সম্পাদকীয় ১...
পরিবর্তনই বটে!
র্মঘট বা বনধ যা হওয়ার হইয়া গিয়াছে। কিন্তু বিরোধীদের ডাকা ওই কর্মবিরতির ‘আন্দোলন’-এর দিন কাজে যোগ না দেওয়ার দায়ে জেলায়-জেলায় যে তাণ্ডব চালানো হইতেছে, তাহা ন্যক্কারজনক। কোথাও কাজে না-আসার অপরাধে পঞ্চায়েতের কর্মীর মাথায় ছোরার আঘাত করিয়া কান কাটিয়া দেওয়া হইয়াছে। কোথাও প্রধান শিক্ষককে স্কুলের গেট বন্ধ রাখার দায়ে প্রহার করা হইয়াছে। কোথাও সিটু কর্মীকে লোহার রড দিয়া মাথায় ও চোখে আঘাত করা হইয়াছে। এই অনাচারগুলির পিছনে শাসক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা সহজবোধ্য। ইহা এক অতি বিপজ্জনক সংকেত। সরকারের ‘খুলিয়া রাখার সিদ্ধান্ত’ উপেক্ষা করার দায়ে এ ধরনের ‘শাস্তি’ বুঝাইয়া দেওয়া একটি ফ্যাসিবাদী প্রবণতা। এবং প্রবণতাটি কেবল ‘বনধ-ধর্মঘট’ উপলক্ষে নয়, অন্যান্য উপলক্ষেও (যেমন গার্ডেনরিচে অরাজকতা সৃষ্টি ও পুলিশ খুনের ঘটনায়) প্রকাশ পাইতেছে। এই প্রবণতারই অভিব্যক্তি উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁয় ছয়ঘড়িয়া থানায় চড়াও হইয়া শাসক দলের ঝান্ডাবাহীদের যথেচ্ছ হামলা, ভাঙচুর, পুলিশকে মারধর। এই ঝটিকাবাহিনী প্রধানত স্থানীয় দুর্বৃত্ত ও সমাজবিরোধীদের লইয়া গঠিত, পুলিশের খাতায় যাহাদের অনেকেরই নাম থাকিলেও পুলিশ যাহাদের স্পর্শ করে না। স্বয়ং কলিকাতার পুলিশ কমিশনারকে যদি শাসক দলের বিরাগভাজন হইয়া বদলি হইতে হয়, তবে থানা স্তরের পুলিশ প্রশাসন কেমন করিয়া দুষ্টের দমনে তৎপর হইবে?
এ ভাবে দলীয় ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রিত দুষ্কৃতীরা অব্যাহতি পাইয়া গেলে রাজ্যে আইনের শাসন কথাটি হাস্যকর হইয়া দাঁড়াইতেছে। অবিলম্বে লাগাম না টানিলে সর্বত্র এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হইবে। শাসক দলের অভিপ্রায় না মানিলে যদি জনসাধারণের বিভিন্ন অংশ নিগ্রহ ও লাঞ্ছনার শিকার হন, তবে তো একদলীয় স্বৈরাচারের শ্বাসরোধকর পীড়নভূমি এই রাজ্য। জনসাধারণ কি এই পরিণতির কথা ভাবিয়া সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনকে অপসারিত করিয়াছিলেন? বস্তুত, পাড়ায়-পাড়ায় শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের ক্রিয়াকলাপ দেখিলে অনেক সময়েই রাজনৈতিক কর্মী হইতে গুন্ডা-মস্তানদের পার্থক্য করা যাইতেছে না। সকলেই হাতে মাথা কাটিতে ব্যস্ত। দলের ইচ্ছা অগ্রাহ্য করিলে জবরদস্তি করিয়া, জরিমানা আদায় করিয়া, কখনও বা এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়া জনসাধারণকে সন্ত্রস্ত করা হইতেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ কিংবা নিরাপত্তার আবেদন জানাইয়া লাভ হইতেছে না, কারণ পুলিশ নিজেই হয়তো শাসক দলের দুর্বৃত্তদের ভয়ে কম্পমান। ব্যতিক্রম সেই সকল অফিসার ও কর্মী, যাঁহারা দলদাসে পরিণত হইতে দ্বিধা করেন নাই। বনগাঁয় শাসক দলের ভৈরবদের দ্বারা আক্রান্ত ও প্রহৃত হইয়াও যে পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করে নাই, তাহাতেই সেই প্রমাণ আছে। তাণ্ডবকারীরা নাকি সিপিএম পঞ্চায়েত-প্রধানকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতারের দাবিতে থানা অভিযান করে। এ ভাবে কি কোনও দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়, না কি নিষ্পত্তির দাবিতে আইন নিজের হাতে তুলিয়া লওয়া যায়?
এক দিকে শাসক দলের তাণ্ডবের সামনে অসহায় রাজ্যবাসী, অন্য দিকে তাহার দায় লইতে নারাজ দলীয় নেতৃত্ব। চিহ্নিত দলীয় কর্মী বা দুর্বৃত্তরা তাণ্ডব চালাইলেও দলীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ‘অন্য দলের ষড়যন্ত্র’ বলিয়া তাহার দায় এড়াইতেছেন। তাঁহাদের এই হাস্যকর প্রয়াস যে বিশ্বাসযোগ্য নয়, তাহা বুঝিবার মেধাও কি তাঁহাদের নাই? কখনও দলের প্রথম সারির মন্ত্রী কান কাটিয়া লওয়ার ঘটনাকে ‘ছোটখাটো ব্যাপার’ বলিয়া ঘটনা ধামা-চাপা দিতেছেন, কখনও দলের সর্বময়ী কর্ত্রী ‘ছোট-ছোট ছেলেদের ভুল’ ইত্যাদি সাফাই গাহিয়া দলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের দুর্বৃত্তায়নকে উৎসাহিত করিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গ এক গভীর ও অতলান্ত খাদের দিকে অগ্রসর হইতেছে। বামফ্রন্ট এক ভাবে প্রশাসনের আত্মমর্যাদা নষ্ট করিয়াছিল, তাহার উত্তরসূরিরা আর এক ভাবে প্রশাসনের মেরুদণ্ডই ভাঙিতে ব্যস্ত। ঘুরিয়া দাঁড়ানোর সময় এখনও চলিয়া যায় নাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দল তথা সরকারের নায়কনায়িকাদের, বিশেষত নেত্রীকে আপন অনুগামীদের একাংশের বিরুদ্ধেই ঘুরিয়া দাঁড়াইতে হইবে। কঠিন কাজ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.