|
|
|
|
জ্ঞানেশ্বরী শুনানি |
 |
পা আটকেছিল ইঞ্জিনে
বললেন মালগাড়ি চালক
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
জ্ঞানেশ্বরী মামলায় প্রথম পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ আপাতত শেষ হল। শুক্রবার সাক্ষ্য দিলেন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অপূর্বকুমার ঘোষ। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির চালক নির্ভয় কুমারেরও সাক্ষ্য নেওয়া হয় এদিন। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৮ এপ্রিল। ওই দিন থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ। চলবে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত।
মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মনোজ মাহাতো ওরফে বাপি’র গোপন জবানবন্দি নিয়েছিলেন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অপূর্ববাবু। তাই তাঁকে এই মামলায় সাক্ষী করেছে সিবিআই। গত বুধবার তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা না-আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। একই ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ই মামলার কাজ শুরু হয়। এ দিন জেলবন্দি ১৯ জনকে মেদিনীপুরের বিশেষ জেলা ও দায়রা আদালতে হাজির করা হয়। ছিলেন জামিনে মুক্ত বিমল মাহাতোও।
শুরুতে মুখবন্ধ করা একটি খাম অপূর্ববাবুর হাতে তুলে দেন সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী। জানতে চান, “খামটি চিনতে পারছেন?” উত্তরে অপূর্ববাবু বলেন, “হ্যাঁ, পারছি। এই খামের মধ্যেই মনোজ মাহাতো ওরফে বাপি’র গোপন জবাববন্দি রয়েছে।” দু’পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে মুখবন্ধ করা খামটি খোলা হয়। সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট জানান, “চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনোজকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২৮ জুন আমার কাছে পাঠানো হয়। আমি ওকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দিই। ২৯ জুন জবানবন্দি নেওয়া হয়। অপূর্ববাবু ওই সময় ১২ নম্বর কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।” পরে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অজয় ঘোষ জানতে চান, “চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটই যে মনোজকে আপনার কাছে পাঠিয়েছিলেন, জবানবন্দির কাগজে কোথাও কী তা লেখা রয়েছে?” অপূর্ববাবু উত্তর দেন, “না, এমন কোনও লেখা নেই।” অজয়বাবু প্রশ্ন করেন, “জবানবন্দি নেওয়ার সময় আপনি বলেছিলেন, জেল-জরিমানা হতে পারে। কিন্তু, সর্বোচ্চ সাজা (ফাঁসি) হতে পারে, এমনটা বলেছিলেন?” বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট উত্তর দেন, “না, এমনটা বলিনি।”
অপূর্ববাবু সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাক্ষ্য দেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির চালক নির্ভয় কুমার। সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ২৭ মে রাত ১০টা নাগাদ টাটানগর থেকে মালগাড়িটি ছাড়ে। সব মিলিয়ে ৫৯টি ওয়াগন ছিল। সিগন্যাল লাল থাকায় সর্ডিহায় গাড়ি দাঁড় করাই। ১টার কিছু পরে ফের গাড়িটি ছাড়ে। দুর্ঘটনার পর গাড়িটি নড়ে ওঠে। তিনি কেবিনের মধ্যে পড়ে কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফেরার পর দেখেন, ইঞ্জিনের মধ্যে একটি পা আটকে গিয়েছে। টানাটানি করায় জুতো আটকে রয়ে যায়। তবে পা বেরিয়ে যায়। দরজা বন্ধ ছিল। তাই জানলা দিয়ে নেমে পড়েন। মালগাড়ির চালকের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীও। চালক সাক্ষ্য দেওয়ার পর বিচারক পার্থপ্রতিম দাস জানান, ৮ এপ্রিল থেকে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। ২০১০ সালের ২৭ মে রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা এবং খেমাশুলি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রেনটি হাওড়া থেকে মুম্বই যাচ্ছিল। ট্রেনটি আসার আগেই রেল লাইনের একাংশ কেটে ফেলা হয় এবং লাইনের প্যানড্রোল ক্লিপ খুলে ফেলা হয়। ফলে লাইনচ্যুত হয়ে যায় জ্ঞানেশ্বরী। উল্টোদিক থেকে আসা একটি মালগাড়ি আবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির কয়েকটি বগিকে ধাক্কা মারে। মৃত্যু হয় অন্তত ১৫০ জনের। কমবেশি আহত হন প্রায় ২০০ জন। ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সোমবার থেকে শুরু হয়েছিল প্রথম পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রথম দিন সাক্ষ্য দেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত জ্ঞানেশ্বরীর চালক বিভয়কুমার দাস এবং গার্ড শ্রীবাসচন্দ্র ঘোষ। মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন সহ-চালক ত্রিলোচন দেবাঙ্গন। |
|
|
 |
|
|