|
|
|
|
বিপাকে স্বাস্থ্য দফতর |
রক্ষণাবেক্ষণ নিজেরাই করবে হাসপাতাল, সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি হাসপাতালগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের হাত থেকে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রকম প্রস্তুতি ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় হতবাক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতর কী ভাবে পূর্ত দফতরের কাজ সামলাবে, তা ভেবেই পাচ্ছেন না উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা!
শুক্রবার স্বাস্থ্যভবনে এক বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “কিছু হাসপাতালে পূর্ত দফতরকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া আছে। এত দিন এই নিয়মই চলেছে। রক্ষণাবেক্ষণে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও ভূমিকা ছিল না। আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের বোর্ড (মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন) এ বার থেকে এটা করবে। অন্য কারও ইচ্ছাতে এটা ছেড়ে দেওয়া যায় না। স্বাস্থ্য দফতরের এ ব্যাপারে স্বাধীনতা থাকা উচিত।”
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এমন ঘোষণার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। এ দিন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরেই মুখ্যমন্ত্রী চটজলদি এমন
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা রীতিমতো বিব্রত হয়ে পড়েন। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি মজুত! সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আপনারা তো ভাল লিখতে পারেন, কিন্তু সবাই কি ভাল ছবি তুলতে পারেন? যাঁর চোখ, তাঁরই হাত
হওয়া দরকার। সেই জন্যই যার হাসপাতাল, তারই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হলে ভাল।”
হাসপাতালকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে পূর্ত দফতরের টানাপোড়েন বহু দিনের। স্বাস্থ্যকর্তারা, বিশেষ করে বিভিন্ন হাসপাতালের সুপারদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা তাঁদের কথা শোনেন না! তাঁদের দীর্ঘসূত্রতার জন্য হাসপাতালের পরিষেবাও ধাক্কা খায়। অভিযোগ, সামান্য জলের পাইপ, বাতানুকূল যন্ত্র মেরামত করতেই হাজারো ঝক্কি। আবেদন
করে দিনের পর দিন বসে থাকতে হয়। ভবন সংস্কার করতে গিয়ে মাসের
পর মাস কোনও বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ থাকে! অপারেশন থিয়েটার মেরামত করতে মাস পেরিয়ে যায়!
এ জন্য বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এক বার ঠিক হয়েছিল, হাসপাতালগুলিতে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার-কর্মীদের সবাইকে স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে আনা হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা যায়নি।
গত কয়েক মাসে এসএসকেএম, মেডিক্যাল, আরজি কর, ন্যাশনাল মেডিক্যালের মতো একাধিক হাসপাতালে বারবার এসি মেশিনে আগুন লাগার জন্য পূর্ত দফতরের রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিকেই দায়ী করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এই সমস্যার সমাধানের জন্য বছর পাঁচেক আগে তৈরি হয়েছিল ‘মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন’। ঠিক হয়েছিল, এঁরাই স্বাস্থ্য দফতরের নতুন নির্মাণ, মেরামতির কাজ করবে, নতুন যন্ত্রপাতিও কিনবে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের টাকায় শুধু গ্রামীণ হাসপাতালের জন্য তৈরি হয়েছিল আলাদা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। কিন্তু দু’টোর কোনওটাই সফল হয়নি। মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের কোনও পরিকাঠামোই তৈরি করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের
প্রশ্ন, এই অবস্থায় গোটা রাজ্যের
সমস্ত হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়লে, মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন মুখ থুবড়ে
পড়বে। মুখ্যমন্ত্রী এমন ঘোষণা করলেন কী ভাবে?
বছরখানেক আগে এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য দফতর। তাদের সুপারিশ ছিল, হাসপাতালে কর্মরত পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হোক সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই। সেই সুপারিশ প্রস্তাব আকারেই রয়ে গিয়েছে। শুধু মাত্র পূর্ত দফতরের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিককে হাসপাতাল সংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তাতে হাসপাতালগুলোর সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর নয়া ঘোষণা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয়ে সব মহলই।
|
কথা
ও তথ্য |

মুখ্যমন্ত্রী বলেন |

বাস্তব বলছে |
• রাজ্যে সদ্যোজাতের মৃত্যু-হার ৩৩ থেকে কমে ৩১* |
• ২০১১-এ ৩১ থেকে বেড়ে ৩২** |
• দু’মাসে এসএনসিইউ ৬ থেকে বেড়ে হবে ৪০। চালু ৩০টি |
• অধিকাংশ লোকাভাবে ধুঁকছে |
• প্রসূতিদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ায় গাড়ি (নিশ্চয়যান) |
• মামলার জেরে কার্যত বন্ধ |
• নতুন মেডিক্যাল কলেজগুলি খুব ভাল চলছে |
• প্রতিটির পরিকাঠামো অসম্পূর্ণ |
* প্রতি হাজারে ** কেন্দ্রীয় এসআরএস রিপোর্ট (অক্টোবর’১২) অনুযায়ী |
তথ্য-সূত্র: স্বাস্থ্য দফতর |
|

দশ ঘোষণা |
• হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ পূর্ত দফতর থেকে স্বাস্থ্যের হাতে |
•‘রাষ্ট্রীয় বিমা যোজনা’ শ্রম দফতর থেকে স্বাস্থ্য দফতরের হাতে |
• এমবিবিএস পাশ করতে গেলে এক বছর বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে কাজ |
• তিন হাসপাতালে ‘পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি’, চার হাসপাতালে ‘পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি’ |
• হাসপাতাল সংস্কার ও ৫ ব্লাডব্যাঙ্ক তৈরিতে ৯৪ কোটি ৯২ লক্ষ |
• ওষুধে আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ |
• পিপিপি মডেলে ৫০ ডায়গনস্টিক সেন্টার |
• হাসপাতাল সাফ রাখার যান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাফাইকর্মী ছাঁটাই নয় |
• সিঙ্গুরে ট্রমা কেয়ার সেন্টার |
• ধুবলিয়াতে ৯০০ একর জমিতে মেডিক্যাল কলেজ বা মা-শিশু ‘হাব’ |
|
|
|
 |
|
|