বাবা জ্ঞান দিয়ো না
অভিনয় দিয়ে নকশি কাঁথা বুনতে চাই

‘আবর্ত’ ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে এই প্রথম কলকাতায় এলেন? না কি আগেও এসেছেন?
আগেও বেড়াতে এসেছি। আমাদের দেশের অ্যাড ফিল্মের পোস্ট প্রোডাকশনের কিছু কাজ কলকাতায় হয়। সে সব করতেও এসেছি। কখনও অ্যাড ফিল্মের শু্যটিং-এ এসেছি। কলকাতায় যখন বাংলাদেশের ছবি নিয়ে উৎসব হয়েছে, এসেছি।

কলকাতার ভাললাগা জায়গা কোনগুলো?
(হেসে) কফি হাউস, কলেজ স্ট্রিট, নন্দন। বেশ লাগে। ঢাকা আর কলকাতার তুলনা করলে দুই শহরের মূল্যবোধ এক, ভাষা এক, সংস্কৃতিও কাছাকাছি। জীবনযাত্রার মান, সেটাও কাছাকাছি।

আর অমিলটা কোথায়?
ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশি। এখানে দেখি সেই তুলনায় লোকে স্থিতিশীল জীবনযাপন করছেন। আপাত ভাবে অন্তত তাই মনে হয়। আমাদের ওখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ মাঝে মাঝে বেঁচে থাকা আর সংস্কৃতিতে বাধা তৈরি করে।

জয়া আহেসান।
ছবি: কৌশিক সরকার
পশ্চিমবঙ্গে এখন যে সব নতুন ধারার ছবি তৈরি হচ্ছে তাতে মধ্যবিত্ত দর্শক ফের হলমুখী হয়েছে। আপনাদের ওখানে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এরকম কোনও বদল এসেছে?
হ্যাঁ, আমাদের ওখানেও বেশ কিছু মননশীল ছবি তৈরি হচ্ছে। সে সব ছবি শুনেছি এ বাংলায় খুব শিগগিরই দেখানো হবে। তা হলে আপনারাও আমাদের ছবির এই মুহূর্তের মানটা বুঝতে পারবেন। এই আদানপ্রদানে দুই বাংলার ইন্ডাস্ট্রি সমৃদ্ধ হবে। ওয়ার্ল্ড সিনেমার ক্ষেত্রেও বাংলা ছবির জায়গাটা আরও জোরালো হবে।

আপনার বাবা তো চেয়েছিলেন আপনি নামী সংস্থায় বড় পদে কাজ করুন। কিন্তু আপনি চলে এলেন সাংস্কৃতিক জগতে। এতে বাবা খুশি তো?
গত বছর যে দিন ‘আবর্ত’র শু্যটিং শেষ হয় সে দিন বাবা মারা যান। বাবা চেয়েছিলেন আমাকে ভিন্ন ভাবে দেখতে। যখন দেখলেন ছবি করছি, দর্শক আমার ছবি গ্রহণ করছেন, বাবা খুশি হয়েছিলেন। যখন আমি বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ‘গেরিলা’ ছবিটি করি, বাবা খুব আপ্লুত হয়েছিলেন।

‘আবর্ত’ ছবিতে আপনার নাম চারু সেন। এ ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য বলেই জানিয়েছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। আপনি সত্যজিতের ‘চারুলতা’ কত বার দেখেছেন?
চারুলতা? বহু বার দেখেছি। ছোট বেলায়, বড় বেলায় অজস্র বার। সত্যজিৎ রায় তো আমাদেরও একজন। ‘আবর্ত’তে আমি যে চারুর চরিত্রে অভিনয় করি তার মধ্যেও সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’র মতোই একাকীত্ব আছে। স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব আছে। তার মধ্যে যেমন আধুনিকতা আছে, তেমনই আছে শাশ্বত মূল্যবোধ। আছে ত্যাগও।

চারুকে রূপ দিতে গিয়ে ঠিক কী ভাবে চিন্তাভাবনা করেছিলেন?
চারুর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সব সময় আমার মনে হয়েছে আমাকে যাতে এই বাংলার মাটির মেয়ে বলে মনে হয়। এই ক্ষেত্রে দাদা মানে পরিচালক অরিন্দম শীল খুব সাহায্য করেছেন। এখানকার উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতার তফাত, এখানকার রাজনৈতিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা যার মধ্যে চারুর বেড়ে ওঠা, ব্যক্তিত্ব তৈরি হওয়া তা নিয়ে দাদার সঙ্গে বহু বার কথা বলেছি। চারুর চরিত্রটা নকশি কাঁথা বোনার মতো করে ফুুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। তাই অভিনয় করার সময় পদে পদেই নানা প্রশ্ন করেছি দাদাকে।

পরিচালক আপনার সংশয় দূর করতে কী ভাবে সাহায্য করেছেন?
পরিচালক তো নিজে অভিনেতা, তাই উনি অভিনয় করার সময় খুব ভাল গাইড করেছেন। যখন উনি চিত্রনাট্য লিখছেন, একটা একটা করে সিকোয়েন্স লিখছেন, তখন থেকেই ফোনে আমার সঙ্গে প্রতিটা মুহূর্ত শেয়ার করতেন। তার পর দাদা ঢাকায় গিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। অবাক হয়েছি ওঁর পেশাদার মানসিকতা দেখে। চরিত্রগুলোর প্রতি কতটা প্রেম থাকলে আমার মতো অভিনেত্রীকে ঢাকা থেকে খুঁজে বের করে অভিনয়ে নিয়েছেন। ‘আবর্ত’র সিকোয়েন্সগুলো বার বার পড়ে শুনিয়ে উনি মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর আমার নিজের কিছু চিন্তাভাবনা চারুর চরিত্রে যোগ করেছি। অবাক লাগে ভেবে যে দাদা নেট খুঁজে খুঁজে আমার কাজগুলো দেখেছেন, জেনেছেন তার পর আমাকে যাচাই করে নির্বাচন করেছেন। কতটা পরিশ্রমী হলে এটা সম্ভব!

এই ছবিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, টোটা রায় চৌধুরীদের মতো সুঅভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করলেন। কেমন লাগল?
অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সহশিল্পীরা যদি জোরালো অভিনয় করেন তখন যে শিল্পীর অভিনয় দুর্বল তাঁর অভিনয়ের খামতি ঢাকা পড়ে যায়। আমার অভিনয়ে যদি কোথাও কোনও ফাঁক থেকে থাকে ওঁদের অভিনয়ের দক্ষতায় সেটা চাপা পড়ে যাবে বলে আশা করি। টোটা বা আবিরের সঙ্গে আমার রসায়ন কেমন জমল তার উত্তর দর্শকরাই দেবেন। আমি আর কী বলব?

২০১২তে তো আপনি ‘গেরিলা’ ছবিটির জন্যই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তা পুরস্কার পাওয়ার পর কি অনেক কাজের অফার এসেছে? জীবনটা কি বদলে গিয়েছে?
জীবন বদলেছে মানে কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়েছে। কারণ একটা ভাল ছবি দেখলে দর্শকের প্রত্যাশা তো বাড়ে। প্রচুর কাজের অফার আসে। কিন্তু আমি সব কাজ হাতে নিই না। উঁচু মানের চিত্রনাট্য পেলে তবেই কাজ করি।

এ পার বাংলার বাংলা ছবিতে অভিনয় করার কথা ভাবছেন?
দেখা যাক। আগে ‘আবর্ত’ রিলিজ করুক। দর্শক কী ভাবে আমাকে গ্রহণ করেন সেটা দেখি। তার পর অন্য ছবিতে কাজ করার কথা ভাবব। তবে এখানকার নতুন পরিচালকদের অনেকের সঙ্গেই আলাপ-পরিচয় হয়েছে। এ বাংলার বেশির ভাগ নতুন ছবি আমার দেখা। ‘অটোগ্রাফ’ থেকে ভূতের ভবিষ্যৎ’ সবই। দারুণ লেগেছে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’। আইকনিক ছবি।

অনেক ক্ষণ আপনার সঙ্গে কথা হল, কিন্তু আপনার কথায় কোথাও কোনও বাঙাল টান শুনতে পেলাম না। উচ্চারণ এ পার বাংলার মতোই। এটা কী করে হল? আপনাকে একটুও বাঙাল বলে মনে হচ্ছে না...
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা বিভিন্ন রকম। সেগুলোই বাঙাল ভাষা বলে পরিচিত। আমরা শহুরে বাঙালিরা সেই ভাষায় কথা বলি না। আপনারা যখন বাংলাদেশের সিনেমা বা নাটক দেখেন বাঙাল ভাষার ব্যবহার শুনে থাকবেন। আমরা যারা শহরে থাকি আপনাদের মতো উচ্চারণেই কথা বলি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.