বাড়িতে ঢুকে বোঝার উপায় নেই। তবে নরম মাটি টিপতেই বেরিয়ে এল অনেক টিন। আর তাতে ভর্তি চোলাই। আর তাই দেখে চোখ কপালে পুলিশ কর্তাদের।
এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাসের নেতৃত্বে সম্প্রতি পরপর দু’দিন চোলাইয়ের ঠেকে হানা দিয়ে এরকমই অভিজ্ঞতা পুলিশের। কাটোয়ার কাঁটারি ও মঙ্গলকোটের নিগন এলাকা থেকে কয়েক হাজার লিটার চোলাই উদ্ধারও করেছে পুলিশ। এসডিপিও (কাটোয়া) বলেন, “একটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরে আবারও দেখার জন্য ভেতরে যাই। মাটিতে পা টিপে দেখি মাটি নরম। একটু চাপ দিতেই টিনের বাক্সর মুখ দেখতে পাই। তারপরে মাটি খুঁড়ে মেলে টিন টিন চোলাই।” পুলিশ সূত্রে খবর, বিষমদ কাণ্ডের পরে ফের শুরু হয়েছে চোলাইয়ের বাড়বাড়ন্ত। তা ভাঙার জন্য এসডিপিও (কাটোয়া) -র নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্সও গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, কাটোয়া, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে অজয়ের তীরে চোলাইয়ের কারবার বহু পুরনো। তবে বিষমদ কাণ্ডের পরে পুলিশ ও আবগারি দফতরের কড়া নজরদারিতে চোলাই ব্যবসা কিছুটা গুটিয়ে ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নজরদারির রাশ আলগা হতেই নতুন করে শুরু হয়েছে এই কারবার। পুলিশ সূত্রে খবর, কুনুর নদীর তীরে বসতপুর ও রামদাসপুরেও চোলাই তৈরি হচ্ছে। ভাতারের বসতপুর থেকেই গুসকরা ও মঙ্গলকোটের একাংশে চোলাই পাচার হচ্ছে। |
তৈরি হচ্ছে চোলাই।—নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলকোটের জালপাড়া, পালপাড়া কেতুগ্রামের কান্দরা, রাজুর, মাসুন্দি, পাণ্ডুগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকায় চোলাই কারবারিরা জেগে উঠছে। সন্ধ্যা নামতেই বসছে চোলাইয়ের আসর। কেতুগ্রামের এক চোলাই কারবারি বলেন, “বেশ কয়েকমাস চোলাই তৈরি বন্ধ ছিল। পুজোর আগে থেকে আবার টুকটুক করে চোলাই তৈরি করছি। তবে এখনও ব্যপক হারে শুরু হয়নি।” তবে পুলিশের কাছে কাটোয়ার কাঁটারি গ্রামের দাসপাড়ার লাল্টু দাস, খুদু দাস, বাপি দাস, বাঙাল দাসদের বাড়িতে ব্যপক হারে চোলাই তৈরিরই খবর ছিল। সম্প্রতি সেখানে হানা দিয়েই ১৫ হাজার লিটার চোলাই উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনার কিছু দিন পরে পুলিশ খবর পায়, মঙ্গলকোটের নিগন, মাটিখাঁড়া, দেবগ্রাম, নবগ্রাম-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চোলাই ব্যবসা চলছে। এসডিপিও (কাটোয়া) -র নেতৃত্বে রাতভর তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিতে থাকা এক পুলিশকর্মী বলেন, “চোলাই কারবারিরা এখন আর ভাটি করে মদ তৈরি করছে না। ঘরেই উনুনের উপরে ড্রাম বসিয়ে মদ বানাচ্ছে।” এই মদ তৈরির পরে ঘরের ভেতরে মাটি খুঁড়ে অথবা পুকুরের জলে চুবিয়ে রাখা হচ্ছে। মঙ্গলকোটের ওসি দীপক সরকার বলেন, “পুকুরের ভেতর থেকেও আমরা চোলাই উদ্ধার করেছি।” পুলিশ এই সব জায়গায় ট্রাক্টর নিয়ে গিয়ে বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় রমরমিয়ে চোলাইয়ের ঠেক চলছে। চোলাই তৈরি হয়ে বাসে, ট্রেনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবগারি দফতর, পুলিশ সব জেনেও চুপ করে বসে রয়েছে। চোলাই ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি চলছে। ঘুগনির দোকান থেকে মুদি দোকান সব জায়গাতেই মদ মিলছে আজকাল।
এসডিপিও ধ্রুব দাস বলেন, “খবর এলেই তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিজে গিয়েও চোলাই বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছি।” আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমাদের না আছে কর্মী, না আছে গাড়ি। নিধিরাম সর্দারের মতো দশা। তবুও যথাসম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে।” |