|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
ভিন্ন আয়োজনে আমন্ত্রণ |
মুহিত হাসান |
সনত্কুমার সাহা ইহজাগতিক প্রায় সব বিষয়কেই প্রখর বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে অটুট থাকে মানুষ হিসেবে তাঁর নিজের অবস্থান ও মানুষের প্রতি অনুকম্পায়ী মনোযোগ। তাই তাঁর লেখালেখির জগতের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকেন রবীন্দ্রনাথ, সঙ্গে থাকে নিজের অ্যাকাডেমিক কাজের ক্ষেত্র, অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্ব। পাশাপাশি নজর এড়ায় না সাহিত্য, রাজনীতি বা ইতিহাসের কোনও জরুরি দিকও। এবং সব লেখার উদ্দেশ্য কেন্দ্রীভূত হয় শেষ অবধি সুস্থতামুখি সাহিত্য ও সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। বাঁধা-বুলির ফাঁপা চিন্তাকে তিনি প্রতিহত করেন বিনম্র এক ভঙ্গিতে, যা যুক্তিপূর্ণ, কিন্তু কোনও সময়ই উচ্চকণ্ঠ নয়। তাঁর চিন্তায় মরচে পড়ার লক্ষণমাত্র নেই, ইস্পাতের মতো এখনও তা খুবই ঝকঝকে।
সম্প্রতি ঢাকার বাংলা একাডেমী প্রবন্ধসাহিত্যে পুরস্কারের জন্য তাঁকে মনোনীত করেছে। একুশে বইমেলায় একসঙ্গে সনত্কুমার সাহার দু’টি বই প্রকাশিত হল। প্রথম বইটি তাঁর লেখালেখির প্রিয় প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে: ফিরে দেখা: রবীন্দ্রনাথ (বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ৩৭৫.০০)। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এর আগেও তিনি পৃথক দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, যেগুলির মধ্যে তর্কবিতর্কের ঝাঁঝটা ছিল জোরালো ভাবে, ছিল নতুন চিন্তা দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে বিশ্লেষণ করার প্রবণতা। এই বইটির মধ্যেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এখানে গ্রন্থিত প্রবন্ধগুলির বিষয় বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়ন থেকে আরম্ভ করে তাঁর চিত্রকলা বা কাব্যে পুরাণপ্রতিমা অবধি বিস্তৃত হলেও, প্রত্যেকটি লেখাতেই একটি মূল সুর স্পষ্ট। তা হল, রবীন্দ্রনাথকে আর একটু নিবিড় ভাবে দেখার— কিংবা কী ভাবে তিনি ও তাঁর চিন্তা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় বা সমাজের ভেতর এখনও জায়মান, তা বোঝার আন্তরিক চেষ্টা করা। এখানেই এই বইটির বিশেষত্ব।
অন্য দিকে এলোমেলো হাওয়া (শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ৪৫০.০০) বইটির ভাবনা গড়ে উঠেছে সাহিত্যের নানা দিক ঘিরে, তার শিকড়-ডালপালা, তার জায়গা-জমি আর যাঁরা তাতে রূপ দেন, প্রাণ দেন তাঁদেরকে নিয়ে। এ বইতে যেমন আছে জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে’র কবিতাকে ঘিরে ভিন্ন রকম ব্যাখ্যা, একই সঙ্গে এসেছে হাসান আজিজুল হক বা মাহমুদুল হকের কথাসাহিত্যের সৃষ্টিশীলতার বাতিঘরের কথা। হালের কমনওয়েলথ সাহিত্যের ধারা নিয়ে অন্য রকম আশাবাদের কথাও বাদ পড়ে না। ভাষা-সাহিত্যের রাজপাটে ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগও লিপিবদ্ধ হয় অপর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে। সব মিলিয়ে বৈচিত্র থাকলেও এ বইয়ের ভাবনা-কাঠামো কিন্তু নিরুদ্দেশে যায় না, বরং বাংলা সাহিত্যের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত্ মিলিয়ে এক ভিন্ন রকম ব্যাখ্যার আয়োজন নিয়ে তা আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। |
|
|
|
|
|