বৃহস্পতিবার বারবেলায় ছোটখাটো সুনামি দেখল শেয়ার বাজার। শুধু ভারতে নয়। ওই দিন শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল সারা বিশ্বেই। কম্পনের উৎস আমেরিকা। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজার্ভের ইঙ্গিত, তারা বাজার থেকে বন্ড কেনা বন্ধ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো এবং ইক্যুইটির বাজার ধাক্কা খাবে, এমনই আশঙ্কা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আবার মার্কিন বাজারে টাকার জোগান কমলে, ভারতে বিদেশি লগ্নি আসাও কমবে। মূলত এই আশঙ্কাতেই এক ঝটকায় ৩১৭ পয়েন্ট (১.৬২%) নেমে আসে সেনসেক্স। নিফ্টিও পড়ে ৯১ অঙ্ক। বাজার চলে যায় ন’মাসের সবথেকে নিচু জায়গায়।
এই পতনে লগ্নিকারীদের শেয়ার-সম্পত্তির মূল্য কমেছে ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা। বাজারের এই ব্যবহার ফের প্রমাণ করল দেশের ভিতর লগ্নির জোর না থাকলে বা বাজার বিদেশি লগ্নির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হলে, এমন অবস্থা বার বার ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু বাজারে ছোট লগ্নিকারীদের আনাগোনা আরও কমে যাবে।
আশার কথা হল, ফেডারাল রিজার্ভ পরোক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বন্ড ক্রয়ের সিদ্ধান্ত এখনও প্রত্যাহার করেনি। তাই বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পতন অবশ্য সুযোগ করে দিয়েছে সস্তায় ভাল শেয়ার কেনার। ন্যাভ কমেছে ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পেরও। এই সুযোগে লগ্নি করা যেতে পারে কর সাশ্রয়ী ইএলএসএস প্রকল্পে।
গত সপ্তাহে বিশ্ব বাজারের চাপে ভারতীয় বাজারে কিছুটা কম্পন অনুভূত হলেও, তা ভুলে বাজার আজ থেকে নিমগ্ন হবে বাজেট চিন্তায়। যার দূরত্ব আর তিন দিন। এই ক’দিনে তুঙ্গে উঠবে বাজেট নিয়ে আশা-আশঙ্কা।
২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষের বাজেট নিয়ে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা
(১) বাজেটে সরকার এমন কিছু করবে না, যা জনসাধারণের মনে বিরুদ্ধ ভাবনা সঞ্চার করতে পারে। মাথায় রাখবে আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের কথা।
(২) রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে এ বার পুরোদস্তুর জনমোহিনী বাজেট না-ও হতে পারে।
(৩) কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে ‘নিচুতলা’র করদাতাদের জন্য। তবে রাজস্ব বাড়াতে বিস্তৃত হতে পারে করের জাল। চাপতে পারে নয়া পরোক্ষ কর।
(৪) নেওয়া হতে পারে শিল্পকে চাঙ্গা করার কিছু পদক্ষেপ।
(৫) শেয়ার বাজারের জন্য কিছু সুখবর থাকতে পারে। রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম-কে উন্মুক্ত করা হতে পারে সর্ব শ্রেণির লগ্নিকারীর জন্য।
(৬) ভোডাফোন-সহ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে কর নিয়ে যে দড়ি টানাটানি চলছে, তার সমাধানেরও পথ দেখাতে পারে এ বারের বাজেট।
(৭) থাকতে পারে খাদ্য সুরক্ষা আইনের কথা। এর জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১ লক্ষ কোটি টাকা। বাজেটে এই প্রস্তাব থাকলে দেখতে হবে, ওই বিপুল অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হয়।
(৮) আলোচনা চলছে অতি- ধনীদের উপর বেশি হারে কর চাপানো নিয়ে। সাম্প্রতিক ইঙ্গিত, সরকার বিষয়টি তলিয়ে দেখতে চায়। সুতরাং বাজেটে এই প্রস্তাব নাও থাকতে পারে।
(৯) সাধারণ মানুষ চাইছেন করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ুক। বাড়ানো হোক ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে সঞ্চয়ের সীমা। ফিরিয়ে আনা হোক পরিকাঠামো বন্ডে লগ্নির মাধ্যমে কর সাশ্রয়ের সুযোগ ইত্যাদি।
(১০) থাকতে পারে পরিকাঠামো শিল্পে লগ্নি বাড়ানো এবং বিলগ্নিকরণের পথে মোটা টাকা সংগ্রহের প্রস্তাবও।
ভারতে বাজেট প্রায় জাতীয় উৎসব। এর জন্য অপেক্ষা করেন সর্বশ্রেণির মানুষ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি। বাজেটে কার বৃহস্পতি তুঙ্গে ওঠে, তা-ই এখন দেখার।
শেষে বলে রাখি, বাজারে এখন চলছে বা আসছে ৪টি সংস্থার করমুক্ত বন্ডের দ্বিতীয় পর্যায়ের ইস্যু। যার বিশদ তথ্য দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।
|
করমুক্ত বন্ডের পাবলিক ইস্যু |
সংস্থা |
পিএফসি |
হাডকো |
আইআরএফসি |
আরইসি |
খোলার তারিখ |
১৮ ফেব্রুয়ারি |
২১ ফেব্রুয়ারি |
২৫ ফেব্রুয়ারি |
২৫ ফেব্রুয়ারি |
বন্ধের দিন |
১৫ মার্চ |
১৫ মার্চ |
১৩ মার্চ |
১৫ মার্চ |
রেটিং |
এএএ |
এএ |
এএএ |
এএএ |
মেয়াদ (বছরে) |
১০/১৫ |
১০/১৫ |
১০/১৫ |
১০/১৫ |
সুদ (%) |
৭.৩৮/৭.৫৪ |
৭.৫৩/৭.৬৯ |
৭.৩৮/৭.৫৪ |
৭.৩৮/৭.৫৪ |
ফেস ভ্যালু (টাকায়) |
১০০০ |
১০০০ |
১০০০ |
১০০০ |
ন্যূনতম লগ্নি (টাকায়) |
৫০০০ |
৫০০০ |
৫০০০ |
৫০০০ |
প্রস্তাবিত লিস্টিং |
বিএসই |
এনএসই |
এনএসই ও বিএসই |
এনএসই ও বিএসই |
অ্যালটমেন্ট : আবেদন অনুযায়ী ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট অথবা কাগজের সার্টিফিকেট হিসেবে |
|