মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুঃখ, তাঁহার পূর্বসূরি বামপন্থীরা তাঁহার জন্য শূন্য রাজকোষ রাখিয়া গিয়াছেন। কেন তিনি অন্যের পাপের বোঝা বহন করিবেন, অবসর পাইলেই তিনি সেই প্রশ্ন করিয়া থাকেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ লইয়া ব্যস্ত, ফলে অন্য রাজ্যে কী ঘটিতেছে, সেই খবর রাখিবার সুযোগ তাঁহার হয় না। বিহারের খবরও নহে। ২০০১-০২ সালে, বিহারে যখন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন সেই রাজ্যের ঋণের পরিমাণ রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫৩ শতাংশ ছিল। অবস্থা কতখানি মারাত্মক, বুঝিতে একটি তুলনা প্রয়োজন। ২০০৯-১০ সালে পশ্চিমবঙ্গে এই অনুপাত ছিল ৪২.৮ শতাংশ। অর্থাৎ, নীতীশ কুমার যে ঋণের বোঝা মাথায় লইয়া ক্ষমতায় আসিয়াছিলেন, বামপন্থীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর তাহার অধিক ভার চাপান নাই। অতঃপর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান: একাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনার সময়কালে গোটা দেশের মধ্যে বিহারের আর্থিক বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। গড়ে বার্ষিক ১১.৯৫ শতাংশ। ঋণের বোঝা? এখন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাত্র ২৪ শতাংশ।
বিহারের কাহিনিটি যদি পিছাইয়া পড়া রাজ্যের উত্থানের উপাখ্যান হয়, তবে যে রাজ্যগুলি বহু দিন যাবৎ অগ্রসর হিসাবেই গণ্য, সেই রাজ্যগুলির আরও উন্নতির সংবাদও আছে। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন জানাইয়াছে, প্রসূতিমৃত্যুর হার কমাইয়া আনিবার ক্ষেত্রে কেরল, তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্র ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাইয়া গিয়াছে। ১৯৯৩ সালে তামিলনাড়ুতে প্রসূতিমৃত্যুর হার ছিল প্রতি এক লক্ষ প্রসবে ৩৮০ জন। ২০০৭-২০০৯ সালের মধ্যে সংখ্যাটি কমিয়া ৯৭ হইয়াছে। কেরলে এই হার ৮১, মহারাষ্ট্রে ১০৪। তামিলনাড়ুর উদাহরণটি আরও একটি কারণে উল্লেখযোগ্য সেই রাজ্যে ৯৯ শতাংশ প্রসবই প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, এবং তাহারও দুই-তৃতীয়াংশ প্রসব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হইয়াছে। ইহা বিপ্লবই বটে। গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি এই বিপ্লবের বড় হাতিয়ার হইয়াছে।
প্রায় ৩০ শতাংশ প্রসব এই কেন্দ্রগুলিতে হইয়াছে। এই উন্নতি হাওয়ায় হয় নাই, রাজ্য সরকার সুনির্দিষ্ট অভিমুখে নীতি প্রণয়ন করিয়াছে, তাহাকে অনুসরণ করিয়াছে।
অতঃপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমীপে একটি প্রশ্ন তিনি কী মনস্থ করিলেন? বামফ্রন্টের অপশাসনের দোহাই দিয়া আগামী সওয়া তিন বৎসর কাটাইয়া দিবেন, না কি কোনও ভাবে রাজ্যের উন্নতির কথা ভাবিবেন? যে রাজ্যগুলি আগে পারিত, তাহারা এখনও পারে। যে রাজ্যগুলি আগে কেবলই ফেল করিত, তাহারাও এখন উন্নতি করিতেছে। পশ্চিমবঙ্গের যে আর লাস্ট বেঞ্চেও ঠাঁই হইবে না! আর্থিক প্রতিকূলতার সম্মুখেও যে ঘুরিয়া দাঁড়ানো সম্ভব, নীতীশ কুমার তা প্রমাণ করিয়াছেন। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেও আন্তর্জাতিক স্তরে লইয়া যাওয়া সম্ভব, তামিলনাড়ু দেখাইয়াছে। শিক্ষা, মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে কেরল দীর্ঘ দিনের উদাহরণ। মমতাদেবী কোনও একটি পথে হাঁটিয়া দেখুন। পূর্বসূরিদের দোষ দিলে রাজনীতি হয় বটে, উন্নয়ন হয় না। |