|
|
|
|
হুমকি-হামলা চলছেই |
বনধ নিয়ে কড়া মমতা, প্রশংসায় রাজ্যপাল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বনধ মোকাবিলা নিয়ে রাজ্যপালের প্রশংসা কুড়োলেও মুখ্যমন্ত্রীর অস্বস্তি বাড়াচ্ছে বনধ সমর্থকদের উপর তৃণমূল কর্মীদের একের পর এক আক্রমণের ঘটনা।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনই বনধের বিরুদ্ধে মুখ খোলা মমতা ক্ষমতায় এসেই বনধ বন্ধে উদ্যোগী হয়েছেন। এর আগে একাধিক বনধে বেতন কাটা ও চাকরিতে ছেদের হুমকিতে রাজ্য প্রশাসন অনেকটাই সচল রেখেছিলেন তিনি। এ বার শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দু’দিনের ধর্মঘটেও ব্যতিক্রম হয়নি। ধর্মঘটের প্রথম দিন, বুধবার জনজীবন ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিজেই তৎপর ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরের দিন সিটু রাজ্যে পরিবহণকে ধর্মঘটের আওতা থেকে বাদ দেওয়ায় আরও বেশি স্বাভাবিক ছিল জনজীবন। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকার প্রশংসা করে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন শুক্রবার বলেন, “বনধ রুখতে অসাধারণ পদক্ষেপ করেছিলেন উনি (মমতা)। বনধ ব্যর্থ করতে উনি অত্যন্ত দৃঢ়।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বনধ-পরবর্তী হিংসাত্মক ঘটনা নিয়ে। বুধবার কাজে গরহাজির শিক্ষক থেকে সরকারি কর্মীদের অনেকেই শাসক দলের রোষের মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। জলঙ্গির এক পঞ্চায়েত কর্মী হজরত ওমরের উপরে বৃহস্পতিবার ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় কান কেটে যায় হজরতের। ওই দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে বনধের সমর্থনে সিটুর মিছিলে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বাঁ চোখে মারাত্মক চোট পান এক সিটু সমর্থক। হালিশহর ও হরিহরপাড়ায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা মার খেয়েছেন বনধ-বিরোধীদের হাতে।
বনধ নিয়ে কড়া হলেও এই সব ঘটনা নিয়ে প্রশাসন কড়া নয় বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। জলঙ্গির ঘটনাকে ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’ আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহস্পতিবারই বলেছেন, “যাঁদের দু’কান কাটা, তাঁরা অন্যদের দু’টো কান স্বস্থানে থাকুক, তা সহ্য করতে পারছে না!” কিন্তু ওই ঘটনাকে তৃণমূল নেতৃত্ব যে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ, তা স্পষ্ট পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়। শুক্রবার মহাকরণে তিনি বলেন, “খবরের কাগজে লিখেছে কান কাটা গিয়েছে। কিন্তু কান তো কাটা যায়নি। কান আছে। মাঝখানে হয়তো কেটেছে। সেলাই করতে হয়েছে।”
কাজে এসে তাঁরই দফতরের কর্মী আক্রান্ত হলেন, ঘটনার রিপোর্ট চাইবেন না? সুব্রতবাবুর জবাব, “ফৌজদারি মামলা হয়েছে। আর পঞ্চায়েত দফতরের রিপোর্ট আসতে আসতে ওঁর কান সেরেও যাবে!”
কান কাটার ঘটনায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলিয়ে দু’জনকে ধরেছে পুলিশ। সিপিএমের দাবি, তারা
তৃণমূল কর্মী। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তা মানেননি।
কুলপির ঘটনায় পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। বনধের সমর্থনে বৃহস্পতিবার সকালে মশামারি গ্রামে মিছিল বের করেছিল সিটু। সেই সময়ে তৃণমূলের কিছু লোকজন লাঠি-রড নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। জখম হন তিন সিটু সমর্থক। গোপীনাথ মাঝি নামে বছর পঞ্চাশের এক ইটভাটা শ্রমিকের বাঁ চোখে আঘাত লাগে। তাঁকে আনা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চক্ষুবিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত জানান, ভোঁতা কিছুর ঘা লেগেছে চোখে। অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সিপিএমের কুলপি জোনাল কমিটির সম্পাদক শকুন্তলা পাইকের অভিযোগ, “আমাদের মিছিলে তৃণমূল হামলা চালায়। রড দিয়ে আঘাত করা হয় গোপীনাথবাবুর চোখে।” রাতেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী। অভিযোগ অস্বীকার করে কুলপির তৃণমূল বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদারের দাবি, দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছে। পড়ে চোট পেয়েছেন ওই সিটু সমর্থক।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বুধবার বালুরঘাটে বাস বার না-করায় ওই বাস মালিকদের তৃণমূলের হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবারও তৃণমূলের বাধায় বারাসতের ময়না স্ট্যান্ডে তিনটি রুটের (দক্ষিণেশ্বর, সল্টলেক ও সেক্টর ফাইভগামী) শ’খানেক বাস রাস্তায় নামেনি বলে অভিযোগ। সিটুর জেলা সম্পাদক সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অমানবিক ঘটনা। আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।” অভিযোগ অস্বীকার করে আইএনটিটিইউসি-র জেলা কার্যকরী সভাপতি তাপস দাশগুপ্তের দাবি, “আমাদের কেউ বাস বন্ধ করেনি।” |
|
|
|
|
|