সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নদীপথে অনুপ্রবেশের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। দু’দিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে এসে রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে তোলার উপরে তিনি জোর দেন। কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও।
গত মাসে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এ রাজ্যে গুন্ডারাজ চলছে বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। এই প্রশ্নের জবাব কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি। রিপোর্ট পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”
বিকেলে ফের ধামাখালি হয়ে সরবেড়িয়ায় ফিরে হেলিকপ্টারে কলকাতা আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ, সোমবার তাঁর ফ্রেজারগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক করার কথা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে রাজ্যে অনুপ্রবেশ ও পাচার বেড়েছে বলে মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা জলপথকে ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ ও পাচারকারীরা সক্রিয় হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। উপকূল নিরাপত্তায় বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়েও চিন্তিত মন্ত্রক। দিন পনেরো আগে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর মহানির্দেশক সুভাষ যোশি রাজ্যে এসেছিলেন। সে সময়ে দফতরের আধিকারিকেরা তাঁকে সীমান্ত এলাকার অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্টও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দিয়েছেন যোশি। সেই রিপোর্ট নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন শিন্দে। |
এ দিন কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে দুপুর ১২টা নাগাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে নামেন সন্দেশখালির সরবেরিয়া হাইস্কুল মাঠে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএসএফের এডিজি বি ডি শর্মা-সহ পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকেরা। হেলিপ্যাড থেকে গাড়িতে ১০ কিলোমিটার দূরের ধামাখালিতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেখান থেকে বিএসএফের স্পিডবোটে সুন্দরবন সফর শুরু করেন শিন্দে।
মূলত, নদীপথেই সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকা ঘুরে দেখেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ইছামতী, বিদ্যাধরী, কালিন্দি, হাঁড়িভাঙা, রায়মঙ্গল দিয়ে ঘুরে বেড়ায় স্পিডবোট। সামশেরনগরের কাছে বিএসএফের ভাসমান ক্যাম্পেও যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানেই বিএসএফ, উপকূলরক্ষী, নৌবাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সমন্বয়ের উপরে জোর দেন তিনি। নিরাপত্তা নিয়ে পরিকাঠামোগত সমস্যার বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। দিল্লি ফিরে তিনি এ নিয়ে আলোচনারও আশ্বাস দিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই ক্যাম্পে পৌঁছনোর আগে সামশেরনগরেরই ঝাড়খাল খাঁড়িতে স্পিডবোট ঢুকলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নেমে পড়েন পাড়ে। দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। তাঁদের সমস্যা, তাঁরা কতটা নিরাপদ, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
ফেরার পথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেখে আসেন বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা তালপট্টি এলাকা এবং কালিন্দি-রায়মঙ্গল নদীর মোহনা (টি-জংশন)। ফের ধামাখালিতে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সুন্দরবন উপকূলের সৌন্দর্য তাঁর ভাল লেগেছে। উপকূলের নানা সমস্যা তিনি খতিয়ে দেখছেন। |