জমি পাওয়া গেলে এইমস রায়গঞ্জেই, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
মি থাকলে রায়গঞ্জে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এইমস)-এর ধাঁচে হাসপাতাল গড়তে যে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, তা শুক্রবার বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন প্রায় দেড় বছর বাদে স্বাস্থ্যভবনে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় রায়গঞ্জে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল কি হবে? উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি তো করতে রাজি আছি। কিন্তু জমি না থাকলে আমি কী করব? আমাকে জমি এনে দিন। আমি তো আর কৃষকদের মেরে তাঁদের জমি নিতে পারব না। কল্যাণীতে যেমন অনেক জমি রয়েছে।”
তা হলে কি রায়গঞ্জ নিয়ে কিছুটা নরম হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী? এক পক্ষ বলছেন, তা কেন? মুখ্যমন্ত্রী আগেও বলেছিলেন, এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে জমি। এ দিনও সে কথাই বলেছেন। সে দিকে থেকে নিজের আগের অবস্থানই বজায় রেখেছেন তিনি। অনেকে কিন্তু বলছেন, বিষয়টা তেমন না-ও হতে পারে। এ দিন রায়গঞ্জ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আবার জমি প্রসঙ্গ তুলেছেন ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে সেখানে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল নিয়ে তাঁর যে আপত্তি নেই, সে কথাও জানান। এই কথার মধ্যে খুব সূক্ষ্ম অবস্থান বদলের ইঙ্গিত রয়েছে।
যদি তাই হয়, তা হলে কেন? রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরির বিষয়টি এখন শুধু রায়গঞ্জ নয়, দলমত নির্বিশেষে গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষের ভাবাবেগে পরিণত হয়েছে। জমি দিতে ইচ্ছুক কৃষকদের নিয়ে গত মাসেই মহাকরণ অভিযান করেন কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। তাতে সামিল হয়েছিলেন প্রদেশ নেতারাও। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের বহু তৃণমূল নেতা মুখে না বললেও চাইছেন, ওখানেই হাসপাতাল হোক। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা সেই ভাবাবেগে আঘাত দিতে চাইছেন না। তাই সরাসরি তাঁর মুখে ‘না’ শোনা যায়নি।
২০০৯ সালে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। বরাদ্দ ধরা হয় ৮২৩ কোটি টাকা। ১০০ একর জমিতে রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল তৈরির কথা। রায়গঞ্জের পানিশালায় জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করা ১০০ একর জমি পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে যায়। এর পরে রাজ্যে পালাবদলের পরে পানিশালা এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করার দাবিতে উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলন শুরু করে কংগ্রেস। ওই আন্দোলনের জেরে গোটা উত্তরবঙ্গেই রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে জনমত ক্রমশ বাড়ে।
তাই পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন হওয়ায় উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতাদের অনেকেই ওই হাসপাতালের বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্প্রতি তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একাধিক প্রথম সারির নেতা নানা ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের মতামত পৌঁছে দেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ তো বটেই, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে কংগ্রেসের লাগাতার প্রচারের ফলে তৃণমূলের নিচুতলার নেতা-কর্মীরাও এলাকায় প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। কারণ, অতীতে উত্তরবঙ্গ সফরে কখনও মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল হলে তাঁর আপত্তি নেই বলে স্পষ্ট ভাবে বলেননি। তৃণমূলের এক নেতা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের পরে আগামী দিনে তাঁরাও পাল্টা প্রচার করতে পারবেন।
সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সূক্ষ্ম ভাবে অবস্থান বদল করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “এইমসের ধাঁচে রায়গঞ্জে হাসপাতাল গড়ার বিষয়টিকে নির্বাচন এলেই হাতিয়ার করে কংগ্রেস। লোকসভা, বিধানসভা ভোটে তা নিয়ে প্রচার করেছে। পঞ্চায়েত ভোট আসছে। সে জন্য কংগ্রেসের রাস্তায় হাঁটছে তৃণমূলও। অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর সূক্ষ্ম অবস্থান বদল সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।”
অবশ্য রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর কথায়, “এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়বে কেন্দ্র। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রে ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল হবে বলে ঘোষণা করেছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ভাবছি না।” যদিও উত্তর দিনাজপুর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কোনও দিনই রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার বিরুদ্ধে নন। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী এটা নিয়ে রাজনীতিও করতে চান না। জমি সমস্যা মিটলেই রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.