শনিবার গার্ডেনরিচ থেকে ধৃত মহম্মদ আসলাম ও মহম্মদ মুস্তাফার বিরুদ্ধে এ বার পুলিশকেই অপহরণের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। ধৃত দু’জনেই গার্ডেনরিচের তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার সঙ্গী। গত ৮ জানুয়ারি গার্ডেনরিচে কতর্ব্যরত পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওই দুজনকে গ্রেফতার করেছিল গার্ডেনরিচ থানা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা শুধু পুলিশকে মারধর করা বা হুমকিই দেয়নি, ওই পুলিশ দলকে অপহরণ করে রামনগর মোড়ের বরো অফিসে আটকে রাখে মুন্না ও তার দলবল। পুলিশ জানতে পেরেছে, অপহরণের নেতৃত্বে ছিল মহম্মদ আসলাম ও মহম্মদ মুস্তাফা। তাই তাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আলিপুর আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, ঘটনার দিন মুন্না ওই বরো অফিসে উপস্থিত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধেও অপহরণের মামলায় অভিযোগ আনা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীকে খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত বরো চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা মুন্না। ঘটনার দু’দিন পর থেকেই তিনি পলাতক।
পুলিশ সূত্রে খবর, জানুয়ারি মাসের আট তারিখ বন্দর এলাকার বিভিন্ন বেআইনি নির্মাণের খোঁজ করতে বন্দর এলাকায় যায় পুলিশের একটি বিশেষ দল। অভিযোগ, গার্ডেনরিচের আলিফনগরে বিভিন্ন বেআইনি নিমার্ণের ছবি তুলছিলেন তাঁরা। টিম। ওই সময়েই মুন্নার দলবল তাঁদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, ওই দলে প্রায় ৬০-৭০ জন ছিল। যার নেতৃত্বে ছিল ধৃত আসলাম ও মুস্তাফা। অভিযোগ, বন্দর এলাকার সাব ইনস্পেক্টর সৌরভ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশের ওই দলটিকে কার্যত আলিফনগরে আটকে রেখে পরে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া পাঁচশো মিটার দূরের রামনগর মোড়ের ১৫ নম্বর বরো অফিসে। এক পুলিশকর্তার দাবি, ওই অফিসে তখন উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং বরো চেয়ারম্যান, তৃণমূল নেতা মুন্না। সেখানেই সাব ইনস্পেক্টর সৌরভ ঘোষ-সহ পুলিশের ওই দলটিকে প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। অভিযোগ, মুন্না নিজেই ওই পুলিশকর্মীদের আটকে রেখে চূড়ান্ত অপমান করেন। এমনকী পুলিশকর্মীদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে ছবি তুলে রেখে ভয়ও দেখান মুন্না ও তাঁর দলবল। পুলিশ জানতে পেরেছে মুন্না থাকলেও ওই ঘটনার নেতৃত্বে ছিল আসলাম ও মুস্তাফা। আরও অভিযোগ, সে দিনের ঘটনার খবর পেয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বরো অফিসে পৌঁছে পুলিশের পাশে না দাঁড়িয়ে দলীয় কর্মীদেরই পাশে দাঁড়ান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পশ্চিম বন্দর থানার ওসি এবং তাঁর সহকর্মীদের হুমকি দিয়ে বলেন, “মুন্না শুধু কাউন্সিলর নন, বরো চেয়ারম্যানও। তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করলে মুন্নার বাড়িতে সান্ত্রীর কাজ করানো হবে। তখন মুন্নাকে স্যালুট করতে হবে পুলিশকেই।” এ সব শুনে তখনকার মতো খালি হাতে ফিরে আসতে হয় পুলিশকে। পরে উপর মহলের নির্দেশে পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর সৌরভ ঘোষ দায়সারা ভাবে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন পশ্চিম বন্দর থানায়।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিক তদন্তের পরে ওই ঘটনায় পুলিশকর্মীদের মারধর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধাদানের অভিযোগের পাশাপাশি অপহরণের অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। ধৃতদের রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়।
অন্য দিকে, সিআইডি-র একাংশ জানতে পেরেছে মুন্না বিদেশে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, মুন্না এবং মোক্তারের পাসপোর্টের ব্যাপারে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও পাসপোর্ট মেলেনি। আদৌ তাঁদের পাসপোর্ট রয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সিআইডি-র। |