|
|
|
|
নজর উপনির্বাচনেও |
জেলায় আসন বণ্টন দ্রুত মেটাতে নির্দেশ বিমানের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির গতি বাড়াল বামফ্রন্ট। জেলা স্তরে বাম শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা সেরে আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে রাজ্য বামফ্রন্টকে রিপোর্ট দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হল। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের ব্যাপক সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হবে ধরে নিয়েই বিরোধী বাম শিবিরে আলোচনা হয়েছে, এমন ‘নির্ভীক’ প্রার্থীদেরই টিকিট দিতে হবে, যাঁরা মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকে নির্বাচন পর্যন্ত ময়দানে থেকে লড়াই চালাতে পারবেন! এলাকায় গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রার্থী বাছাইয়ে সব চেয়ে বড় মাপকাঠি করার কথাও বলা হয়েছে।
জেলায় জেলায় পঞ্চায়েতের আসন সমঝোতা ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি কত দূর এগিয়েছে, তা নিয়ে শুক্রবার আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে আসন সংরক্ষণের বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া চলছে। তাই ওই দুই স্তরেই আগে আসন সমঝোতার আলোচনা সেরে নিতে চাইছে বাম দলগুলি। তার পরে হাত দেওয়া হবে জেলা পরিষদ স্তরে। তবে পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা কী রকম মনোবল নিয়ে লড়াই করতে পারবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলের উপরে।
বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিনটি বিধানসভা আসনের মধ্যে অন্তত একটিতে জয় চাইছেন বাম নেতারা। তিনটি আসনের মধ্যে (যেখানে আজ, শনিবার ভোট) একটিও ২০১১ সালের ভোটে বামেদের হেফাজতে ছিল না। মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলা কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়েছে, তিনটির মধ্যে রেজিনগর আসনটিতেই বামেদের জয়ের সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ও তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর সেখানে নিজেদের মানরক্ষার লড়াই করছেন। দু’জনের ভোটের কায়দাও প্রায় একই রকম। বিশেষত, তৃণমূল চাইছে কংগ্রেসের পরাজয় নিশ্চিত করে অধীরকে ধাক্কা দিতে। এই পরিস্থিতিতে আরএসপি-র প্রার্থীর জয়ের দরজা খুলে যেতে পারে বলে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন। মুর্শিদাবাদের ওই কেন্দ্রে সাংগঠনিক ভাবে বাম কর্মীরাও অনেক সক্রিয় হয়ে নেমেছেন বলে তাঁদের কাছে রিপোর্ট। জয়ের সম্ভাবনার নিরিখে সিপিএমের তালিকায় এর পরে আছে মালদহের ইংরেজবাজার এবং শেষে বীরভূমের নলহাটি। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বাম শরিক নেতৃত্বের সঙ্গে তিন কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে এই মর্মে আলোচনাও করেছেন।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “একটি আসনে অন্তত আমাদের জেতা উচিত। তবে তিনটিতেই আমরা ভাল রকম লড়াইয়ে আছি।” ফ্রন্টের এক বর্ষীয়ান নেতার অভিমত, “উপনির্বাচনের ফলাফলের উপরে পঞ্চায়েতের ছবিটা অনেকটাই নির্ভর করবে। বাম এবং কংগ্রেস একটি করেও আসন বার করতে পারলে শাসক দলকে বার্তা দেওয়া যাবে। বিরোধীরা অনেক বেশি মনোবল নিয়ে পঞ্চায়েতে লড়াই করতে পারবেন।”
ফ্রন্টের বৈঠকের পরে বিমানবাবু এ দিন বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা ত্বরান্বিত করতে বলেছি। সংগঠন মজবুত এবং শরিকদের মধ্যে বোঝাপড়া করে প্রার্থী মনোনয়ন করতে বলেছি। জেলায় জেলায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ৭ মার্চের মধ্যে করে ফেলতে হবে। কোনও ভাবেই জেলা স্তরের আলোচনা ১০ মার্চের পরে ফেলে রাখা যাবে না। সব রিপোর্ট রাজ্য বামফ্রন্টের কাছে জমা দিতে হবে ১৪ মার্চের মধ্যে। রাজ্য স্তরে কোথাও নিষ্পত্তি করার প্রয়োজন থাকলে তখন আমরা দেখব।” জেলা থেকে রিপোর্ট আসার পরে রাজ্য বামফ্রন্ট ১৭ মার্চ পরিস্থিতির খতিয়ান নিতে বসবে বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন।
নিজেদের দলীয় সূত্রের রিপোর্টের ভিত্তিতে সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি, নরেন চট্টোপাধ্যায়েরা ফ্রন্টের অন্দরে জানিয়েছেন, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার বেশ কিছু মহকুমায় সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত ভোটে অংশ নেওয়ার পরিস্থিতি এখনও নেই। ভোট এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে শাসক দলের তাণ্ডব আরও বাড়তে পারে ধরে নিয়েই ‘নির্ভীক’ প্রার্থী খুঁজতে চাইছেন বাম নেতারা। তবে নিজেদের প্রার্থী পাওয়া না-গেলে তৃণমূল এবং বিজেপি বাদ দিয়ে অন্য দলের প্রার্থীদের সমর্থনের ব্যাপারে ফ্রন্টে এখনও পর্যন্ত আলোচনা হয়নি। খাদ্য নিরাপত্তায় কার্যকরী বিলের দাবিতে রাজ্য জুড়ে এখনও পর্যন্ত সংগৃহীত প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ গণস্বাক্ষর দিল্লিতে পাঠাচ্ছে ফ্রন্ট। প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাক্ষর জমা দেওয়া হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। |
|
|
|
|
|