|
|
|
|
প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে আমিনা এ বার মাধ্যমিকে |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
দৃষ্টিশক্তি কমলেও কমেনি মনোবল। সেই জোরেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলছে তমলুক শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ধলহরা গ্রামের দিন মজুর পরিবারের মেয়ে আমিনা খাতুন। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চেন্নাইয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আয়োজিত প্যারা অলিম্পিকে ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোক সাঁতার বিভাগে সোনা জিতেছিল আমিনা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসার আগে অনেক প্রতিবন্ধকতাই জয় করতে হয়েছে তাকে। বাড়ি থেকে হেঁটে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে, পাশের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে তার শুরু। প্রতিবেশী দুই সহ-পাঠিনী আর্থিক অনটনে প্রাথমিকের চৌকাঠ পেরোনোর আগেই পড়াশুনো বন্ধ করে দিলেও লড়াই জারি রেখেছিল সে। বাবা শেখ আলাউদ্দিন, পেশায় দিনমজুর। মা রুকিয়া বিবি গৃহবধূ। এক চিলতে আট ভাইবোনের সঙ্গে বাস। |
|
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আমিনা।—নিজস্ব চিত্র। |
ছোটবেলা থেকেই আমিনার দু’চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ। বইয়ের পাতার অক্ষরগুলোও চিনতে কষ্ট হত আমিনার। কিন্তু ছিল পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ। শুনে শুনেই পড়া শুরু আমিনার। প্রত্যন্ত গ্রামের আর পাঁচটা শিশুর মত প্রায় দৃষ্টিহীন আমিনাকে ভর্তি করা হয় দু’কিলোমিটার দূরের মথুরী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাড়ার সহপাঠীদের সঙ্গে হেঁটে প্রাথমিক স্কুল যেত সে। ক্লাসে শিক্ষকদের পড়া শুনে শুনে বোঝার চেষ্টা করত, আর সহপাঠীদের সাহায্যে খাতায় লিখে নিত। এই ভাবেই চলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো। এর পর তমলুকের নিমতৌড়িতে একটি প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় তাকে। বছর দুয়েক আগে অপারেশনে দৃষ্টিশক্তি কিছু বাড়লেও, এখনও লেখার অক্ষরগুলো বুঝতে অসুবিধা হয়। ইচ্ছা, এ বার মাধ্যমিকে নিজের হাতে লিখে পরীক্ষা দেওয়ার। চলছে তারই প্রস্তুতি। আমিনার কথায়, “ভালো রেজাল্ট আমায় করতেই হবে।” স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা মহাশ্বেতা বাসুলি মাইতি বলেন, “দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হলেও পড়াশোনায় তীব্র আগ্রহ আমিনার। মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে বলেই আশা করছি।” |
|
|
|
|
|