বাবা জ্ঞান দিয়ো না
আমার মনটা বেসবল ব্যাটের মতো

নানা পটেকর বলেছেন অনেক দিন বাদে আপনি নাকি একটা ভাল ছবি করেছেন...
(হাসি) শুধু কী তাই? বলেছেন আমি না কি ‘স্প্লিট পরিচালক’। এক দিকে মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে ছবি বানাই। অন্য দিকে ‘ডিপার্টমেন্ট’। ‘স্প্লিট পারসোনালিটি’ শুনেছি। তবে ‘স্প্লিট পরিচালক’ নানা-র কাছেই প্রথম শুনলাম।

একটা বহুচর্চিত বিষয় নিয়ে ছবি বানানো এক জন পরিচালকের কাছে কি বেশি সমস্যার?
না। ঘটনাটা জানা। বহুচর্চিত। তবু বলব এটার একটা আবেগপ্রবণ দিক রয়েছে। এক মাত্র ফিচার ফিল্ম এই আবেগের দিকটা ঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারে। গবেষণা করতে গিয়ে নতুন অনেক কিছু জানলাম। আপনি কি জানেন যে কিছু পুলিশ অফিসার ছিলেন যাঁদের হাতে কোনও বন্দুক ছিল না? তাঁরা কী করবেন সেটা না বুঝতে পেরে তখন এ কে ফরটিসেভেন হাতে নেওয়া সন্ত্রাসবাদীদের সামনে শুধু কিছু ঢিল ছুড়তে থাকেন!

এ তো একেবারে নিধিরাম সর্দার!
দু’জন পুলিশ অফিসার লিওপোল্ড কাফের সামনে দাঁড়িয়ে। বন্দুকহীন। কিন্তু তাঁদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাফেতে কোনও সন্ত্রাসবাদী রয়েছে কি না তা খোঁজার। তাই তাঁরা ঢিল ছুড়েছিলেন। কতটা সাহস থাকলে মানুষ এটা করতে পারে ভাবুন তো! অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে যে বন্দুক থাকে তাতে গুলি ভরা থাকে না। কারণ গুলি ভর্তি বন্দুক কাঁধে নিয়ে ঘোরা খুবই কষ্টকর। আর কেউ তো কাঁধে বন্দুক নিয়েও ভাবেন না যে যখন তখন একটা টেররিস্ট অ্যাটাক হবে। যদিও সত্যিটা হল সন্ত্রাস যে কোনও সময় হানা দিতে পারে। এটা কি কেউ জানে যে যখন অ্যাটাকটা হয় তখন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার স্নান করছিলেন! উনি এমনিতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরেন না। হঠাৎ সেদিনই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছিলেন। আরও আছে...
রামগোপাল বর্মা
যেমন?
মনে আছে সিনিয়ার পুলিশ ইন্সপেক্টর বিজয় সাভারকরের কথা? যে দিন হামলাটা হয়, ওঁর স্ত্রী ন’টা নাগাদ শুয়ে পড়েছিলেন। একটা ফোন আসে আর বিজয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিজয়ের স্ত্রী ভেবেছিলেন আবার কোনও দলের ঝামেলা থামাতে গিয়েছেন তাঁর স্বামী। রাত একটা নাগাদ বাড়িতে একটা ফোন আসে। বিজয় কোথায় জানতে চাইলে উনি বলেন, “ও তো কাজে বেরিয়েছে।” ও দিক থেকে বলে এক বার টিভিটা চালাও। টিভি চালাতেই মর্মান্তিক ধাক্কা। যেখানে হেডলাইন ‘গুলিতে নিহত পুলিশ অফিসার বিজয় সাভারকর’। ভাবতে পারেন এক জন মহিলার কি মানসিক অবস্থা হতে পারে যদি মাঝরাতে টিভি চালিয়ে জানতে হয় যে তাঁর স্বামী আর নেই? এই ঘটনাগুলো আমাকে মানুষ হিসেবে অনেক পালটে দিয়েছে।

এটা শুনতে রামগোপাল বর্মার মতো লাগছে না...
(হাসি) আমার জীবনদর্শনটা পালটেছে। দেখুন এক জন পরিচালক অনেক কারণে ছবি বানান। আমিও তাই। ঔদ্ধত্য থেকে বানিয়েছিলাম ‘রামগোপাল বর্মা কী আগ’। বিশ্বাস থেকে ‘নিঃশব্দ’ বানিয়েছিলাম। কৌতূহল থেকে ‘সত্য’। ‘দ্য অ্যাটাক অব ২৬/১১’ আমি ভয় থেকে বানিয়েছি। অনেক মানুষের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ছবিটা বানাতে হয়েছে। মনে হয়েছে কেউ যেন আমাকে একটা মূল্যবান জিনিস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে এটা ওই জায়গাতে পৌঁছে দাও। আর আমি সযত্নে সেটা নিয়ে যাচ্ছি। তবু প্রাণে ভয় আছে যাতে জিনিসটা পড়ে না যায়।

রাগ, বিতৃষ্ণা সম্পর্কে আপনার ধারণা কি পালটেছে?
অনেক গবেষণা করার জন্য দুনিয়াটা অন্য ভাবে দেখি। তবে সাধারণ মানুষ কি তা পারবে? তাদের রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। জিজ্ঞেস করে দেখুন কারা সন্ত্রাসবাদ আক্রমণটা প্ল্যান করেছিল। এক জনেরও নাম বলতে পারবে না। শুধু বলবে কাসভ। ক’জন জানে আবু জিন্দলের কথা? যে কি না আবার এক জন ভারতীয়! একটা কুকুরকে যদি তার মনিব বলে, যাও গিয়ে লোকটার হাত কামড়ে দাও, কুকুরটা আনুগত্য থেকে তাই করবে। তখন আমরা কি কুকুরটাকে শাস্তি দেব, না তার মনিবকে?
‘দ্য অ্যাটাক অব ২৬/১১’ ছবিতে কাসভের চরিত্রে সঞ্জীব জয়সোয়াল

এ রকম দার্শনিক কথাবার্তা তো মানুষ হঠাৎ করে হুইল চেয়ারে বন্দি হয়ে গেলে বলে থাকেন...
ঠিক তাই। আমার পরের ছবিগুলোতে এই মানসিক পরিবর্তনটা ধরা পড়তে পারে।

তা হলে কি এবার প্রেমের ছবি বানাবেন?
হয়তো। তবে নিজের মতো করে।

সেই পুরোনো আরজিবি-র কী হল, যে যখন তখন যা কিছু বলে দিতেন?
আমার রসবোধটা অনেকেই ধরতে পারেন না। ট্যুইটার-এ মাঝে মধ্যেই প্রয়োগ করি সেটা। এই তো হায়দরাবাদ বিস্ফোরণের পর শুনলাম সেলিব্রিটিরা বলছেন যে ‘মাই হার্ট গোজ আউট টু’। আমার মনে হল ‘হার্ট গোজ আউট টু’ তো ঠিক আছে। কিন্তু গ্যাঁটের টাকাটা কি আহতদের দেবেন? সঙ্গে সঙ্গে লিখে দিলাম ‘ইট’স ইনক্রেডিবল দ্যাট ওনলি সেলেবস হার্টস গো আউট টু দ্য ফ্যামিলিস অব টেরর ভিক্টিমস বাট নেভার দেয়ার মানি’।

এই পালটে যাওয়া আরজিবি কি কর্ণ জোহরের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছেন? ছবির জন্য গান গাইছেন?
গান গেয়েছি মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে ছবিটির তেলুগু সংস্করণে। সঙ্গীত পরিচালক বললেন আমার গলাটা মানাবে। তাই গাইলাম। আর কর্ণ? আমরা তো কোনও দিন শত্রু ছিলাম না। মিডিয়া এমন প্রচার করেছিল যেন আমরা সারাক্ষণ পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করি। তা না হলে খবরটা সে রকম মুচমুচে হবে না যে! আমাদের যখন দেখা হয় আমরা দু’জনই একে অপরের সঙ্গে যথেষ্ট স্বাভাবিক ব্যবহারই করেছি।

এটা তো আগে প্রচার করেননি?
আমাদের কয়েক বার দেখা হয়েছে। কখনও অভিষেকের বাড়িতে। কখনও বা কোনও অনুষ্ঠানে। আর যখনই দেখা হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছি। এটা কিন্তু আমি মিডিয়াকে আগেও বলেছি। তবে ওই যে বললাম দুই পরিচালকের বন্ধুত্ব নিয়ে খবর অতটা বিকোয় না যতটা বিকোয় ঝগড়ার খবর। বছর দুই আগের একটা কথা মনে পড়ে গেল। হঠাৎই মিডিয়াতে শোনা গেল আমি না কি মিস্টার বচ্চনকে ট্যুইটার-এ অপমান করেছি। ঘটনাটা আদৌ তা ছিল না। আমার নিজের তো একটা সেন্স অফ হিউমার আছে। ভাগ্যবশত মিস্টার বচ্চন বুঝতে পেরেছিলেন যে ব্যাপারটা পুরোটাই মজা।

‘কর্ণ আর আমি তো কোনও দিন শত্রু ছিলাম না। মিডিয়া এমন প্রচার করেছিল যেন আমরা পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করি। না হলে খবরটা মুচমুচে হবে না যে’

আচ্ছা, আপনার মুড নাকি বেসবল ব্যাটের মতো স্যুইং করে?
একদম ঠিক বিশ্লেষণ। ‘স্প্লিট পরিচালক’ মানে এমন এক জন যে সব কিছু হুটহাট করে। খানিকটা জেনেবুঝে পাগলামি। আমি তা করি না। আমার সিনেমা নিয়ে ভাল বা মন্দ কোনও কিছু বললেই আমার আসে যায় না। সিনেমা ছাড়া আমি আর কিছু করতে পারব না। ওটাই আমার জীবন।

কোনও ছবি বানিয়ে অনুশোচনা হয়েছে?
লোকে বলবে ‘আগ’। আমি বলব ‘ডিপার্টমেন্ট’। ছবিটা বানানোর সময় থেকেই ভাল লাগেনি। আমি খারাপ বা ভাল ছবি বানালে সবার আগে নিজে বুঝতে পারি। লোকে বলে ‘সত্য’ খুব ভাল ছবি। আমার মতে ওটা বেশ সাধারণ। কারণ আমার কাছে যা সোর্স মেটিরিয়াল ছিল সে তুলনায় ছবিটা অত্যন্ত সাধারণ মানের। যারা ‘সত্য’কে ভাল বলে তারা এই সোর্স মেটিরিয়াল-এর কথা জানে না। জানলে হয়তো তারাও বলত ছবিটা সাধারণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.