কাপলিং ছিঁড়ে বিপত্তি
সেতুতে ট্রেন ফেলে রেখেই ছুট লাগাল ইঞ্জিন
ঠাৎই ঝাঁকুনি দিয়ে সেতুর উপরে থেমে গেল কলকাতামুখী জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস।
কিন্তু সব কামরা পিছনে ফেলে শুধু ইঞ্জিন চলতে থাকল আপন মনে।
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল যাত্রীদের মধ্যে। ট্রেন থেকে নেমে পড়ার জন্য শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি। তবে কারও চোট-আঘাত লাগার খবর নেই। রবিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে বালিঘাট স্টেশনে ঢোকার মুখে। কয়েকটি কামরা সবে প্ল্যাটফর্মে ঢুকেছে। বেশির ভাগ কামরা তখনও সেতুর উপরেই। আর তখনই বিপত্তি।
গোটা ট্রেনের সঙ্গে ইঞ্জিনের এই আকস্মিক বিচ্ছেদ কেন?
রেল-কর্তৃপক্ষ জানান, ট্রেনটির ইঞ্জিন এবং কামরার ‘কাপলিং’ আচমকা ছিঁড়ে গিয়েছিল। ছিঁড়ে যায় ব্রেকপাইপও। অটো-ব্রেক প্রযুক্তিতে দ্রুত থেমে যায় জম্মু-তাওয়াই। ওই দুর্ঘটনার জেরে ডানকুনি-শিয়ালদহ ডাউন লাইনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বাতিল করা হয় দু’টি লোকাল ট্রেনও। যান্ত্রিক ত্রুটি, নাকি অন্য কোনও কারণে এটা ঘটল, তা দেখতে তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটিতে রেলের ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, অপারেশনস বিভাগের অফিসারেরা থাকবেন বলে জানান শিয়ালদহের ডিআরএম সুচিত্র দাস।
ঠিক কী ঘটেছিল?
বালিঘাটে জম্মু-তাওয়াইয়ের ইঞ্জিন জোড়ার কাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র
মদনলাল শর্মা নামে বাতানুকূল বি-১ কামরার এক যাত্রী বলেন, “তখন বিকেল ৪টে। জিনিসপত্র গুছিয়ে নামার জন্য তৈরি হয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটা থেমে গেল। কয়েকটা আলোও নিভে গেল। ভেবেছিলাম, সিগন্যালে সমস্যা হয়েছে। পরে শুনলাম, ইঞ্জিনটা নাকি ছিঁড়ে এগিয়ে গিয়েছে! বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেল। আরও জোরে দৌড়নোর সময় এটা হলে ট্রেনটা তো উল্টেও যেতে পারত!” ট্রেন থেমে যাওয়ায় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু ট্রেন ফেলে ইঞ্জিন এগিয়ে গিয়েছে শুনে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। যাত্রীরা জানান, বালিঘাট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটির মাত্র কয়েকটি কামরা পৌঁছেছিল। বাকি কামরাগুলি ছিল সেতুর উপরে। সেই সব কামরার লোকজন দিশাহারা হয়ে যান। ট্রেনটির পিছন দিকের এস-১ কামরার যাত্রী অতনু চক্রবর্তী বলেন, “সকলে হুড়োহুড়ি করে ট্রেনের ভেস্টিবিউল দিয়েই সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করতে থাকেন। বয়স্ক যাত্রীরা অবশ্য নিজেদের সিটেই বসে ছিলেন। রেলের তরফে কোনও ঘোষণাও ছিল না। কোনও মতে প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছই।”
রেল সূত্রের খবর, ২২টি কামরার ট্রেনটি জম্মু থেকে রওনা হওয়ার পরে মোগলসরাই স্টেশনে ইঞ্জিন বদলানো হয়েছিল। বালিঘাট স্টেশনের কাছে তার গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। কাপলিং ছিঁড়ে যাওয়ার পরে ইঞ্জিন সেগুলিকে ফেলে প্রায় ২০০ মিটার এগিয়ে যায়। ওয়াকিটকিতে তখনই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গার্ড। ইঞ্জিনটি ফের পিছন দিকে ফিরে এলেও ভাঙা কাপলিং জোড়া লাগেনি। ইঞ্জিনটিকে দমদমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে নতুন ইঞ্জিন আনিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কলকাতা স্টেশনের দিকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসকে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। রেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ট্রেন জোরে ছুটলেও কাপলিং ছিঁড়ে গেলে আধুনিক অটো-ব্রেক প্রযুক্তিতে তার থেমে যাওয়ার কথা। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। সাম্প্রতিক কালে রাজধানী, দুরন্ত এক্সপ্রেসেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এ দিনও ট্রেনটি থেমে গিয়েছিল অটো-ব্রেক প্রযুক্তির দৌলতেই। রেল সূত্রের খবর, আগেকার স্ক্রু-কাপলিং প্রযুক্তির বদলে এখন নয়া প্রযুক্তির কাপলিং ব্যবহার করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা ঘটছে। কী ভাবে ওই সব কাপলিং ‘ত্রুটিমুক্ত’ করা যেতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করছে রেলের গবেষণা সংক্রান্ত বিভাগ (আরডিএসও)।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.