করল কেন্দ্র। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ সরাসরি চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখানে গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি বা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় খরচের হিসেব চাওয়ার পাশাপাশি কেন এই সব কাজে তৎপরতার অভাব দেখা দিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে কাজে গতি আনতে মমতাকেই ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
কেন্দ্রে সমর্থন প্রত্যাহারের পর রাজ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে টানাপোড়েন তুঙ্গে। রমেশের চিঠিতেও তারই প্রতিফলন ঘটছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক অবশ্য দাবি করেছে, এর পিছনে রাজনীতি নেই। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় কাজকর্মের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা হয়েছে। সেখানে যে সব ফাঁকফোকর উঠে এসেছে, সেগুলির দিকেই মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জয়রাম। গত ১৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা এই চিঠিটিতে তিনি পশ্চিমবঙ্গে সড়ক যোজনার বেহাল দশার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, রাজ্যের চাহিদা মতো বরাদ্দ মঞ্জুর হওয়া সত্ত্বেও প্রকল্প রূপায়ণে তেমন অগ্রগতি নেই কেন?
জয়রাম এই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার ইতিবাচক মনোভাব নিলে তিনি আরও অর্থ বরাদ্দ করবেন। তবে তাঁর মতে, রাজ্যে এমনিতেই এত কাজ বাকি পড়ে রয়েছে যে আগামী অর্থবর্ষে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষমতাই নেই।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই চিঠির মধ্যে অবশ্য বিশেষ তাৎপর্য দেখছে না রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে তিন-চারটি চিঠিতে জয়রাম আমার এবং আমার দফতরের প্রশংসা করেছেন। এ বার যা পাঠিয়েছেন, তা রুটিন চিঠি। ওই চিঠি পাওয়ার পরে দিল্লি গিয়ে ওঁর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেছি। আমাদের কাজে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খুশিই।” তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, এর আগেও জয়রাম চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছিলেন রাজ্যের কাছ থেকে। একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রেই চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। সেই চিঠিতেই আবার সুব্রতবাবুকে সাধুবাদও দিয়েছিলেন। পরে সুব্রতবাবু দিল্লি গেলে তাঁকে পাশে বসিয়ে তাঁর মন্ত্রকের কাজের প্রশংসাও করেছিলেন।
কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা বিষয়টিকে রুটিন বা নিয়মমাফিক বলতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, রুটিন চিঠি আদানপ্রদান হয় অফিসার স্তরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন নিজে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চিঠি দেন, তার গুরুত্বই আলাদা।
এ বারের চিঠিতে কী লিখেছেন জয়রাম রমেশ? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে গ্রাম সড়ক যোজনায় কাজের ছবিটা মোটেও সুবিধের নয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে ২২,৪৭৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ৯,৪৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪,১২৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তৈরি হয়েছে মাত্র ১২,৪৩৮ কিলোমিটার। অর্থাৎ, অর্ধেক কাজই করে উঠতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ। সাধারণ ভাবে এই প্রকল্পে ১২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। জয়রামের প্রশ্ন, তা হলে বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে কী লাভ? টাকা কেন খরচ হয়নি, এই প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, ২০১০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এডিবি) টাকায় ৬৯৮টি রাস্তা তৈরির কথা ছিল। তা-ও শেষ হয়নি। চিঠিতে ‘মমতা দিদি’র কাছে জয়রামের আর্জি, ‘আপনি ব্যক্তিগত ভাবে এ দিকে নজর দিন। দেখুন, যেন বরাদ্দ টাকা দ্রুত খরচ হয়। গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়।’
জয়রামের দেওয়া তথ্য মানতে নারাজ পঞ্চায়েত দফতর। এডিবি-র টাকায় যে কাজ হওয়ার কথা, সে প্রসঙ্গে বাম জমানার দিকে আঙুল তুলেছেন সুব্রতবাবু। তাঁর আরও বক্তব্য, নতুন জমানায় কেন্দ্রীয় অর্থ পড়ে থাকা তো দূর, রাজ্যই কেন্দ্রের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা পাবে।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তারা কিন্তু বলছেন, চলতি বছরেই ১৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে ৬ হাজার ১৪৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু করার কথা রাজ্যের। কিন্তু ১৪২৫টি রাস্তার মধ্যে মাত্র ৪৩১টি রাস্তার জন্য ঠিকাদার পাওয়া গিয়েছে। সেই কাজ সময়ে করতে না পারলে অবশিষ্ট অংশের ছাড়পত্র এ বছর আর না-ও মিলতে পারে। কাজ সময়ে শেষ হলে আরও ৬ হাজার কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সেই টাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না বলেই মনে করছেন দিল্লির কর্তারা।
মহাকরণ সূত্রের খবর, জয়রামের চিঠিটি মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেটি দেখে প্রয়োজনে কেন্দ্রকে জবাব দিতেও বলা হয়েছে পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেছেন, “এই তো সবে টাকা এল। মাসখানেকের মধ্যে কাজ শুরু হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও জানেন, এ সব কাজ রাতারাতি হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.