মাধ্যমিক দিতে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে হোমে ঠাঁই নিল নাবালিকা
ঠিকানা তার বদলেই চলেছে।
নরেন্দ্রপুরের হোমের চৌখুপ্পি ঘর। আপাতত এটাই তার ঠাঁই। শনিবার রাতে সেই ছোট্ট ঘরে দুলে দুলে পড়া সেরে নেওয়ার ফাঁকে সুলতানা (নাম পরিবর্তিত) বিড় বিড় করে, “এত খাটলাম। পরীক্ষাটা দেব না, হয় নাকি!’’ সোমবার শুরু তার মাধ্যমিক পরীক্ষা ।
কয়েকটা দিনে কী দ্রুতই না বদলে গিয়েছে বছর পনেরোর কিশোরীর ঠিকানা। এই তো সে দিন, সিনহারানিয়া গ্রামে বাড়ির দাওয়ায় বসে লো-ভোল্টেজের নিভু নিভু আলোয় বাবার বকুনি এড়িয়ে পড়া সারত সে। দিন কুড়ি আগে, জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। শ্বশুরবাড়ির ঘর-গেরস্থালি সামলে আর যা-ই হোক, মাধ্যমিক দেওয়া যে অসম্ভব বুঝতে পেরেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছিল সুলতানা, ‘পালাতে হবে।’ তার পরে চুপি চুপি বেরিয়ে পড়েছিল সে।
আলিপুর আদালত চত্বরে অনভ্যস্ত শাড়িতে বছর পনেরোর ওই কিশোরীকে এলোমেলো ঘুরতে দেখে এগিয়ে এসেছিলেন আইনজীবীরাই। তাঁদের কাছেই ভেঙে পড়েছিল মেয়েটি। কেঁদে ফেলে। জানায়, বাবা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। অথচ, পড়ার বড়ই ইচ্ছে তার। টেস্ট পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তার এ বার মাধ্যমিক দেওয়ার কথা।
আইনজীবীরাই তাকে নিয়ে যান বিচারকের কাছে। মেয়েটির কথা শুনে বিচারক দেবাশিস পাঁজা সঙ্গে সঙ্গে আলিপুর থানায় নাবালিকার বাবার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেন। তার পরে, বিচারকের নির্দেশ মতো পুলিশ গ্রেফতার করে সুলতানার বাবাকে। তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পলাতক।
কিশোরীর অভিযোগ, “মা মারা যাওয়ার পরে, বাবা আবার বিয়ে করল। পড়ার কথা বললেই বাবার হাত উঠত। নতুন মা-ও যোগ দিত। বাবা-মা-ই ঠিক করে, যে করে হোক, আমার বিয়ে দিয়ে ঝাড়া হাত-পা হবে।” কিন্তু টেস্টে ভাল নম্বর পাওয়া সুলতানার পাখির চোখ তখন মাধ্যমিক। সে বলে, “এত খাটলাম, আর পরীক্ষাটা দেব না! পাড়ার এক দাদা বলেছিল আদালতে গেলে বিচার পাওয়া যাবে। তাই আদালতে গিয়েছিলাম।” কিন্তু তার বাবাই বা কেন নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দায় এড়াতে চেয়েছিলেন? কিশোরীর বাবার সাফাই, “দিনমজুরি করে খাই। আমার পক্ষে মেয়েকে পড়ানো সম্ভব? ভাল ছেলে পেয়ে বিয়ে দিয়েছি।”
তবে আদালতের নির্দেশে ওই রাতেই সুলতানার ঠিকানা বদলে গিয়েছিল নরেন্দ্রপুরের ওই হোমে। তার মাধ্যমিক দেওয়ার যাবতীয় দায়ও নিয়েছে সমাজকল্যাণ দফতরের ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ (সিডব্লিউসি)।
ওই হোমের পক্ষে তপতী ভৌমিক বলেন, “পিছুটান তো এত সহজে যাওয়ার নয়। বাড়ির কথা এখনও মনে পড়ছে মেয়েটির। আমরা ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে, মেয়েটির মানসিকতায় আমরা মুগ্ধ। রাত জেগে পড়ছে ও।” সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) বিজলি মল্লিক বলেন, “ওই নাবালিকার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সব ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। জীবনতলার যে স্কুল থেকে ওর পরীক্ষা দেওয়ার কথা সেই মঠেরদিঘি হাইস্কুলের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আশা করছি, ভালই পরীক্ষা দেবে মেয়েটা।” আর সুলতানা বলছে, “এত দিন খাটলাম, পরীক্ষা দেব না, হয় নাকি!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.