দ্রুত বিচার শুরু হোক, চান কেতুগ্রামের ‘ধর্ষিতা’
দুঃস্বপ্নের সেই রাতের বছর ঘুরল। মেয়ের মাথায় বন্দুক ধরে কাটোয়ার ছোটরেলে যে মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, তিনি রবিবার বললেন, “ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাব না। শুধু চাই, দ্রুত বিচার শুরু হোক।” এই এক বছর ধরে ওই মহিলার পাশে থাকা প্রতিবেশী রাধারানি দাস, অন্তরা সাহারাও বলছেন, “এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চার্জ গঠন হল না। আমরাও চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার শুরু হোক। ও ন্যায়বিচার পাক।”
একটা সময় বীরভূমের কীর্ণাহারে সেলাইয়ের কাজ করতেন কেতুগ্রামের ওই বিধবা। গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ছোটরেলে (ন্যারোগেজ ট্রেন) চেপে কীর্ণাহার থেকে ফিরছিলেন। সঙ্গে বছর এগারোর ছোট মেয়ে। কেতুগ্রামের পাচুন্দির কাছে ট্রেনে ডাকাতি শুরু হয়। অভিযোগ, সেই সময়ে মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ওই মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয়। সেই ছোটরেল এখন আর নেই। নেই তাঁর সেলাই পেশাও।
মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় ‘রাজনৈতিক রং’ দেখেছিলেন। ‘সাজানো ঘটনা’ এবং ‘ওর স্বামী সিপিএম করে’ বলেও মন্তব্য করেন। তা আজও ভুলতে পারেন না তিনি। বলেন, “কেউ কি নিজেকে অপবাদ দিতে পারে? সে কথা উনি একটুও ভাবলেন না!” ওই ঘটনার পরে জীবন পাল্টে গিয়েছে। তবে, আজও পাশে গোটা গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, “ওঁর তো দোষ নেই। ওঁর পাশে থাকা আমাদের কর্তব্য।” তাঁদের ক্ষোভ, ঘটনার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ‘পাশে দাঁড়ানো’র প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর কারও দেখা মেলেনি। শুরু হয়নি বিচারও। পুলিশ জানিয়েছে, ৩০ জানুয়ারি চার্জ গঠনের কথা থাকলেও কিছু জটিলতায় তা হয়ে ওঠেনি।
কেমন আছেন এখন? মাথায় শাড়ি টেনে নিয়ে মহিলা বলেন, “এক বছর আগে যা ঘটেছিল, চোখ বুজলেই ফিরে আসে।” জানালেন, বাইরে কম বেরোন। তাঁর কথায়, “সেলাইয়ের কাজ করে কয়েক হাজার টাকা আয় হত। এখন দু’টো বাড়িতে মুড়ি ভাজি। একটা স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করি। ভাসুর, আত্মীয়েরা সাহায্য করেন। তা দিয়েই চলছে।” অভিযুক্তদের তিন জন জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ঘটনার পরে ধরা পড়েছিল মূল অভিযুক্ত রেজাউল মির্জা-সহ সাত জন। ৩০ মে কাটোয়া আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। দু’টি ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ও জমা পড়েছে। আট অভিযুক্তের মধ্যে কেতুগ্রামের কায়েশ শেখ ছাড়া বাকিরা ধরা পড়েছে। মূল অভিযুক্ত রেজাউল-সহ চার জনকে শনাক্তও করে ওই মহিলা ও তাঁর মেয়ে। এই চার জন জেলে। জামিন পেয়েছে বাকি তিন জন। আতঙ্ক সেখানেই। মহিলা জানান, কিছু দিন আগেই তাঁর ভাসুরের মোবাইলে হুমকি আসে, “মামলা তুলে নে।” বড় মেয়ে দশম, ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ভয় সে জন্যও। কেতুগ্রাম থানায় হুমকির কথা জানানোর পরে পুলিশ রোজ খবর নিয়ে যায়। তবু দুশ্চিন্তা কাটে না। ওই মহিলা বলেন, “বাড়ির কাছে অচেনা কাউকে দেখলেই ভয় করে।” ভয় কাটেনি ছোট মেয়েরও। সে বলে, “শয়তানগুলোর মুখ মনে পড়ে। মনে হয়, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।”
ঘটনার পরে দু’বার কাটোয়া শহরে গিয়েছিলেন ওই বধূ। জানতে পেরে বারণ করে দেয় পুলিশ। তাঁর মেজো জা বলেন, “স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হলেও চিন্তা হয়।” এত আতঙ্ক নিয়ে লড়াই চালাতে পারবেন? জবাব এল, “আমরা ভয় পেয়ে ছেড়ে দিলে ওরা যে আরও অনেকের ক্ষতি করবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.