পাহাড়ে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিলেও কেন্দ্র ও রাজ্যের কড়া মনোভাব আঁচ করে আপাতত দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি স্থগিত করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। শুক্রবার দার্জিলিঙে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে মোর্চার নেতৃত্ব ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। মোর্চার অন্দরের খবর, এই মুহূর্তে বাজেট অধিবেশন ও হায়দরাবাদের ঘটনার জেরে কেন্দ্রের মন্ত্রীরা চূড়ান্ত ব্যস্ত। সে জন্য কেউই মোর্চা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দিতে পারেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই দিল্লি যাত্রা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে গুরুঙ্গকে।
মোর্চা এই দিন তরাই ডুয়ার্সের সংগঠন থেকেও ধাক্কা খেয়েছে। ওই এলাকার মোর্চার সংগঠনের অন্তত ১৫ জন নেতা সহ ৫০ জন কলকাতায় গিয়ে দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদম লামা এবং প্রশান্ত থুলুং। কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বসে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, গুরুঙ্গ নিজের মর্জিমাফিক কাজকর্ম করেন। এই অবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়পক্ষের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উপায় খুঁজছেন মোর্চা নেতৃত্ব। উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও সমর্থন জোগাড় করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। |
তৃণমূলে যোগ দেওয়া মোর্চা নেতাদের হাতে দলের পতাকা
তুলে দিচ্ছেন মুকুল রায়। শুক্রবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র |
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এ দিন বলেছেন, “এখনই দলীয় সভাপতি দিল্লি যাচ্ছেন না। সময় মতো যাবেন। এদিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, দলের প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল দিল্লি যাচ্ছেন। তাঁরা নানা দলের সাংসদদের সঙ্গে দেখা করে গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানানোর আর্জি জানাবেন।” ২৪ ফেব্রুয়ারি হরকাবাহাদুর দিল্লি যাচ্ছেন। দলের আর এক বিধায়ক রোহিত শর্মার নেতৃত্বে আর একটি প্রতিনিধি দল উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাবেন।
তবে এ দিনের বৈঠকে নতুন কোনও আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেননি মোর্চা নেতারা। মনে করা হচ্ছে, সম্প্রতি রাজ্য সরকারের লাগাতার সমালোচনা করে গুরুঙ্গ কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইলেও কেন্দ্রের দিক থেকে সে ভাবে সাড়া মেলেনি বলেই মোর্চা নেতারা আপাতত বিব্রত। তাই অস্বস্তি এড়াতে নতুন করে আন্দোলনের ব্যাপারে কোনও ঘোষণা তাঁরা করেননি। বরং সুর নরম করেই রোশন জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার আলোচনা চাইলে সে ব্যাপারে তাঁরা দলীয় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ দিন পদম লামা, প্রশান্ত থুলুংরা জানান, উত্তরবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁদের কয়েক বার বৈঠক হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রদেশ নেতা সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কলকাতায় আসার দিনক্ষণ ঠিক হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে দলনেত্রীর নির্দেশে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে মোর্চার ওই নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দেন। মুকুলবাবু বলেন, “তরাই-ডুয়ার্সের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য রাজ্য বদ্ধপরিকর। ওই কাজে সামিল হতে চান বলেই মোর্চার নেতা-কর্মীরা আমাদের দলে এসেছেন। ওঁদের স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করব, ওঁরা উন্নয়নের কাজে সামিল হয়ে নজির স্থাপন করবেন।” |