জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড
এখনও মর্গে পড়ে ২২টি দেহ, চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতর
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে মৃতের দেহ পরিবারের লোকেদের শনাক্তকরণের জন্য কত দিন সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে? প্রায় দু’বছর ন’মাস আগে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদের ২২ জনের দেহ নিয়ে এই প্রশ্নই তুলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মেদিনীপুর আদালতে জ্ঞানেশ্বরী মামলায় টানা পাঁচ দিনের সাক্ষ্যদান শুরু হওয়ার পরে এই প্রশ্ন আবার নতুন করে সামনে এসেছে।
২০১০ সালের ২৭ মে ঝাড়গ্রামের সরডিহায় লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মালগাড়ি ধাক্কা মারে। ওই দুর্ঘটনায় মারা যান অন্তত ১৫০ জন। আহত হয়েছিলেন ২০০ জনেরও বেশি। তদন্তে নামে সিবিআই। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে কুলিং চেম্বার ভাল ভাবে কাজ করছিল না বলে প্রায় ৪৬টি মৃতদেহকে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে এবং কাঁটাপুকুর পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু দেহ বাড়ির লোকেরা এসে শনাক্ত করেন। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেও অনেক দেহ চিহ্নিত হয়। কিন্তু এত কিছু পরেও ২৮টি দেহের শনাক্তকরণ হয়নি। এর মধ্যে ছ’টি দেহ এসএসকেএম হাসপাতালে ছিল। সেগুলি সৎকারের জন্য পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২২টি দেহ পড়ে রয়েছে।
দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে লাইনচ্যুত জ্ঞানেশ্বরী। —ফাইল চিত্র
এই দেহগুলি নিয়েই বিভ্রান্তি। তিন বার ডিএনএ পরীক্ষা করেও লাভ হয়নি।
তদন্ত শেষ হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও ওই ২২টি দেহ এখনও পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চারটি, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আটটি এবং কাঁটাপুকুর পুলিশ মর্গে দশটি মৃতদেহ রয়েছে। আর জি কর এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “এমনিতেই মর্গে স্থানাভাব রয়েছে। মৃতদেহ উপচে পড়ে। অনেকে আজকাল দেহ দান করেন। সেগুলি রাখার কুলিং চেম্বার নেই। অথচ, আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে আট-দশটি কুলিং চেম্বার শুধু জ্ঞানেশ্বরীর দুর্ঘটনায় মৃতদের জন্য আটকে রয়েছে।”
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “যেহেতু দুর্ঘটনা ঘটেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে, তাই এই মৃতদেহগুলির দায়িত্বে রয়েছে সেই জেলার পুলিশ। এক বার স্বরাষ্ট্র দফতর পরিকল্পনা করেছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও এক সংরক্ষিত, ঘেরা জায়গায় দেহগুলি গণ-কবর দেওয়া হবে। দরকার পড়লে কবর খুঁড়ে দেহ তোলা যাবে। সেই পরিকল্পনা পরে আর বাস্তবায়িত হয়নি। আমরাও নিজে থেকে দেহগুলির সৎকার করতে পারছি না। যদি কেউ এসে দেহ দাবি করেন।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (মেডিকো লিগাল) উমাপ্রসন্ন ঘোষাল আবার জানিয়েছেন, আলিপুরে কাঁটাপুকুর পুলিশ মর্গে চাপ প্রচণ্ড। গোটা রাজ্য থেকে সেখানে দেহ আসে। কিন্তু কুলিং চেম্বার মাত্র ৪৬টি। সেখানে ১০টি চেম্বার আড়াই বছরের উপরে জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনায় মৃতদের জন্য আটকে রয়েছে।
এর মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে তাঁরা জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের ৬টি মৃতদেহ সৎকারের জন্য কলকাতা পুরসভাকে দিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, দেহগুলির তিন বার করে ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছিল। শেষ বার সিবিআইয়ের কর্তাদের সঙ্গে দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এইম্স)-এর ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান টি ডি ডোগরা এসে দেহগুলি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান। সেখানেও কোনও সংগৃহীত নমুনার সঙ্গে দেহ মেলেনি। এইম্স তখন জানিয়ে দেয়, আর কোনও পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এসএসকেএমের দাবি, এর পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁদের চিঠি দিয়ে ওই দেহগুলি সৎকারের ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বাকি হাসপাতাল বা কাঁটাপুকুর মর্গ সেই চিঠি পেল না কেন? কেন তারাও সৎকার করছে না? যে ঘটনার তদন্তে সিবিআই জড়িত, সেই ঘটনায় মৃতদের সৎকার এই ভাবে পুলিশের উপস্থিতি ছাড়া কি কোনও হাসপাতাল করতে পারে? রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের মৃতদেহ পড়ে থাকার বিষয়টা জানতামই না। আমাকে কেউ বলেনি। খবর নিতে হবে।” আর পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর কথায়, “এটা সিবিআইয়ের ব্যাপার। কোর্ট ওদের কী নির্দেশ দিয়েছে, কী ভাবে দেহ সৎকার করেছে, সব ওরা বলতে পারবে।” স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা আফশোসের সঙ্গে বলেছেন, যেহেতু অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যের মতো এ রাজ্যে কোনও ‘অ্যানাটমিক্যাল অ্যাক্ট’ নেই, তাই বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.