অভিযুক্ত শহরেই
এক বছর পার, তবু অধরাই চিটফান্ড-কর্তা
মানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে প্রায় এক বছর আগে লাটে ওঠা ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থার কর্তাদের এত দিনেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারল না। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা পলাতক। অথচ আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে ওই সংস্থার প্রধান কর্তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা গিয়েছে। আমানতকারীদের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ নিজের মুখে স্বীকারও করে নিয়েছেন তিনি।
দ্রুত টাকা বাড়ানোর লোভে এই ধরনের সংস্থায় টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হওয়ার অনেক ঘটনাই নিকট অতীতে পরপর সামনে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই সংস্থাগুলি সম্পর্কে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাতেই তাদের রমরমা ব্যবসার জাল ছড়াতে সুবিধা হয়েছে। পরোক্ষে তাদের টাকা আত্মসাৎ করা সহজ হয়েছে। তা না-হলে শহরে থাকা সত্ত্বেও এক জন অভিযুক্তকে এক বছরের বেশি সময় ধরে গ্রেফতার করা যাবে না কেন? গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার পল্লবকান্তি ঘোষ অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমাদের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টে চিটফান্ড নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। থানাগুলিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ থাকলে জানতাম। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কলকাতায় তেমন কোনও সংস্থা রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।”
গত বছরের এপ্রিল মাস নাগাদ আমানতকারীদের অন্তত ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাজ্য জুড়ে নিজেদের ২৪টি শাখার ঝাঁপ বন্ধ করে দেয় ‘সিয়া রাম ইনফ্রাটেক লিমিটেড’ (আ হাউজ অফ সিয়া-রাম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড) নামে ওই সংস্থা। সংস্থাটির কর্পোরেট অফিস ছিল বাগুইআটির কাছে রঘুনাথপুরে। আর আঞ্চলিক কার্যালয় ছিল রানিকুঠিতে। কলকাতা, আরামবাগ, আসানসোল, মেচেদা, এগরা, কাঁথি, ঘাটাল, আলিপুরদুয়ার, বরাকর, চন্দ্রকোণা, মালদহের মতো ২৪টি জায়গায় ছিল শাখা। প্রত্যেকটিতেই এখন তালা। ১০ এপ্রিল কলকাতার কয়েকটি দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়, ১১৯ দিনের মধ্যে সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তা হয়নি। গা ঢাকা দেন সংস্থার কর্তারা।
ওই সংস্থায় কেউ টাকা রাখতে শুরু করেছিলেন ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য, কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য, কেউ আবার নতুন ব্যবসা শুরু করতে। বেশির ভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত, খেটে খাওয়া মানুষ। ৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এঁদের জমা টাকা দু’গুণ, তিন গুণ করে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সুদ দেওয়ার কথা ছিল ১৪% হারে। আচমকা সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরে কর্তাদের নাগালে না-পেয়ে এজেন্টদের মারধর করেন বিভিন্ন জেলায় আমানতকারীরা।
ভয়ে কয়েক মাস পালিয়ে বেড়িয়েছেন পারাদ্বীপ মণ্ডল, স্বপনকুমার গড়াই, সত্যপ্রিয় রায়চৌধুরী, নিজাম আলি, আশিস পয়রা, রত্না রায়চৌধুরীর মতো বহু এজেন্ট। তার পর তাঁরা গত বছর জুলাই মাসে বরাহনগর থানায় এবং ভবানীভবনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত সংস্থার কোনও কর্তা ধরা পড়েনি।
আনন্দবাজারের তরফ থেকে টেলিফোনে ধরা গিয়েছিল সংস্থার চেয়ারম্যান অমৃতেন্দু ভট্টাচার্যকে। তিনি জানান, বরাহনগরে নিজের বাড়ি ছেড়ে তিনি আপাতত বাগুইআটি থেকে কালিন্দীর মধ্যে কোনও একটি জায়গায় আত্মগোপন করে আছেন। তাঁর কথায়, “অনেকের টাকা মার গিয়েছে। এক বন্ধুকে সাহায্য করতে গিয়ে আমি এই চক্রের মধ্যে জড়িয়ে গিয়েছি। সেই বন্ধুই এই সংস্থা খুলেছিল, কিন্তু এ রাজ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিল না বলে আমিই বেঙ্গালুরু থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এনেছিলাম। তখন ও আমাকে চেয়ারম্যান করে সামনে নিয়ে আসে। নিজে পিছন থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করে।”
অমৃতেন্দুবাবুর আরও দাবি, “আমার সেই বন্ধুই সংস্থার সব অ্যাকাউন্ট থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে টাকা নিজস্ব অ্যাকাউন্টে নিয়ে যায়। তার পরে সেই টাকায় অন্য ব্যবসা চালু করে দেয়। ফেঁসে যাই আমরা। জানি না কোথা থেকে টাকা জোগাড় হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.