মাতৃভাষা মহোৎসব পালিত গুয়াহাটিতে
তিনদিন ব্যাপী মাতৃভাষা মহোৎসব পালিত হল গুয়াহাটিতে। উৎসবে, মাতৃভাষার সঙ্কট সম্পর্কে সাহিত্যিক, বিদ্দজ্জনেরা একবাক্যে বলেন, সংগ্রাম করে ভাষাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কালের নিয়মে, সমাজের নিয়মেই কোনও ভাষা সমৃদ্ধতর হয়, কোনও ভাষার মৃত্যু ঘটে। একদিনের মাতৃভাষা দিবস, ভাষাকে অক্সিজেন জোগাবে না। ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার চর্চা এবং সরকারের আন্তরিক আগ্রহ ব্যতীত ভাষা বাঁচাবার উপায় নেই। মহোৎসবের উদ্যোক্তা রাজ্য সংস্কৃতি দফতর, ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক মঞ্চ, সাহিত্য আকাদেমি।
রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ তথা প্রাবন্ধিক উষারঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “বিশ্বে ভাষার মাৎসান্যায় চলছে। ব্যবহারিক প্রয়োজনেই দেশের মানুষ আঞ্চলিক ও উপজাতিয় ভাষার চেয়ে হিন্দি, ইংরাজির দিকে ঝুঁকছেন। ছোট ভাষার সংরক্ষণ তাই আশু প্রয়োজন।” উত্তর-পূর্বে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান স্বামী সাধনানন্দ বলছিলেন, “প্রথম যখন বিজ্ঞানচর্চা থেকে ধর্মের পথে এলাম, মনে ভয় ছিল, সংস্কৃত ভিন্ন ভগবান হয়ত অন্য ভাষা বোঝেন না। আল্লার কাছে পৌঁছাবার মাধ্যম হয়ত কেবলই আরবি। গডকে পেতে গেলে লাতিন জানতেই হবে। তাই টোলে সংস্কৃত পড়া শুরু করি। আজ, গোটা দেশ ও বিদেশের বহু স্থান ভ্রমণ করে বুঝেছি, যদি মানুষ তাঁর শিকড়ের ভাষাকে ভাল না বাসে, তবে ভগবানেরও ক্ষমতা নেই সেই ভাষাকে টিঁকিয়ে রাখেন। ভগবানের আপন ভাষা সংস্কৃত, আরবি, লাতিনরাই আজ সবচেয়ে সঙ্কটে।”
অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি কনকসেন ডেকা ও বিজয়কৃষ্ণ নাথ ‘একুশে সম্মান’ পেলেন। ডেকা বলেন, ‘‘রাষ্ট্রভাষা হিন্দিও হিন্দিও ইংরাজির দাপটে কোনঠাসা। আমাদের মগজের ভিতরে বাস করা ঔপনিবেশিকতাই আমাদের শেখায় ইংরাজি বিনা জীবন বৃথা। অথচ জাপান, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশ ইংরাজিকে সচেতনভাবে দূরে ঠেলেও এগিয়ে চলছে।” তাঁর আকুতি, “ভারতে সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বাঙালি। তারা যেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভুলে গিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহের সঙ্গে আপোস না করে। তাহলে, গোটা দেশের পক্ষে তা দুর্ভাগ্যজনক হবে।” অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের মতে, দেখতে হবে, কেন নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যাঁরা ভাষা দিবসের আয়োজন করেন, তাঁদের কজন, সন্তানকে, নিজের পড়া স্কুলেই পড়তে পাঠিয়েছেন?” তাঁর খেদ, “আজকের বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে পাল্টা লড়াইতে নেমে একজোট হওয়া যায়। অথচ এপারের বাঙালি, অসমিয়া, মণিপুরি, খাসি, বড়োরা আজও একজোট হতে পারলাম না।” দেশের খ্যাতনামা সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ সুবিমল ভট্টাচার্য বা সাহিত্যিক সিদ্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “নিজের ঘরে মায়ের ভাষার মর্য্যাদা দেওয়া হয়নি। কিন্তু, আজ বিদেশে গেলে আফসোস হয়, কেন সংস্কৃত ভাষা ভাল করে শিখলাম না।” সাহিত্যিক মাইনি মহন্ত বলেন, “ইউনেসকোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় খাসি, মিসিং, দেউড়িসহ উত্তর-পূর্বের ৮০টি ভাষা রয়েছে। সরকার ও অসম সাহিত্য সভা মাতৃভাষা বাঁচাতে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.