|
|
|
|
গায়ে আগুন, আত্মঘাতী ঠিকা সংস্থার কর্মী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
ঠিকাদারের অফিসের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হলেন তাঁরই সংস্থার এক কর্মী। শনিবার বিকেলে হলদিয়ার রানিচকে শেখ মুজফ্ফর নামে ওই হলদিয়া বন্দরের ওই ঠিকাদারের অফিসের সামনে নিজের গায়ে ডিজেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন শেখ শানোয়ার আলি (৪০)।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাঁকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি নার্সিংহোমে। রবিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে পুলিশ তাঁর জবানবন্দি নিয়েছে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বকেয়া বেতন চাওয়ায় মুজফ্ফর শানোয়ারকে অফিসে বেঁধে রেখে মারধর করেন। তার জেরেই ওই ঘটনা। মুজফ্ফর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নার্সিংহোমে শানোয়ারকে ভর্তির ব্যবস্থাও করেন ওই ঠিকাদার।
এক সময় প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের ছায়াসঙ্গী ছিলেন মুজফ্ফর। সিপিএমের টিকিটে জিতে হলদিয়া পুরসভার কাউন্সিলরও হন। তবে গত পুরভোটের সময় মুজফ্ফর তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামেন। তখন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এবিজি-বিতাড়ন পর্বে এবিজির বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠকও করেছিলেন হলদিয়া বন্দরের এই ঠিকাদার। এ দিনও মুজফ্ফর বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গেই আছি।” চিরঞ্জীবপুরের বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক শানোয়ার দীর্ঘদিন ধরে মুজফ্ফরের সংস্থায় কাজ করতেন। এক সময় লক্ষ্মণ শেঠের গাড়িও চালিয়েছেন তিনি। তবে, শানোয়ারও ইদানীং তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছিলেন বলে এলাকা সূত্রের খবর। |
|
মেয়ে কোলে স্বামীহারা ওহিদা বিবি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র |
শানোয়ারের স্ত্রী ওহিদা বিবির অভিযোগ, “৬ মাস আমার স্বামীকে বেতন দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে প্রাপ্য হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সংসারে চরম অনটন চলছিল। দিন তিনেক আগে বকেয়া টাকা চাইলে ওকে বেঁধে মারধর করা হয়।” তাঁর দাবি, শাশুড়ি সালেয়া বিবি ওই অফিসে গেলে মুজফ্ফর তাঁর হাতে আট হাজার টাকা দিয়ে শানোয়ারকে ছেড়ে দেন। ওহিদা বলছেন, “অপমান সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছেন আমার স্বামী। আমাদের সংসারটা ভেসে গেল। তিন সন্তানকে কী ভাবে মানুষ করব জানি না।” হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি এ দিন সকালে বলেছিলেন, “আমাদের কাছে এই বিষয়ে কোনও খবর নেই।” রাতে হলদিয়া থানা সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে পুলিশ দেখা করে। রাত পর্যন্ত পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। মারধরের অভিযোগ মানেননি মুজফ্ফর। তাঁর বক্তব্য, “আমার কাছে শানোয়ারের কোনও পাওনা ছিল না। কাজ না করেও টাকা চাইছিল বলে বকাবকি করেছিলাম। তবে, মারধর করিনি। সংসারে অনটনের কথা জেনে ওর মাকে আট হাজার টাকাও দিয়েছি।” শানোয়ারের আর্থিক অনটনের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার। তাঁর মন্তব্য, “এমন ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। তবে ওই শ্রমিক আইনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন বা শ্রম কমিশনে যেতে পারতেন।” লক্ষ্মণ শেঠও বলেন, “শানোয়ারের এই পরিণতি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” |
|
|
|
|
|