|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
প্রেম করুন, রূপচর্চা লাগবে না |
ত্বক উজ্জ্বল রাখার ককটেল মন্ত্র দিলেন বিশেষজ্ঞরা। শুনলেন পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় |
হাজার ওয়াটের বাল্বের মতো চকচক করছ! কোনও সুখবর?
মনের সঙ্গে ত্বকের ঝলমলানির আত্মীয়তায় সিলমোহর চিরকালীন। আলাপচারিতা, কুশল দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেও প্রচলিত সেই মন-ত্বক ফর্মুলা “ইউ আর গ্লোয়িং। এনি গুড নিউজ?” মনের ভাল থাকাতেই লুকিয়ে চকচকে ত্বকের জিয়নকাঠি। সেলিব্রিটি ত্বক বিশেষজ্ঞ শাহনাজ হুসেন একবার ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন, “আমার কাছে যাঁরাই ত্বক ভাল করতে আসেন আমি তাঁদের বলি, জবরদস্ত একটা প্রেম করুন। কোনও রূপচর্চা লাগবে না। এমনিতেই চামড়ায় জেল্লা চলকে পড়বে।”
বোঝো কাণ্ড!
প্রখ্যাত রূপচর্চাবিদ যদি বলেন, মনটাই আসল ট্রাম্পকার্ড, তা হলে এত প্রসাধনী, রূপটান, টেলিভিশনের পর্দায় রূপ-বিশেষজ্ঞদের বড় বড় আলোচনা, এত পরামর্শ, গুচ্ছ গুচ্ছ প্রসাধনীতে সাজানো শোরুম, অলিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠা বিউটি পার্লারের কী হবে? মনটাকে একটু গুছিয়ে রাখলেই হরমোন-টরমোন ঠিকঠাক হয়ে ক্যাটরিনা কইফ-সুলভ চমকানো ত্বক বাঁধা। এই সে দিন ক্যাটরিনাও ফিল্মি ম্যাগাজিনে বললেন, “আমার উজ্জ্বল ত্বক জিনগত। একে ঠিক রাখতে বেশি খাটতে হয় না।”
তাই বলে কি জিনের উপর সব ছেড়েছুড়ে ক্যাটরিনা কোনও দিন ত্বকচর্চা করেন না? চামড়ার যত্ন নেন না? রূপচর্চাবিদ শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা হা হা করে একটা প্রাণখোলা হাসি হাসেন “বাজি রাখুন। ক্যাটরিনা রূপচর্চা করেন। আসলে গোটা ব্যাপারটা একটা প্যাকেজের মতো। শুধু মন ভাল রাখা বা শুধু রূপচর্চার আধাখ্যাঁচড়া বিনিয়োগে ত্বকের জেল্লার ফসল উঠবে না।” |
|
প্যাকেজটা কী? “আনন্দে থাকার পাশাপাশি নিয়মিত ত্বকের যত্ন, খাবার, জল, ঘুম, ব্যায়াম দিয়ে শরীরের যাবতীয় ক্ষতিকর অক্সিডেন্টকে বাগে এনে ফেলা। এতে খারাপ ত্বক ভাল হবে আর ভাল ত্বক দুর্ধর্ষ হয়ে উঠবে। খারাপ ছাত্রীর পড়াশোনায় মন দিয়ে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া আর ভাল ছাত্রীর আরও ভাল করে পড়ে স্টার পাওয়ার মতো ব্যাপার আর কী।”
প্রাণায়াম-ধ্যান-এর কট্টর গুণমুগ্ধেরা হালকা আপত্তি তুলছেন। একটু ক্ষুণ্ণ ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, নিখুঁত ত্বকের উপর নিজেদের মনোপলি নিয়ে একটা চাপা লড়াই রয়েছে এঁদের মধ্যে। চিনার পার্কের স্বপন চক্রবর্তী প্রাণায়াম-ধ্যান শেখান। কিছুতেই মানতে চান না, মন নিয়ন্ত্রণ না-করে শুধু বাইরে থেকে ঘষে-মেজে ত্বকের আদৌ কোনও উন্নতি হয়। “ধরুন আপনি চূড়ান্ত স্ট্রেসে আছেন। যতই পাকা পেঁপে মুখে ঘষুন মুখের ক্লান্তি, কালি যাবে না। মন ভাল থাকলে শরীরের ভিতর থেকে যে দীপ্তি বেরিয়ে আসবে সেটা অমলিন, দীর্ঘকালীন।” প্রাণায়ামকারীদের দাবি, “ভাল ত্বকের চাবি হল কপালভাতি আর কিছু আয়ুর্বেদিক জড়িবুটি। বাকি সব বেকার।”
যা পুরোপুরি মানতে পারেন না ত্বক বিশেষজ্ঞ সুব্রত মালাকার। আরে বাবা, আজকের এত ব্যস্ত সময় ক’টা লোক রোজ নিয়ম করে প্রাণায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন? যদি শুরুও করেন তা হলে টানতে পারেন ক’জন? তার থেকে ত্বক বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়া ভাল।
সুব্রতবাবুর কথায়, “অনেকে যোগব্যায়ামের পুরোটা না জেনে পরামর্শ দেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। বিউটি পার্লারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর ট্রিটমেন্ট নিতে গিয়ে সমস্যা জটিল হয়েছে, এমন কেস তো প্রতি
সপ্তাহে পাই।”
ত্বক বিশেষজ্ঞ সুদীপ দাসও শোনাচ্ছিলেন বিউটি পার্লারে কেমিক্যাল পিলিং বা ওজন থেরাপি বা ব্রণ-জ্বরঠোসা-র চিকিৎসা করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের কথা। জ্বরঠোসা যে এক ধরনের হারপিস, এই ধারণাই অধিকাংশ বিউটিশিয়ানের নেই বলে অভিযোগ চিকিৎসকেদের।
রূপ বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ অবশ্য এগুলোকে নেহাত বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা অতিরঞ্জিত তথ্য বলেছেন। অ্যালোপ্যাথ ত্বক চিকিৎসকদের চিকিৎসা বিভ্রাটেও মানুষ বিপদে পড়েন বলে তাঁর দাবি। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “প্রতিদিন কী ভাবে ক্নিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং-এ উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া যাবে তাঁর দিশা একজন ভাল বিউটিশিয়ানই দিতে পারেন। ত্বকের অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যাব, খামোখা ত্বকের নিয়মিত দেখভালের জন্য ডাক্তার লাগবে কেন?
ত্বক চিকিৎসক সুব্রত মালাকারের পাল্টা দাবি, “ডাক্তার তো লাগবেই।” এক জনের ত্বক কেন রুক্ষ বা ত্বকে কেন ব্রণ হচ্ছে বা কেন ছোপ পড়ছে সেটা তো একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন। কিন্তু প্রাণায়াম শিক্ষিকা কুসুম ভট্টাচার্যের মতে, প্রথম থেকে ধ্যান, প্রাণায়ামের অভ্যাস থাকলে ত্বক খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই থাকে না। সকালে বা বিকেলে শুধু আধঘণ্টা সময় ব্যয় করলেই হল।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসক অবিচল চট্টোপাধ্যায় প্রাণায়ামের গুরুত্ব স্বীকার করেন। সঠিক ভাবে করতে পারলে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর তার সুপ্রভাবও মানেন। জানান, স্ট্রেস কমার ফলে সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে সেটাই সব নয়। ত্বক ভাল রাখতে আয়ুর্বেদিক বর্ণকারক (চন্দন, মঞ্জিষ্ঠা, হরিদ্রা, যষ্টিমধু প্রভৃতির) প্রলেপ এবং ওষুধও দরকার। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কিন্তু আবার ত্বকের জন্য অ্যালোপ্যাথদের ভরসা করার বিপক্ষে। তাঁদের দাবিতে, অ্যালোপ্যাথি ওষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। হয়তো তাতে ত্বক ভাল হল, অন্য কোনও সমস্যা দেখা দেয়। অ্যালোপ্যাথরা তা শুনে বলেন, “কার এত সময় আছে যে বসে বসে বাদাম বাটা, অ্যালোভেরা-রস বার করে মাখামাখি করবে? আর কী গ্যারান্টি আছে আজকালকার দিনে দোকানে বিক্রি হওয়া ভেষজ ওষুধে কোনও ভেজাল নেই?”
তা হলে কীসে বিশ্বাস করবে মানুষ? রামদেবীয় যোগ-ধ্যান, নাকি নামী ত্বক বিশেষজ্ঞের, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সেলিব্রিটি বিউটিশিয়ানের পার্লারে যাওয়াতে, নাকি ঠাকুরবাড়ির টোটকা ব্র্যান্ডিতে স্নান আর কমলালেবুর খোসাবাটায়?
আসলে ককটেলটাই মন্ত্র। একটু মন ভাল রাখা, একটু খাবারে যত্ন, একটু রূপচর্চা, প্রয়োজন পড়লে একটু ডাক্তারের পরামর্শ। পরিস্থিতি, শরীর, প্রয়োজনমতো বুদ্ধি খাটিয়ে পদক্ষেপ করা। তাতেই আশপাশে চমকে যাওয়া, মুগ্ধ হওয়া বা ঈর্ষান্বিত গলাগুলো প্রশ্ন করতে বাধ্য হবে “কোনও সুখবর আছে নাকি?”
|
ত্বক রহস্য |
• দিনে ১৫-৩০ মিনিট ব্যয় করে প্রাণায়াম, ধ্যান, যোগব্যায়াম
• জীবনের ওঠাপড়া গায়ে না-লাগিয়ে পজিটিভ থাকা। জানবেন, হাসির বিকল্প নেই
• নিজের যত্ন নেওয়া। নিজেকে স্পেশ্যাল ভাবা। দৈনিক ডায়েটে সব্জি, ফল, ড্রাই ফ্রুটস মাস্ট
• নিয়মিত স্নান, প্রচুর জল খাওয়া, সময়ে খাওয়া, খালিপেটে না-থাকা, নির্ভেজাল ঘুম
• যা খুশি কেমিক্যাল মেশানো কসমেটিক্স বাজার থেকে কিনে না লাগানো
• ত্বকের সমস্যায় দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
• নিয়ম করে ত্বকের ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং |
|
|
|
|
|
|