উত্তর কলকাতা
অবাধ পার্কিং
ডালে চলাই দায়
ক দিকে সার দিয়ে গড়ে উঠেছে ডালের মিল। কোথাও কোথাও রয়েছে ছোটখাটো কাঠ চেরাইয়ের কারখানা আর ময়দার মিল। তার পাশেই বড় লরি বা ম্যাটাডর থেকে মালপত্র ওঠানো-নামানো চলে। এমনকী, এই কারখানাগুলির লাগোয়া জমিতেই চলে অবাধ পার্কিং। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই রাস্তা হয়ে যায় অপরিসর। উত্তর কলকাতার আর জি কর রোডের কাছে খালধার বরাবর সার্কুলার ক্যানাল রোড এবং ক্যানাল ইস্ট রোডের অবস্থা এই রকমই।
শহরের উত্তর দিক থেকে পূর্ব এবং দক্ষিণে যাতায়াত করা ছাড়াও আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা স্টেশন থাকায় এই রাস্তা দু’টির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলটি দাসপাড়া ডালপট্টি নামেই বিখ্যাত। সব মিলিয়ে এখানে ৩০০টিরও বেশি ডালের মিল রয়েছে। অথচ, এই রাস্তার গুরুত্ব বাড়লেও ইতস্তত পার্কিংয়ের ফলে অসুবিধায় পড়ছেন পথচারীরা।
সম্প্রতি কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এই দুই রাস্তার কোথাও কারখানা বা মিলের পাশে কোনও লরি, ম্যাটাডর বা গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ট্রাফিক পুলিশের এই নতুন নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই সোচ্চার হয়েছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। পুলিশের অভিযোগ, ক্যানাল ইস্ট রোডে খালধার বরাবর এক দিকে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম ভেঙে দু’দিকেই পার্কিং হচ্ছে। সার্কুলার ক্যানাল রোডে সকাল ৮টার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কোনও বড় গাড়ি প্রবেশের নির্দেশ নেই। অথচ, এই নিয়ম না মেনেই গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এখানে যে সমস্ত মালপত্র আসে তা মিলের ভিতরে নিয়ে যাওয়া বা মিল থেকে গাড়িতে তুলতে গেলে কারখানার সামনেই লরি বা ম্যাটাডর রাখার প্রয়োজন হয়। রাস্তার অন্যত্র পার্কিং করলে তাঁদের অসুবিধা হবে। এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাল এনে তা মিলের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এর পরে, বস্তাবন্দি ডাল শহরের বা শহরের বাইরে ভিন রাজ্যে রফতানি করা হয়।
ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সার্কুলার ক্যানাল রোডে রাস্তার ওপরেই তৈরি হচ্ছে পুরসভার ‘আন্ডারপাস’। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে এই রাস্তার গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। ফলে, খালধারে গাড়ি পার্কিং না করলে অথবা যানবাহন নিয়ন্ত্রিত না হলে পথচারী এবং গাড়িচালকদের অসুবিধায় পড়তে হবে। সেই কারণেই এই রাস্তায় খালধারে গাড়ি পার্কিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ক্যানাল ইস্ট রোডে খালধারে পার্কিং করার নির্দেশ অনেক দিনই আছে। আমি স্থানীয় থানার ওসিকে সার্কুলার ক্যানাল রোড ও ক্যানাল ইস্ট রোডে পার্কিংয়ের ব্যাপারে সমস্ত বিষয়টি পর্যালোচনা করে আমাকে জানাতে বলেছি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রয়োজনে আলোচনাও করতে রাজি আছি।”
ডালমিল-সহ এখানকার অন্যান্য মিল এবং কারখানার মালিকদের সংগঠন মিতালি ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সত্যনারায়ণ অগ্রবাল বলেন, “এই রাস্তার ওপরে অনেক ডালমিল, কাঠ চেরাই কারখানা ও তেলকল রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের এই নিয়ম থাকায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। খালধারে গাড়ি পার্কিং হলে গাড়ি থেকে মালপত্র নিয়ে উল্টো দিকে কারখানায় বা মিলে আসতে হলে রাস্তা পেরোতে হবে। এতে যানজট হবে। খরচও বাড়বে। খালধার পরিষ্কার রাখা তখন সম্ভব হবে না। এখন বাধ্য হয়েই কারখানা বা মিলের সামনে গাড়ি এনে মালপত্র ওঠানো-নামানো চলছে। তবে, গাড়ি বেশি ক্ষণ পার্কিং করা যাচ্ছে না।”
ক্যানাল সার্কুলার রোডের ওপরেই অনেক সময়ে গাড়ি পার্ক করা থাকছে। সেগুলির ক্ষেত্রে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
পুলিশের দাবি, এই রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে নজরদারি চলে। দেখতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আগের চেয়ে এই রাস্তায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
শ্রীবিষ্ণু ডাল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সত্যনারায়ণ গুপ্ত বলেন, “ক্যানাল সার্কুলার রোডে গাড়ি পার্কিং এবং দিনের বেলা কাজের সময়ে গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে। ক্যানাল ইস্ট রোডে খালধারে পার্কিংয়ের অনুমতি থাকলেও সেগুলিকে রাস্তার উল্টো দিকে কারখানার সামনে এনে দাঁড় করানোর কোনও অনুমতি একেবারেই নেই। ফলে, আমরা চূড়ান্ত অসুবিধায় পড়েছি। পুলিশ এবং পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করব। সমস্যা না মিটলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”
স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর বিরতি দত্ত বলেন, “আমাকে এলাকার ব্যবসায়ীরা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশকে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করেছি।”
পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব বলেন, “পুলিশের সহযোগিতা নিয়েই পার্কিংয়ের জায়গা ধার্য করা হয়। ক্যানাল ইস্ট রোডে পুলিশ যেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের অনুমতি দিয়েছে পুরসভা সেখানেই পার্কিংয়ের জায়গা করেছে। ক্যানাল সার্কুলার রোডে খালধারে পার্কিং দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তা না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই রাস্তায় আপাতত মালপত্র ওঠানো-নামানোর জন্য কিছু ক্ষণ পার্কিংয়ের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছি।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.