মুখোমুখি...
ভাল পরিচালকদের ফোন নম্বর আমায় রাখতেই হবে

পত্রিকা: আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আজও বন্ধুরা আপনাকে কেবল সুন্দরী-সুন্দরী বলে যান... নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগে...
রচনা: ধুস, ওসব একদম স্তাবকতা। শুনে শুনে ক্লান্ত। অন্য কথা শুনতে ইচ্ছে করে।

পত্রিকা: অন্য কথা বলতে?
রচনা: আমি কী কাজ করতে চাই, ভবিষ্যতের প্ল্যান কী, জীবন নিয়ে কী ভাবছি এ সব নিয়েও তো কথা হতে পারে।

পত্রিকা: জীবন নিয়ে কী ভাবছেন এখন?
রচনা: এটাই ভাবছি যে এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাই নিয়েই আমি খুশি। ইচ্ছে শুধু কয়েকটা ভাল ছবি করে যাওয়ার।

পত্রিকা: ভাল ছবি মানে?
রচনা: তেমন ছবি যেখানে আমার অভিনয় দেখানোর সুযোগ থাকবে। এত দিন কমার্শিয়াল ছবিতে নায়কের পাশে থেকে নাচ-গানের চরিত্র করেছি। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে অন্য রকম কিছু করতে চাই।

পত্রিকা: আগের ছবিগুলো তবে কি খারাপ ছিল?
রচনা: খারাপ না। তবে বড্ড বেশি নায়ক-প্রধান। এখন নানা ধরনের ছবি হচ্ছে যেখানে মেয়েদেরও অভিনয় দেখানোর সুযোগ থাকছে।

পত্রিকা: কিন্তু এই ধরনের ছবিতে অনেক সময়ই নায়িকা বলে আলাদা কোনও চরিত্র থাকে না। অনেক স্টার একসঙ্গে কাজ করেন। থাকেন নবাগতরাও। আপনাকে যদি চরিত্রাভিনয় করতে বলা হয় করবেন?
রচনা: আমি তেমন ছবিতেই অভিনয় করব যেখানে আর পাঁচটা চরিত্রের মধ্যে আমার চরিত্রেরও একটা প্রাধান্য আছে। তা ছাড়া আজকালকার সিনেমায় নায়ক-নায়িকা বলে কিছু হয় না। এখন গল্প বা চিত্রনাট্যই নায়ক। আর সেই গল্পকে টেনে নিয়ে যান পরিচালক। বরং বলা যায় এখনকার ছবি পরিচালক-প্রধান।
পত্রিকা: তার জন্য তো একটা প্রস্তুতি নিতে হয়। পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
রচনা: আমি দু’এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি।

পত্রিকা: কারও সঙ্গে কিছু কথা এগিয়েছে?
রচনা: না সেরকম ভাবে কোনও কথা এগোয়নি।

পত্রিকা: কথা না এগোলে নতুন ধরনের কাজ হবে কী করে?
রচনা: যাঁদের ছবি দেখতে ভাল লাগে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব বইকী।

পত্রিকা: ইন্ডাস্ট্রির নতুন পরিচালকদের মধ্যে কার কার ফোন নম্বর আছে আপনার কাছে?
রচনা: দু’ তিন জনের আছে। সকলের নম্বর নেই। কিন্তু ডেফিনিটলি যদি নিয়মিত ভাল ছবিতে কাজ করতে হয় তাঁদের ফোন নম্বর আমাকে রাখতেই হবে। প্রয়োজন হলে ফোন নম্বর জোগাড় করতে আর কতক্ষণ?

পত্রিকা: কাদের ছবি আপনার ভাল লাগে?
রচনা: অনীক দত্ত, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী, সন্দীপ রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আরও অনেকেই আছেন ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁদের কাজ আমার ভাল লাগে। এঁদের ছবিতে কাজ করতে পারলে খুশি হব। চিত্রনাট্য যদি টানটান হয় একেবারে নবাগত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করতে আমি রাজি।

পত্রিকা: বাংলার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আর টেলিভিশনের ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ আপনি। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত আছে?
রচনা: দ্বিমত তো হয়ই। আমাকে যখন সবাই বলে ‘দিদি, আপনি হলেন দিদি নম্বর ওয়ান’, আমি তখন বলি, না ভাই, দিদি নম্বর ওয়ান একজনই। তিনি আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী। কাকতালীয় ভাবে আমি যে নন ফিকশন অনুষ্ঠানটা করি তার নাম ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। ব্যস ওইটুকুই। তবে হ্যাঁ, আমি ভাবতে পারিনি ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের মতো একটা ননফিকশন অনুষ্ঠান এত জনপ্রিয়তা পাবে।

পত্রিকা: শোনা যায় মাঝখানে আপনি যখন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ করছিলেন না, তখন টিআরপি পড়ে গিয়েছিল। সেই পড়ে যাওয়া টিআরপিটাকে চড়ালেন কী করে?
রচনা: টিআরপিটা উঁচু না নিচু, তার পুরো দায় বা কৃতিত্ব আমার একার নয়। সাফল্যের ক্রেডিট আমার যদি পঞ্চাশ ভাগ হয়, বাকি পঞ্চাশ ভাগ আমার পরিচালক অভিজিৎ আর টিমের। তা ছাড়া আরও ব্যাপার আছে। আমি যখন ফিরে এলাম নতুন করে জাঁকজমকের সেট তৈরি হল। নতুন খেলা শুরু হল। সেকেন্ড রাউন্ডটা খুব জনপ্রিয় হয়েছে।

পত্রিকা: কেন?
রচনা: তার কারণটা হল, এই রাউন্ডে সাধারণ অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের একান্ত ভালবাসার গল্প খোলামেলা ভাবে বলতে পারেন। আগের চেয়ে উপহার অনেক বেড়ে গিয়েছে। মার্চ মাস থেকে তো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ রোববারও হবে। এর পর যাঁরা পুরস্কার পাবেন তাঁদের বিদেশে যাওয়ার প্যাকেজ দেওয়া হবে। একটা প্রোগ্রাম কত ভাল হলে এই ধরনের গিফ্ট দেওয়া সম্ভব বুঝতেই পারছেন।

পত্রিকা: এখনকার মূল ধারার ছবি দেখেন?
রচনা: দেখি। আজকালকার ছবি অনেক বেশি ঝকঝকে, টেকনিক্যালি সাউন্ড। কথায় কথায় সুইৎজারল্যান্ডে শু্যটিং হচ্ছে। শুধু দুঃখ হয় একটা কথা ভেবে, আমরাও তো হিট ছবি কম করিনি, সেগুলো নিয়ে কোনও প্রচার হল না। এখনকার ছবি যত না হিট তার চেয়ে বেশি প্রচার পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলে আর পত্রিকায়। স্বপন সাহা, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় আর প্রসেনজিতের জুটি যে পরিমাণ হিট দিয়েছে, তার ক’টা ছবির কথা ক’টা প্রচারমাধ্যমে বেরিয়েছে? আমরা তো কিছুই পাইনি। আমাদের ছবি পরের পর একশো দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আজ যখন ‘অটোগ্রাফ’ বা ‘বাইশে শ্রাবণ’ হিট করে প্রসেনজিৎকে নিয়ে মাতামাতি হয়। তার আগে অজস্র ছবি সুপারহিট ছিল, কই তা নিয়ে তো কোনও কথা হয়নি।

পত্রিকা: যদি বলি, সেসব ছবি পরিশীলিত শহুরে দর্শক মহলে গ্রহণযোগ্য ছিল না ...
রচনা: ভুল কথা। আমাদের আমলেও ভাল ছবি হয়েছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে মেদিনীপুর-হাওড়াতেই আটকে রইল। কলকাতায় বড়জোর বিজলিতে হল। মেনকা বা প্রিয়াতে রিলিজই পেত না। তা হলে আর শহুরে রুচির দর্শক ছবি দেখবেন কী করে? আমরা যে কষ্ট করে এসেছি, আজকের জমানার শিল্পীরা সেটা অনুভব করতে পারবেন না। তাঁরা প্রথম থেকেই প্রচারের আলোয়। সেই পপুলারিটি পেতে আমাদের কুড়ি বছর কেটে গিয়েছে।

পত্রিকা: তাহলে কি বলবেন, ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আজকাল যেসব ভাল ভাল কথা বলা হয়, সেগুলো পুরোটাই প্রচারসর্বস্ব?
রচনা: হ্যাঁ, অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় প্রচার। মানুষ হ্যাঁচ্চো দেওয়ার আগেই প্রচার হয়ে যাচ্ছে। কী আর করা যাবে! এটাই এখন চলছে।

পত্রিকা: প্রসেনজিতের সঙ্গে এত ছবিতে কাজ করেছেন। উনি এখন নিজেকে ভেঙে গড়ে একেবারে ভিন্ন ধরনের ছবিতে কাজ করে নতুন ইমেজ তৈরি করেছেন। আপনিও তো সেটাই চাইছেন। ওঁর কাছে নিজের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ চেয়েছেন কখনও?
রচনা: সত্যি কথা বলতে কী, কথা হয়নি। কারণ আমি এত দিন ভেবে উঠতে পারিনি আমি ওই ধরনের ছবিতে যাব কি না। এখন যখন ভাবছি অন্য ধরনের ছবিতে অভিনয় করব তখন বুম্বাদার সঙ্গে কথা বলা যেতেই পারে।

পত্রিকা: এত কিছুর পরে ‘বলা যেতেই পারে’ ...! কোনও দ্বিধা আছে নাকি?
রচনা: না, দ্বিধা থাকবে কেন! যেতেই পারে বললাম এই কারণে যেহেতু বুম্বাদা এখন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ওরফে ‘পিসি’ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ সময় হয় বিদেশে, নয়তো বা মুম্বইতে। তাই ওকে পাওয়া তো সহজ কথা নয়।

পত্রিকা: আপনিও তো আজকাল মাঝে মাঝে মুম্বই যান শুনেছি...
রচনা: সহারা ইন্ডিয়ার সুব্রত রায়ের সঙ্গে আমার খুবই ভাল পরিচয়। ওঁদের সঙ্গে একটা কাজের কথা হচ্ছে। সেই জন্যই মাঝে মাঝে যেতে হচ্ছে।

পত্রিকা: এত যে বাইরে বাইরে ঘুরে কাজ করেন। কেউ ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের প্রেমে পড়ে না? নাকি সকলের কাছেই দিদিরূপেণ...
রচনা: অগুনতি প্রেমের প্রস্তাব আসে। আমাদের শিল্পীদের জীবনে একটু প্রেম -প্রেম ভাব না থাকলে মনে হয় তা হলে জীবনে কী করলাম? অগুনতি প্রেম আছে বলেই তো এখনও নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

পত্রিকা: কী বলেন আপনার ওই সব প্রেমিক?
রচনা: তাঁরা বলেন, ‘তোমাকে যদি পেতাম রচনা’। কেউ কেউ বলেন ‘তোমার পছন্দের কত নম্বরে আছি? একান্ন নম্বরে আছি তো? নাকি আরও পরে? না বাহান্ন নম্বরে আছি?’

পত্রিকা: তাতে আপনি কী বলেন?
রচনা: কী আবার! আমি বলি তোমরা আমার স্বামী প্রবাল বসুকে ফোন লাগিয়ে নাও। ও আমার জীবনে এসে গিয়েছে। সব লাইন ওর পর থেকে।

পত্রিকা: এতটাই স্বামী-অন্ত প্রাণ?
রচনা: না, না। এটা স্বামী-অন্ত প্রাণের ব্যাপার নয়। এক বার যখন ছাঁদনাতলায় গেছি, সাত পাক ঘুরেছি, প্রবালের তো একটা গুরুত্ব অবশ্যই থাকে। না কি?

পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন, কিছু দিন আগে নিউ ইয়ার্স পার্টিতে এক নায়িকাকে দেখা গেল এক পরিচালকের পায়ের ওপর উঠে নাচছেন। এমন দৃশ্য কল্পনা করতে পারতেন আপনাদের সময়ে?
রচনা: এই রে, এই প্রশ্নটা বেছে বেছে আমাকেই করতে হল? (হেসে একটু ভেবে) এখন সময় পাল্টেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে সম্পর্কগুলো খুব খোলামেলা বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তাই কোনওটাকেই আমরা আর খারাপ ভাবি না। আগে আমরা পরিচালককে প্রণাম করে সেটে পা দিতাম। পরিচালকেরাও এখন তো নায়িকাদের কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলছেন। তবে একটা কথা বলব, আমি আজকালকার বন্ধুত্বকে কখনই খারাপ বলে মনে করছি না। সময়টা অনেক বদলে গিয়েছে। তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তো হবেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.